শিরোনাম
◈ সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ ◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ রোববার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি ◈ উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে: সিইসি ◈ ভারতের রপ্তানি করা খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পেয়েছে ইইউ ◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের স্বাক্ষর

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০২০, ০২:৪৮ রাত
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০২০, ০২:৪৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ড. শোয়েব সাঈদ: লিটিগেশনে নির্বাচন আর মার্কিন সভ্যতা

ড. শোয়েব সাঈদ : মায়া, মিসর, চৈনিক, গ্রীক, রোমান সভ্যতার আদলে সমসাময়িক সভ্যতাকে অনেকে মনে করেন সিভিলাইজেশন অব ইউনাইটেড স্টেটস বা মার্কিন সভ্যতা। অনেকের দ্বিমত থাকলেও অর্থনীতি, সামরিক শক্তি, শিক্ষা আর জ্ঞান বিজ্ঞানে একমত হবার অনেক উপকরণ রয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবৎ ট্রাম্পের আচরণ সামাজিক, মানবিক আর নৈতিক অবস্থান থেকে মার্কিন সভ্যতার গর্বের জায়গাটিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। ট্রাম্প হোয়াইট সুপ্রিমেসীর ঢেকে রাখা ক্ষতটিকে পক্ষে বিপক্ষে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বর্ণে, ধর্মে, জাতে বিদ্বেষটাকে ট্রাম্প এমনভাবে সামনে নিয়ে এসেছে যে কানাডাতে বসে যে বাংলাদেশীর ট্রাম্পকে সমর্থনের কোন কারণ নেই, সেও তার মনের গহীনে দীর্ঘদিন ধরে লালিত, পালিত, প্রচারিত নির্দিষ্ট ধর্মভিত্তিক উগ্র আর জগন্য সাম্প্রদায়িকতায় মনের মিল খুঁজে পায় বলে ট্রাম্পের অন্ধ সমর্থক বনে যায়।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিশ্বের সামনে এক হাস্যকর ব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। লিটিগেশন বা আইনি ব্যবস্থার ফাঁকফোকর দিয়ে কর ফাঁকি দিয়ে জীবনভর ব্যবসা করে আসা ট্রাম্প নির্বাচনেও ভোটে নয়, লিটিগেশন দিয়ে টিকে থাকতে চান। ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সমর্থকরা একটু মারমুখী ধরনের, ডেমোক্রেট সমর্থকরা অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত আর ভদ্রলোক টাইপের। রিপাবলিকানরা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পছন্দ করে আর ডেমোক্রেটরা ঝামেলা এড়াতে ডাকযোগে ভোট দিতে পছন্দ করে। এটি দীর্ঘ দিনের প্রথা এবং এই প্রথাটি ট্রাম্প খুব ভাল করেই জানে। নির্বাচন প্রচারণার শুরু থেকেই ট্রাম্প ডাকযোগে ভোটের এই ঐতিহ্যকে পরিকল্পিতভাবেই আঘাত করে যাচ্ছে যাতে নির্বাচনে হেরে গেলে ইস্যু তৈরি করা যায়। ঐতিহ্য ভেঙ্গে তড়িঘড়ি করে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই করা, ট্রাম্প অবশ্য নৈতিক, অনৈতিক যে কোন ইচ্ছা প্রকাশে কোন ছলচাতুরী করেনা। কোভিড পেনডেমিকের কারণে ডাকযোগে ভোটের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবং একই কোভিডের কারণে গণনাতেও সময় লাগছে। ট্রাম্প এই বিষয়টিকে মূলধন করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পরিকল্পিতভাবেই এগুচ্ছে। ট্রাম্প, ট্রাম্পের ছেলে টুইট করে অসত্য তথ্য দিয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের উত্তেজিত করে যে ফায়দা নিতে চাচ্ছে তাতে মূলধারার রিপাবলিকানরা বিব্রত হচ্ছে। যে নির্বাচনকে ট্রাম্প প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাতে রিপাবলিকান সিনেটররা ভালই করেছে, নির্বাচনের অনিময় নিয়ে কারো কোন অভিযোগ নেই, অভিযোগ শুধু ট্রাম্পের, পরিস্থিতি মনের মত নয় বলে। ট্রাম্পের স্ববিরোধী অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আভিজাত্যকে হাসি তামাশার উপাখ্যানে পরিনত করেছে। রেকর্ড পরিমান ভোটার ভোট দিয়েছে এবার, গণতন্ত্রের এই সুবাতাসে রাষ্ট্রনায়কোচিত কায়দায় পরাজয় মেনে নেওয়ার চাইতে লিটিগেশনের পথে হাঁটতে গিয়ে ট্রাম্প নির্বাচন ব্যবস্থা আর যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ভোটাধিকারকে অপমান করেছে। একজন বিগোট বা গোঁয়ারগোবিন্দ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসে এভাবেই মূল্যায়িত হবেন ট্রাম্প।

