শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:২২ সকাল
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোহিঙ্গা নারীদের অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়েছে কোভিড-১৯

নিউজ ডেস্ক : কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নারীদের অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়েছে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি। চলতি বছর বিভিন্ন অবৈধ কাজে জড়িয়ে তাদের গ্রেফতার হওয়ার হারও গত দুই বছরের তুলনায় বেশি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৫৯ জন রোহিঙ্গা নারীকে বিভিন্ন অপরাধে আটক করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ৩৯ এবং ২০১৮ সালে ৩০ রোহিঙ্গা নারী গ্রেফতার হয়েছিল। বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধে জেলে আছে সাড়ে পাঁচ শ’ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে অর্ধশতাধিকের বেশি নারী।

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকে যাতে কোনও অপরাধ কর্মকাণ্ড না ঘটে। তবে সম্প্রতি সময়ে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে পুরুষদের মতো গ্রেফতার হচ্ছে নারীও। কিন্তু কে নারী কে পুরুষ সেটি মুখ্য নয়। অপরাধী হিসেবে আইনি প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়।’

শরণার্থী এবং অভিবাসন বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনীর বলেন, ‘একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কোনও শরণার্থী নারী কতটা ক্ষমতা রাখে তা সহজেই অনুমেয়। রোহিঙ্গা নারী এখানে মূলত ভিকটিম (আক্রান্ত) হচ্ছে। তাকে কেউ একজন ব্যবহার করছে। হয় অপরাধী চক্র বা নিজের স্বামীর চাপেই সে অবৈধ কাজে জড়াচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাকে সামনে পাচ্ছে, শুধু তাকেই ধরছে। শিবিরগুলোর সর্বত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে অনেক রোহিঙ্গা নারী আটক হলেও তাদের যে বা যারা অপরাধে প্ররোচনা দিচ্ছে, তারা ধরা পড়ছে না।”

অপরাধীরা নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জানিয়ে অপরাধ বিজ্ঞানী ড. ওমর ফারুক বলেন, ‘কৌশলগত জায়গা থেকেই তারা মহিলাদের বেছে নেয়। তাদের যত দ্রুত অপরাধে জড়ানো সম্ভব, একজন পুরুষকে সেটা সম্ভব নয়।’

সহজলভ্য মাদক বহনকারী হিসেবে বহুল ব্যবহৃত এই শরণার্থী নারীরা এখন অপহরণের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহে পুলিশের হাতে আটক হওয়া এমন দুই জনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, তাদের মতো অর্ধশতাধিক নারী বর্তমানে এ কাজে সক্রিয়। মাদক বহনকারী হিসেবে রোহিঙ্গা নারীদের ব্যবহারও থেমে নেই।

ক্যাম্পে যুক্ত হবেন ৪০ নারী পুলিশ সদস্য

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশের দুটি ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন ১৪ ও ১৬) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কোনও নারী সদস্য না থাকায় ক্যাম্পগুলোয় পূর্ণ নজরদারি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে এপিবিএন-১৬ অধিনায়ক, পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম জানান, ‘রোহিঙ্গা নারীদের অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে খুব দ্রুতই ২০ জন নারী সদস্য ব্যাটালিয়নে যুক্ত হবেন। এরপর তাদের ট্রেনিং দেওয়া হবে।’

এপিবিএন-১৪ অধিনায়ক, এসপি আতিকুর রহমানও একই তথ্য জানিয়েছেন। এই দুই কর্মকর্তাই মনে করেন, নারী সদস্যরা যোগ দেওয়ার পর ক্যাম্পগুলোতে এপিবিএন আরও শক্তিশালী হবে।

বেপরোয়া রোহিঙ্গা নারীরা

এপিবিএন-১৬ টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্প থেকে অপহৃত দীন মোহাম্মদকে (৪২) গত ২১ অক্টোবর উত্তর আলীখালি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির (ক্যাম্প-২৫) থেকে উদ্ধারকালে ইসমত আরা (৩৮) ও নুরজাহান (২০) নামের দুই রোহিঙ্গা নারীকে গ্রেফতার করে। তারা আলীখালি শিবিরেরই বাসিন্দা।

এ বিষয়ে এপিবিএন-এর টেকনাফ নয়াপাড়া পুলিশ চৌকির পরিদর্শক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘তারা অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, শরণার্থী শিবিরের আরও অর্ধশতাধিক নারী এই কাজে জড়িত।’

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা নারীরা মূলত অপহরণকারী চক্রের হয়ে ‘রেকি’, ‘টার্গেট’ বাছাই এবং ‘শেল্টার’ দেওয়ার কাজ করে। এছাড়া প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও মাদকসহ রোহিঙ্গা নারী আটকের খবর পাওয়া যাচ্ছে।”

