শিরোনাম
◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ইউনেস্কোর ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাননি ড. ইউনূস: শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২০, ০৪:৩৬ সকাল
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২০, ০৪:৩৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: ৭ নভেম্বর, প্রতিবিপ্লব এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দিবস

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : ১৯৭৫ সালে এই দিনে সেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেন। তাকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে জাসদ এবং সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের সেনা কর্মকর্তা এবং জাসদের অনুসারী সামরিক গণবাহিনীর সংস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলো। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে জাসদ বেশ আগে থেকেই সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে গণবাহিনী তৈরি করে। এরা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের তথাকথিত ‘বিপ্লবী’ চিন্তা নিয়ে বেশ আগে থেকেই তৈরি হচ্ছিলো। ৬ নভেম্বর এরা বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঢাকা অভিমুখে ট্যাংকসহ রওয়ানা হয়। এরা খালেদ মোশারফের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। ৬ তারিখ দিবাগত রাতে ঢাকা সেনানিবাসে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হত্যাসহ নানা ধরনের উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে এরা জড়িয়ে পড়ে। রাতেই তারা জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধানের পদে আসিন করে ঢাকা বেতারসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন দখলে নেয়। এদের পেছনে জাসদ নেতা কর্ণেল তাহেরের আর্শীবাদ ছিলো বলে বিভিন্ন মহল দাবি করে থাকে। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কর্নেল (অব.) তাহেরের একটি মৌখিক সমজোতা হলেও ৭ নভেম্বরের পর জিয়াউর রহমান সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন। বস্তুত ২ তারিখে খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সংগঠিত সামরিক অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার জন্য সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরের একটি শক্তি এবং ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী জাসদকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো খালেদ মোশারফ এবং তার অভ্যুত্থানকেই সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ করে ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রের মূল শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা।

সেই লক্ষ্যে তারা জাসদকে নভেম্বর মাসে ব্যবহার করেছিল। জাসদ ১৯৭২, ১৯৭৩ সাল থেকে বিপ্লবী রোমান্টিক ভাবাদর্শে মুজিব, ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরোধী শক্তি হিসেবে এই সময়ে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছিলো। তাদের ছিলো গণবাহিনী এবং বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। এই সমস্ত শক্তিকে ১৫ আগস্টের মূল ষড়যন্ত্রকারীরা নভেম্বরের খালেদ মোশারফ তার অনুসারীদের হত্যা এবং খন্দকার মোশারফকে উচ্ছেদ করার একদিলে দুই পাখি শিকার করেছিলো। জাসদ ৭ নভেম্বর বিপ্লবের স্লোগান দিলেও পরদিন থেকেই বুঝতে পেরেছিল তারা আবর্জনার মতো ছুঁড়ে ফেলার মতো বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীর প্রধান হলেও ক্ষমতার চাবিকাটি তার হাতেই ছিলো। তিনি ক্ষমতার এই আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আশেপাশে আর কোনো প্রতিপক্ষ দেখেননি। কারণ ৩ তারিখ রাতেই চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর দেশে ক্ষমতার দাবিদার হওয়ার মতো আর কোনো বড় শক্তি তার সম্মুখে ছিলো না। তিনি তখন একদিকে আওয়ামী লীগ অন্যদিকে জাসদের ‘বন্ধুদের’ গ্রেপ্তার শুরু করেন। সেনানিবাসে তার অনুসারীদের চেইন অব কমান্ড স্থাপনের পরপরই রাজনীতিকে সম্পূর্ণরূপে বুলডোজার ঘুড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলেন। ৭ নভেম্বর প্রকৃত চরিত্রে আবির্ভূত হতে থাকে। এটি জাসদ ও ভাসানীর অনুসারী বিভিন্ন তথাকথিত বিপ্লবী রাজনৈতিক দলের কাছে বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে উচ্চারিত হলেও এটি ক্রমেই প্রতিবিপ্লব, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি রাজনৈতিক সুবিধা প্রদানের দিন ও ঘটানো হিসেবে ক্রমেই দৃশ্যমান হতে থাকে। যারা এই দিনকে বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করেছিল তারা দুনিয়ার বিপ্লবের ইতিহাস বুঝতে বড়ই ভুল করেছিলেন। বিপ্লব কখনো সেনাবাহিনীর মতো একটি বিশেষাহিত বাহিনীকে ব্যবহার করে পৃথিবীর কোনো দেশে সংগঠিত হয়নি। বিপ্লব সংগঠিত হতে রাজনৈতিক দল ও জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য শক্তি হিসেবে কাছ করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে যারা ক্ষমতা দখল ও নানা ধরনের অর্ন্তদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরেছিলেন তারা কোনো বিপ্লবের আদর্শ ধারণ করে এসব অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থান সংগঠিত করেনি। তাদের অনেকেই বাইরের শক্তি ও গোষ্ঠীর দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিলেন।

সর্বশেষ তারা রাজনৈতিক দল জাসদের ‘শিশুসুলভ বিপ্লববাদে’ বিভ্রান্ত হয়। অনেক সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য অকারণে তাদের হাতে প্রাণ হারায়। দেশে একটি রক্তাক্ত পর্ব দেখা যায় যখন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য এদের হাতে প্রাণ বলি দেন। অবশেষে ক্ষমতায় যেই প্রতিবিপ্লবীরা অধিষ্ঠিত হয় তারা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ ধারায়, পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে পরিচালিত করার নীতি ও কৌশল অনুসরণ করে। যে কারণে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং দেড় ডজনের মতো পাল্টা অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। এতে প্রাণ যায় অসংখ্য সেনাসদস্যের যারা মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। সেনাবাহিনীকে ১৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় দেড় দশক ধরে অনেক মূল্য দিতে হয়েছিল। অন্যদিকে দেশের রাজনীতি সম্পূর্ণরূপে পাল্টিয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি ভাবাদর্শের আমদানি এবং সহজ বিচরণ ঘটানো হয়, কঠিন করে দেওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে। এটিকে স্থায়িত্ব দেওয়ার মতো সকল আয়োজন সম্পন্ন করেই বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে তথাকথিত গণতন্ত্রের রশি ছেড়ে দেওয়া হয়। পুরো বিষয়টি ছিলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগের পরিকল্পনা, যা ৭ নভেম্বর থেকে বুলডোজার চালিয়ে সমান করা হয়। রাষ্ট্র ও রাজনীতির এইসব জটিল বিষয়গুলো বুঝতে অনেকের দেরি হয়। দীর্ঘদিন জাসদসহ অতিবামপন্থিরা ৭ নভেম্বরকে বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবেই বিশ^াস করেছিলো। তাদের সেই ভ্রম কাটতে বেশ সময় লেগেছিলো। এটি এখন বিএনপি এবং ডানপন্থার রাজনৈতিক দলসমূহের ‘আজাদী দিবস’ হিসেবেই পালিত হয়। লেখক : শিক্ষাবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়