শিরোনাম
◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২০, ১০:০৫ দুপুর
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২০, ১০:০৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আব্দুন নূর তুষার: সততার প্রথম পাঠ পাই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে

আব্দুন নূর তুষার: আমি যখন এক প্রায় অবুুঝ কিশোর, তখন আমি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে প্রথম যাই। বই পড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দেই। লক্ষ্য ছিল প্রথম দশজনের জন্য ঘোষণা দেয়া একহাজার টাকার বই পুরষ্কার। আজ থেকে ৩৬ বছর আগে একহাজার টাকার বই মানে অনেক বড় একটা পুরষ্কার।
পুরস্কার বগলদাবা করা আমার শৈশবের অভ্যাস। প্রথম শ্রেণীতে যখন পড়ি তখনই ১২ টা পুরষ্কার পেয়েছিলাম একবছরে। শুধু স্কুলে।
অতএব প্রায় অনায়াসে ১০০০ টাকার সেই ১৬ খানি মোটামোটা বই হাতে ঘরে ফিরেছিলাম। দু বছর পরে আমার ছোটভাইটাও একই পুরস্কার ঘরে নিয়ে আসে।
পুরস্কার নিতে গিয়ে আমি আটকে গেলাম কেন্দ্রে। সায়ীদ স্যার তখন খ্যাতির মধ্যগগনে যেখানেই তিনি আটকে আছেন এখনো। তার খ্যাতি কমে নাই বরং বেড়েছে।
কেন্দ্রে গেলেই দেখা যায় সৈয়দ হক, মান্নান সৈয়দ, আসাদ চৌধরী, শামসুর রাহমান, কামরুল হাসানদের মতো দেশের সেরা লেখক সাহিত্যিক শিল্পীদের। কেউ আড্ডা দিচ্ছেন আর কেউ ইসফেন্দিয়ার জাহিদ হাসান মিলনায়তনে বক্তৃতা দিচ্ছেন। হয়তো গান হচ্ছে সেরা শিল্পীদের। হয়তো কবিতা পাঠ হচ্ছে জয়ন্ত দা, কামরুল হাসান মঞ্জু বা ভাস্বরদার কন্ঠে।
অবলোকন নিয়ে ব্যস্ত রাহমান ভাই। এমনকি ফরহাদ মজহার উবিনীগের পোস্টার লাগিয়ে বসে থাকেন কখনো কখনো।
জুয়েল আইচ, আল মনসুর, আনিসুল হকের মতো টিভি তারকাদের আনাগোনা। এ এক ঘোরের সময়।
আমাদের বই পড়ার পর আরো বই পড়ার কর্মসূচি শুরু। সেখানে আসেন লিয়াকত আলী, মিজারুল কায়েস, বাতেন ভাই , ডা. মিজান ভাই।
লাইব্রেরীতে মাজহার ভাই। আনোয়ার ভাই আমাদের দেখভাল করেন। সাইদুর ভাই , ভুট্টো ভাই, সেতাউর ভাই। সেতাউর ভাইয়ের কাছে আমাদের হিসাব দিতে হয় কাজশেষে।
কেন্দ্র প্রথম স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বই পড়াতে শুরু করলো যার অন্যতম সংগঠক আমি। স্কুলে স্কুলে যাই । কাজ শেষে এক সপ্তাহের যাতায়াত ও অন্যান্য খরচের বিল করি। সেখানে আমাদের ৪২ পয়সা, ৩২ পয়সা পর্যন্ত গুনে গুনে বিল পরিশোধ করা হয়। আমরাও খুব সততার সাথে বিল করি। সেই প্রথম পেয়েছিলাম সততার প্রশিক্ষন। প্রতিটা বিল ভাউচার ক্যাশ মেমো সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ। এই টাকা কেবল আমাদের খরচ বাবদ। কাজের জন্য কোন বেতন ছিলো না। সবই স্বেচ্ছাসেবা। কেন্দ্রের বই প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে দেয়া হয় যাতে হাতের ঘাম ধুলা ময়লা তেল লেগে বই নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে। আমি এই বাঁধাইকারদের সাথে বসে থেকে বই বাঁধাই করা শিখলাম। সাইদুর ভাইয়ের সাথে বসে শিখে গেলাম ডেস্কটপ পাবলিশিং , কম্পিউটার কম্পোজ। কেন্দ্রের মালীর সাথে বসে থেকে শিখলাম কিভাবে বাগান বানায়, কোন গাছের কি নাম। স্যারও আমাদের মাঝে মাঝে বৃক্ষ চেনাতেন।
লাইব্রেরীতে বসে দস্তয়ভস্কি, স্টাইনবেক, হেমিংওয়ে থেকে মানিক বন্দোপাধ্যায় বিভূতিভূষণ। শিবরাম পরশুরাম আর ব্রাম স্টোকার। কিছুই বাদ নাই।
মিউজিক লাইব্রেরীর এয়ার কুলার টার লোভে সেখানে কাজ করে ঠুমরি , গজল থেকে শুরু করে বিটলস, অ্যাবা, স্করপিয়ন। সরোদ গিটার এস্রাজের বাদন। কি নেই সেখানে?
