শিরোনাম
◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২০, ১০:১০ দুপুর
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২০, ১০:১০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]উপবৃত্তি বিতরণে অসংখ্য অভিযোগ, তদন্তে দুদক

ডেস্ক রিপোর্ট : [২]প্রাথমিক থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিচ্ছে সরকার। এসব উপবৃত্তির বিতরণে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তি, স্থানীয় প্রভাবশালী, মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা এবং শিক্ষকরা। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের শুভ এ উদ্যোগ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও ভুক্তভোগীদের করা শতাধিক অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে কিছু অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) এবং বাকিগুলো নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে তদন্ত করবে সংস্থাটি। শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দুদক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।যায়যায়দিন

[৩]জানা গেছে, দুদকের নির্দেশনার পর গত ২ নভেম্বর তিন সদস্যের কমিটি করে মাউশি। কমিটিকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে কমিটির আহ্বায়ক (একিউএইউ শাখার উপপরিচালক) নুরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দুদকের কাছে যেসব অভিযোগ এসেছে, এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো-উপবৃত্তির তালিকায় দরিদ্র শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, উপজেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের হস্তক্ষেপ ও অসাধুতা আর অসততার আশ্রয় নেওয়া। এতে প্রকৃত দরিদ্র ও মেধাবীরা বাদ পড়ছে। টিসি নিয়ে অন্য স্কুলে চলে গেছে বা ভুয়া শিক্ষার্থী সাজিয়ে তাদের টাকা তুলছেন প্রধান শিক্ষকরা।

এর আগে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে প্রাথমিক উপবৃত্তি বিতরণ নিয়ে নানা অনিয়মের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তা খুঁজতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১১টি কমিটি করা হয়। কমিটি সরেজমিনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বেশ কিছু সুপারিশ করে। এর আলোকে কয়েকজন কর্মকর্তা বহিষ্কারসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়।

এদিকে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির উপবৃত্তি বিতরণের সার্ভিস প্রোভাইডার পরিবর্তন হওয়ায় অন্তত ২০ লাখ শিক্ষার্থী চলতি শিক্ষাবর্ষের উপবৃত্তির টাকা পায়নি। এতে করোনার মধ্যে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব থাকার পরও নতুন করে বিকাশ হিসাব খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিকাশের সার্ভারে তথ্য আপলোড না হওয়ার কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত ৪০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী উপবৃত্তির সুবিধা পায়। চারটি প্রকল্প-সেকায়েপ (সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট), এসইএসপি (মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্প), এইচএসএসপি (উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রকল্প) পৃষ্ঠা ২ কলাম ১

এবং সেসিপের মাধ্যমে এসব উপবৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুইটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাকি দুইটি সরকারের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ও এডিবি অর্থায়ন করে। এছাড়া স্নাতক শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। ২০১২ সাল থেকে পুরো উপবৃত্তি প্রক্রিয়াটি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে সেখান থেকে বিতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন পর গত বছর ১৬ জানুয়ারি উপবৃত্তি প্রকল্পগুলোকে সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) আওতায় সমন্বিত উপবৃত্তি স্কিম (এইচএসপি) চালুর অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কিমটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চালুর কথা থাকলেও গত বছরের অক্টোবর মাসে চালু করা হয়। স্কিমের মাধ্যমে ২০১৭ সাল থেকে ১৯ সাল পর্যন্ত সেকায়েপসহ অন্যান্য প্রকল্পের বকেয়া উপবৃত্তি বিতরণ করা হলেও চলতি বছর উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ করা হয়নি। উচ্চমাধ্যমিকের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (এইচএসসি পরীক্ষার্থী) ৩ লাখ ২৬ হাজার শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পায়নি। একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তাদের সবাইকে ডাচ্‌ বাংলা ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং রকেট হিসাবের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এসব শিক্ষার্থী বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করলেও একাদশ শ্রেণির উপবৃত্তির টাকা পায়নি।

জানা গেছে, উচ্চমাধ্যমিকের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের উপবৃত্তির সুবিধাভোগীদের রকেট হিসাব থাকার পরেও স্কিমের কর্মকর্তারা গত ফেব্রম্নয়ারি মাসে নতুন করে বিকাশ হিসাব খোলার নির্দেশনা দেয়। করোনার মধ্যে এ ঘোষণায় দুর্ভোগে পড়ে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিকাশ হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক করা হয়। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকে বিকাশের হিসাব খুলতে পারেনি। এদিকে সার্ভারের মাধ্যমে বর্তমানে ষষ্ঠ ও একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তথ্য ৭ নভেম্বরের মধ্যে দিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সফটওয়্যারের লিংক ও পাস ওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। একাধিক অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, দিন-রাত ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও সার্ভারে তথ্য আপলোড করতে পারছেন না। সার্ভারটি পুরাতন ও আপলোড সক্ষমতা কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষকরা।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহফুজার রহমান বলেন, যারা এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও দ্বাদশ শ্রেণির কেউই উপবৃত্তির টাকা পায়নি। এর মধ্যে নতুন করে বিকাশ হিসাব খোলার সিদ্ধান্তে তারা দুর্ভোগে পড়েছে। কারণ দিন-রাত চেষ্টা করেও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর তথ্য সার্ভারে আপলোড করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে স্কিম পরিচালক শরীফ মোর্তজা মামুন বলেন, সার্ভারের ত্রম্নটির বিষয়টি নিয়ে তারা সভা করেছেন। সার্ভারের সক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষকদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তথ্য সংগ্রহের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

স্কিম সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের মাধ্যমিক স্তরের (স্কুল-মাদ্রাসা) ৩৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণিতে অন্তত ৩০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৮ হাজার (কলেজ-মাদ্রাসা) প্রতিষ্ঠানের ৪ থেকে ৫ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য আপলোড করতে হবে। সার্ভারটির সেই সক্ষমতা নেই। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৬ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য আপলোড করা সম্ভব হয়েছে। স্কিম অফিসে প্রতিদিন সারা দেশের হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আপলোড সমস্যার অভিযোগ আসছে। সমস্যা সমাধান করতে গত সোমবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেছে স্কিম পরিচালক।

সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নাসরিন আফরোজ বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সার্ভিস প্রোভাইডারকে অ্যাকাউন্ট করতে হবে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য তাদের পছন্দ অনুযায়ী মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খুলতে পারবে। শুধু বিকাশে হিসাব খোলার নির্দেশনা দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বকেয়া উপবৃত্তির টাকা পরিশোধ করতে প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী হিসাব খুলতে পারবে।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি-এ চারটি স্তরে মোট ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চারটি ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১টি প্রকল্প চালু রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে পিইডিপি-৪ (চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প)-এর মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়