শিরোনাম
◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মুজিবনগর দিবস বাঙালির শৃঙ্খলমুক্তির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর, ২০২০, ০১:০৮ রাত
আপডেট : ০৫ নভেম্বর, ২০২০, ০১:০৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] প্রাথমিক শিক্ষায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন নওগাঁর ফাতেমা খাতুন

নওগাঁ প্রতিনিধি: [২] প্রাথমিক শিক্ষায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন নওগাঁর ফাতেমা খাতুন। গত ১ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে এক স্মারকে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৯ এর জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে’ প্রধান শিক্ষিকা ক্যাটাগরিতে তার নাম উঠে এসেছে। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার ‘কীর্তিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এ প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

[৩] জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক শ্রম ও সাধনা। যা একদিনে সম্ভব হয়নি। শুধু শ্রেষ্ঠত্বের পদক পাওয়ার জন্য নয় বরং একজন শিক্ষক হিসেবে যা করণিয় তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছেন মাত্র। অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা ও উদ্ভাবনী দিয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন বিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে। তিনি বিশ্বাস করতেন আন্তরিক ও নিবেদিত হয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই।

[৪] ঝরে পড়া রোধ করতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খাতা, কলম, চশমা ও চার্জার লাইটসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করেছেন। এছাড়া ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিমাসে বেতনের ১০ শতাংশ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডে দিয়ে থাকেন। ভাল ফলাফলে শিখনফল অর্জনে সহায়ক কার্যাবলী হিসেবে স্থানীয় উদ্যোগে পাঁচজন প্যারাটিচারের ব্যবস্থাকরণ সহ শিক্ষার্থীদের কাছে বিদ্যালয় নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করে তুলেছেন। বিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় স্থানীয় উদ্যোগে ২০১৮ সালে বায়োমেট্রিক হাজিরা ও ৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন।

[৫] বিগত বছরগুলোতে- ছুটির মধ্যেও প্রতিদিন বিদ্যালয় সকাল ৭টা-৯টা পর্যন্ত ১ম-৫ম শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। ৫ম শ্রেনির সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য রাতে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখতেন। করোনা ভাইরাসের মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অভিভাবকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখেছেন। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজখবর রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি বন্ধুর মতো মিশতেন। তার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ছাত্রছাত্রীরা উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। ছাত্রছাত্রীদের হাতের লেখা ভালো করার জন্য মায়েদেরও লেখা শেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। তিনি ১৯৯০ সালে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বাগধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। গত ৩১ বছরের চাকুরি জীবনে অনেক বিদ্যালয় বান্ধব কাজ করেছেন এ প্রধান শিক্ষিকা।

[৬] প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে ১৪ বছরে অর্জনগুলোর মধ্যে- ২০২০ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৭ ও ২০১৫ সালে বিভাগী, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ঝরে পড়া রোধে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৬, ২০১৪, ২০১৩, ২০১২, ২০১০ ও ২০০৭ সালে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৭, ২০১৫, ২০০৯ ও ২০০৮ সালে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা, ২০১৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ এসএমসি এবং ২০১১ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষা পদক লাভ করেন।

[৭] এ ব্যাপারে কৃতিত্বের এ গুনি শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন বলেন, আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের সকল সম্মানিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী, অভিভাবক, সহকর্মীবৃন্দকে। সেই সঙ্গে কীর্ত্তিপুরবাসী, আমার বন্ধু বান্ধবগণ, নওগাঁবাসী এবং বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দকে। একই সাথে আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের প্রতি রইল আমার অকৃত্রিম স্নেহাশিস। সকলের প্রেরণা ও উৎসাহে আজ আমি দেশসেরা প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছি। আমার আজকের প্রাপ্তিতে সারা বাংলাদেশ থেকে যারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

[৮] তিনি বলেন, একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছি মাত্র। দেশসেরা হব এটা কখনোই ভাবিনি। ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যই ছিল আমার একমাত্র স্বপ্ন। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম আন্তরিক ও নিবেদিত হয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই। জাতীয় পর্যায়ের আমার এ অর্জন আমি সকলের জন্য উৎসর্গ করলাম। এ আনন্দ আমার একার নয়। আমি সকলের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চাই। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। সৃষ্টিকর্তা যেন চাকুরির শেষদিন পর্যন্ত আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করার তৌফিক দান করেন।

[৯] বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুবি বানু বলেন, তিনি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছে। এমন একজন গুণী মানুষের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করতে পেরে সত্যিই আমি গর্বিত। তিনি শিক্ষা বিষয়ে খুবই সচেতন। কিভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করালে ভাল ফলাফল করা সম্ভব সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিতেন। আমাদের সবসময় উৎসাহ দিতেন।

[১০] নওগাঁ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাইয়ার সুলতানা বলেন, তিনি তার কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন শ্রেষ্ঠ। প্রতি বছর জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ভাইভা দিয়েছেন। তিনি তার কার্যক্রম ও দক্ষতা, প্রতিষ্ঠানের অ্যাক্টিভিটিস ও আইসিটিতে অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন। প্রতিটি পয়েন্টে যে নম্বর থাকে সেগুলোতে তিনি পাশ করেছেন। জেলা থেকে বিভাগেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এরপর জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন।সম্পাদনা : জেরিন আহমেদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়