জ্ঞান বিজ্ঞানে যুক্তরাষ্ট্রে মুলত ভুমিকা রাখে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর ইমিগ্রেন্ট প্রধান পশ্চিম প্রান্তের প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী আর উত্তর পূর্বের আটলান্টিকের তীরবর্তী রাজ্যগুলো এবং সভ্যতার আলো এখানে বৈশ্বিক মানদণ্ডে আভা ছড়াচ্ছে, বিশ্বের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংখ্যা এসব অঞ্চলেই বেশী। দক্ষিণ পশ্চিম আর মধ্যবর্তী অঞ্চলের রাজ্যগুলো আগে থেকেই দায়িত্বশীলতা আর মানবিকতার চেয়ে নিজের স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতায় বাড়াবাড়ি ধরণের আগ্রাসী। এখন কেন যেন মনে হচ্ছে ট্রাম্পের বিভাজনের রাজনীতির ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্টের প্রভাবে এদের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছে, মানসিকতার ক্ষেত্রে যেন ফার ফ্রম সিভিলাইজেশন ধরণের। মার্কিন সভ্যতার আলোর ছোঁয়া মহাসাগরের তীরবর্তী রাজ্যগুলোকে কিংবা কানাডার জনবহুল অঞ্চল সংলগ্ন রাজ্যগুলোকে আলোকিত করলেও ভেতরের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মাঝের রাজ্যগুলোতে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করতে পারছে না। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অসভ্যতার যে ক্ষেত্র তৈরি করেছে এবং তাতে বিপুল হিস্পানিক ভোটের ফ্লোরিডার সমর্থনে বিস্মিত হয়ে এক ফ্লোরিডাবাসীর মন্তব্য ছিল কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের মত আধুনিক এক্সপ্লোরারদের আবারো ফ্লোরিডা অঞ্চলে এসে সভ্যতার পক্ষে কাজ করা উচিত।

তবে সব কিছুই নেগেটিভ নয়।ট্রাম্প ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট, গোঁয়ার এবং ব্যতিক্রম, ভোট গননা বন্ধ করতে চাচ্ছে। কিন্তু কোন সরকারী কর্মকর্তা, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট স্টেটস সেক্রেটারিগন তাঁর এই চাওয়াকে পাত্তাই দিচ্ছে না, গননা চলছে, তিনটি রাজ্যে ডাকযোগে ভোটের প্রবল আধিপত্যে ট্রাম্প হারার মুখোমুখি। ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হলে আদালতে যাবে যা সিস্টেমের অংশ। লিটিগেশনে মেরিট না থাকলে অভিযোগ টিকবে না। গতকাল কানাডার সিবিসি টেলিভিশনে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ল স্কুলের একজন অধ্যাপকের মন্তব্য শুনছিলাম, ট্রাম্পের আশানুসারে সুপ্রিম কোর্টের অনুগ্রহ পাবার সম্ভাবনা বাস্তবে ধরা নাও দিতে পারে। স্টেটস সেক্রেটারিগন প্রতিটি ব্যালট গণনার, নিরপেক্ষ আর আইনগত নির্বাচনের পক্ষে কঠোর অবস্থানে। ব্যাক্তির ছলচাতুরী থাকতে পারে কিন্তু সিস্টেমের চেয়ে ব্যক্তি ক্ষমতাশালী নয়। কুন ফা ইয়া কুনের "হও বললে হয়ে যাওয়ার" নির্বাচনী কালচারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের তুলনা করা যাবে না। ট্রাম্প থামতে না চাইলেও এই সিস্টেমই ট্রাম্পকে থামিয়ে দেবে। সভ্যতার একটি পজিটিভ প্রভাব তো থাকবেই।

লেখকঃ কলামিস্ট এবং মাইক্রোবিয়াল বায়োটেক বিষয়ে বহুজাতিক কর্পোরেটে ডিরেক্টর পদে কর্মরত।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়