এদিকে গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার অদূরবর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর ৯০০ পিস ইয়াবা ও মাদক বিক্রির ৯০ হাজার টাকাসহ আটক হওয়া আট জনের মধ্যে ছয় জনই ছিলেন রোহিঙ্গা নারী। টেকনাফের লেদা শরণার্থী শিবিরের (ক্যাম্প-২৪) ওই নারীদের মধ্যে সাকিলা রুমা (২৫) নামের একজনের সঙ্গে ছিল তার চার বছরের পুত্র ওসমান গনি।

ওই শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘মাদক কারবারিরা সামান্য টাকার বিনিময়ে ক্যাম্পের নারীদের এই কাজে ব্যবহার করছে। অনেক রোহিঙ্গা নারী অপহরণ ও মানবপাচারের সঙ্গেও জড়িত রয়েছে।’

তবে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের নারী নেত্রী হামিদা বেগমও বলেন, ‘ক্যাম্পের অনেক পুরুষ নিজের স্ত্রীসহ পরিবারের নারী সদস্যদের অপরাধ করতে বাধ্য করছে। আবার কেউ কেউ অভাবের কারণে সেচ্ছায়ও অবৈধ কাজে জড়াচ্ছে।’

দাবি করে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে শরণার্থীদের অসহায়ত্ব বেড়ে যাওয়ায় অপরাধী গোষ্ঠীগুলো তাদের সহজে ব্যবহার করতে পারছে। রোহিঙ্গারা যাতে এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে, সে বিষয়ে আমরা সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি।’

২০১৮ সালের মে মাস শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযান করোনায় স্তিমিত হয়ে পড়ায় অনেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সাবেক কর্মকর্তা আসিফ বলেন, ‘যত দিন যাবে, প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বেপরোয়া মনোভাবও বাড়বে।’

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান (সিপিএস) বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর বলেন, ‘শরণার্থীরা নিজেদের নিস্পেষিত ও অত্যাচারিত হিসেবে মনে করে। তাই সবার প্রতিই তাদের ক্ষোভ থাকে। সেই ক্ষোভ থেকেই তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর সামাজিক কোনও নিয়ন্ত্রণ নেইও। ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা জনিত মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বিগ্নতার স্থায়ী সমাধান চায় তারা। সেটা না হলে এই শরণার্থীরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

নতুন উচ্চতায় সুরক্ষা ঝুঁকি

জাতিসংঘের লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতাবিষয়ক সংস্থা (ইউএন ওমেন) মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরের নারী ও বালিকাদের সুরক্ষা ঝুঁকি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সেখান তাদের জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। “সীমিত জীবিকার সুযোগের কারণে, শরণার্থী নারীরা নিজেদের অর্থনৈতিক ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা কমাতে ‘সার্ভাইবাল সেক্স’ (বাঁচার জন্য যৌনকর্ম), ভিক্ষা, অবৈধ মাদকের ব্যবসা এবং তাদের অবশিষ্ট সম্পদ ও ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ার মতো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে,” বলেছে ইউএন ওমেন। একইভাবে তারা যৌন নির্যাতন ও শোষণ এবং জোরপূর্বক বাল্য ও বহু বিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্যাম্পগুলো থেকে বিয়ে, যৌনকর্ম এবং শ্রমের জন্য মানবপাচার বাড়ছে বলে জানা গেছে, দাবি করা হয় প্রতিবেদনটিতে। কক্সবাজারের বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু বলে উল্লেখ করেছে তারা।

টেকনাফ মডেল থানার নারী ও শিশু বান্ধব কেন্দ্রের কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সানাউল ইসলাম বলেন, ‘কোভিড-১৯ শুরুর পর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নারীদের কাছ থেকে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ আসা বেড়েছে। স্বামীর হাতে মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে দুটি মামলা করেছে দুই রোহিঙ্গা নারী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত একজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহম্মদ সনজুর মোরশেদ বলেন, ‘থানায় অভিযোগ করতে আসা রোহিঙ্গা নারীরা ন্যায় বিচার পায়, সেই চেষ্টাই থাকে আমাদের। উল্লেখিত দুই থানাতেই নারী পুলিশ সদস্য রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কর্মকর্তারা।

এপিবিএন-১৬ অধিনায়ক এসপি হেমায়েতুল বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে রোহিঙ্গা নারীরা অপরাধে জড়িয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। রোহিঙ্গা পুরুষরা যেভাবে আগে থেকেই অপরাধে জড়িত, ঠিক তেমনি নারীরাও।’ বাংলাট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়