রাসেল চৌধুরী: [২] বরগুনার বামনা উপজেলার বিষখালী নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে তা বিক্রি করে যা পান তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সকল নদ-নদীতে সকল প্রকার মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা ধাকায় গত ২২ দিন বিষখালীতে জাল ফেলতে পারেননি তারা। সরকারি যে সামন্য সহায়তা পেয়েছেন তাতে হয়তো ভাতের চাহিদা পূরণ হলেও অন্য খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাদেরকে। নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর রাতে বিষখালীতে জাল ফেলেন তারা।
[৩] সারারাত জাল ফেলে সকালে মাত্র দুই থেকে চারটি ইলিশ নিয়ে তীরে ফেরেন জেলেরা। সারারাত জাল ফেলে এ রকম সুকদেব দাস, নীরা দাস, কর্ন দাস, ছালাম হাওলাদার, বরুন দাসসহ বিজয় দাসের মতোন শতশত জেলেদের এভাবে শূন্যহাতে ঘরে ফিরতে হয়েছে। ফলে বিগত ২২ দিন ধার দেনা করে যারা সংসার চালিয়েছেন সেসব জেলেরা এখন হতাশ। বিষখালীতে ইলিশ ধরা না পড়লে অনেক জেলেকে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
[৪] জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। টানা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে গত বুধবার রাত ১২টার পর থেকে বিখালীতে জাল ফেলে জেলেরা।
[৫] এদিকে আজ বরগুনার বামনা উপজেলার হাটবাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে বিষখালীর ইলিশ নিয়ে আসেনি কোনো জেলে। তবে সামান্য যে ইলিশ বাজারে উঠেছে তার বেশির ভাগই পাথরঘাটার বলেশ্বর নদীর মোহনার। আর এ মাছগুলোর পেটভর্তি ডিম।
[৬] কাটাখালী গ্রামের জেলে সুকদেব দাস বলেন, এখানের অনেক জেলে এনজিও ঋণ ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে দাদন নিয়ে সংসার চালায়। নিষেধাজ্ঞার শুরুতে ২০ কেজি চাল সরকারি সহায়তা হিসাবে পেলেও তা অপ্রতুল। আমরা ভেবেছিলাম নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে ইলিশ মিলবে। তবে গত বুধবার রাত ও আজ সকাল থেকে জাল ফেলে তেমন ইলিশ না পাওয়ায় আমরা এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছি। জেলে রাজা রাম দাস বলেন, প্রতিদিন এনজিওর কিস্তি শোধ করতে হয়। এই ২২ দিন কোনোমতে ওদের ওয়াদা দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছি। এখন নদীতে ইলিশ মিলছে না। এখন কিভাবে এই ঋণ শোধ করব সৃষ্টিকর্তা জানেন। এখন যে অবস্থা তাতে ছেলেদের না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।
[৭] বামনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. বদরুজ্জামান বলেন, ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে কেন জেলেরা নদীতে ইলিশ পাচ্ছে না তা আমাদের জানা নাই। তবে ধারণা করছি নিষেধাজ্ঞার আগে উত্তরের হাওয়া বইতে শুরু করা ও শীত বেশি শুরু হওয়ায় হয়তো জালে মাছ ধরা পড়ছে না। তিনি আর বল যে বামনা উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলেদের সংখ্যা ১ হাজার ৬৫ জন। সম্পাদনা: সাদেক আলী
আপনার মতামত লিখুন :