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র নিজেই একটা ছোটখাটো বিশ্ব হয়ে গিয়েছিলো আমার কাছে। সায়ীদ স্যার আর লিয়াকত ভাই সেই ১০০০ টাকার বইয়ের প্রতিযোগিতায় আমাকে বলেছিলেন পুরস্কার না থাকে যদি, তাহলে আমি কি আর কেন্দ্রে আসবো। আমি বলেছিলাম আসবো। বইয়ের জন্য।
সবাই ”আসবো “ বলেছিল বলেই আমার ধারনা।
আমি আমার বয়সীদের কাউকে আর দেখি নাই কেন্দ্রে নিয়মিত যেতে, দু তিন বছর পর থেকে। আমি কিন্তু যেতেই থাকলাম। প্রায় ৩৬০০০ সার্টিফিকেটে আমার হস্তাক্ষর ছিল। প্রথম দিকে সব সার্টিফিকেটে আমি নাম লিখতাম প্রতিযোগীদের। নানাভাবে নানা কাজে সংযুক্ত হলাম।
এভাবে গত ছত্রিশ বছর । কিভাবে কেটে গেছে জানি না। সারা দেশে গেছি কেন্দ্রের হয়ে। বক্তৃতা দিয়েছি স্যার এর বদলে, একবছর ব্যস্ততার কারনে তিনি যেতে পারেননি বলে।
আমি এখন প্রথম যেদিন কেন্দ্রে এসেছিলাম স্যারের সেই বয়সের চেয়েও খানিকটা বেশী বয়সী। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সাথে এই পথচলা পুরোটাই স্বেচ্ছাসেবা। সেখানে আমার জন্য কখনো আলাদা করে চেয়ার টেবিল ছিলো না। সেই ষোল বছর বয়সে যেভাবে আমি কেন্দ্রে যেতাম এখনো সেভাবেই যাই। এখনো চেয়ার টেবিল নাই। সব চেয়ার সব টেবিল আমার।
কেন এসব বললাম?
বললাম এজন্য যে, সকল প্রাপ্তি মানে অর্থ বিত্ত আর ক্ষমতা নয়।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র তার ট্রাস্টিদের মধ্যে আমাকে কনিষ্ঠতম হিসেবে নির্বাচিত করেছে।
সেই ষোল বছরের বালকটিকে।
যার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কাছে থেকে শেখা এখনো শেষ হয় নাই।
যে এখনো সেই কিশোর মন নিয়ে কেন্দ্রে যায় আর শিখতে থাকে।
আমার প্রাপ্তি আমার আনন্দ আমার ভালোবাসার নদী আমার মনের মধ্যে। আমাকে অর্থ দিয়ে কেনার সাধ্য কারো নাই। আমি কেবল স্নেহ মমতা ভালোবাসার নদীর পাশে বসে থাকি একটা ঢেউ এর স্পর্শের জন্য।
আজকের আমি যা, সে মানুষটি তো গতকাল পর্যন্ত যা শিখেছি জেনেছি আর করেছি তারই যোগ বিয়োগ গুন ভাগের সরল অংক। সকল হাসি কান্না আর দু:খ বেদনা ও আনন্দের সমষ্টি। ফেসবুক থেকে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়