শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর, ২০২০, ০৪:৩৬ সকাল
আপডেট : ০৪ নভেম্বর, ২০২০, ০৪:৩৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] বিশ্বনবীর (সা.) অবমাননার প্রতি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ন্যক্কারজনক: খামেনেয়ী

রাশিদুল ইসলাম : [২] ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে মঙ্গলবার ইরানি জনগণের পাশাপাশি গোটা মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আবারো ফ্রান্সে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন পুনঃপ্রকাশ এবং এর প্রতি দেশটির সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, একজন কার্টুনিস্ট যখন এ ধরনের অবমাননাকর কাজ করে কিংবা একটি পত্রিকা যখন তা প্রকাশ করে তখন বিষয়টি একরকম থাকে আর যখন সেই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে এই কুকর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় তখন সেটি অনেক বেশি জঘন্য চরিত্র ধারণ করে। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই ন্যক্কারজনক অপকর্মকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে।

[৩] ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, তবে আশার কথা মুসলিম বিশ্ব নীরব থাকেনি। প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের সর্বত্র মুসলমানরা তাদের ঈমানি শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। তারা তাদের প্রাণপ্রিয় নবীর অবমাননার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। খামেনেয়ী বলেন, ফ্রান্স দাবি করে, মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতার কারণে তারা এ কাজ করছে। অথচ এই ফ্রান্স উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। ফ্রান্স ইরানের সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীকে সব রকম সহযোগিতা করেছে এবং এই গোষ্ঠী আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিসহ ১৭ হাজার ইরানিকে হত্যা করেছে।

[৪] তিনি বলেন, এই ফ্রান্স বন্য জন্তুতুল্য ও রক্তপিপাসু (ইরাকের সাবেক শাসক) সাদ্দামকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। প্যারিস প্রকাশ্যে এই সহযোগিতা দিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে। সেই নির্লজ্জ ফ্রান্স এখন বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ায়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিশ্বনবীর (সা.) অবমাননা বারবার করা হয়েছে। কিন্তু এসবের মাধ্যমে তারা মহানবীর মর্যাদার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারেনি। যেভাবে মক্কা ও তায়েফের কাফেররা একদিন তাদের অপতৎপরতার মাধ্যমে বিশ্বনবী কিংবা ইসলামের ক্ষতি করতে পারেনি বর্তমানেও পশ্চিমা বিশ্ব এই মহান নবী (সা.) বা ইসলামের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

[৫] আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, এখান থেকে পশ্চিমাদের কথিত সভ্যতার কদার্য দিকটি ফুটে উঠেছে। তাদের কাছে উন্নত প্রযুক্তি থাকায় তাদের এই পাশবিক ও বর্বর চেহারা ঢেকে রাখলেও মাঝেমধ্য তাদের প্রকৃত চেহারা বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। কয়েক শতাব্দি ধরে তারা এই কথিত সভ্যতার দাবি করে আসলেও তাদের অসভ্যতা ও বর্বরতা বিশ্ববাসীর কাছে দিনদিন স্পষ্ট হয়ে পড়ছে।

[৬] আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তার ঈদে মিলাদুন্নবীর ভাষণে আরো বলেন, ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) বর্তমানে ইমামের আহবান অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। ইমাম যখন এই ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন, সেদিন মুসলিম বিশ্বের বহু নেতা এই আহ্বানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেননি। আবার অনেকে উপলব্ধি করেও শুধুমাত্র বিদ্বেষের কারণে তাতে সাড়া দেননি। কিন্তু আজ মুসলিম বিশ্বে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে উপলব্ধি করা যায়, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য কতটা জরুরি ছিল। আজ ফিলিস্তিন সংকটকে ইসরাইলকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। ফিলিস্তিন মুসলিম বিশ্বের প্রধান সংকট হলেও সেটি থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এসব অপচেষ্টায় কোনো কাজ হবে না। ফিলিস্তিন একদিন মুক্ত হবেই।

[৭] ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, যে ইসরাইল ফিলিস্তিনি জাতির ভূমি দখল ও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে সেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা এবং সম্পর্ক স্থাপন করে তৃপ্তির হাসি হাসা চরম ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এর চেয়ে অপমান আর হতে পারে না। তিনি বলেন, ইমামের আহবানের গুরুত্ব মুসলমানরা উপলব্ধি না করলেও ইসলামের শত্রুরা বুঝতে পেরেছে। এ কারণে তারা ইসলামের বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে যাতে ঐক্য প্রতিষ্ঠা না হয় সেজন্য থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে বিভেদ সৃষ্টির সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। কীভাবে মুসলমানদের মধ্যে মতপার্থক্য আরো বেশি উসকে দেয়া যায় তারা সারাক্ষণ সে চেষ্টা চালাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব এই বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টার অংশ হিসেবে আইএস জঙ্গি সৃষ্টি করেছে। আইএস জঙ্গিদের মধ্যপ্রাচ্যের যেসব আরব দেশ অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সমর্থন দিয়েছে তাদের অপরাধ অনেক বেশি। যেসব সন্ত্রাসী মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছে তাদের চেয়ে যারা তাদেরকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তাদের অপরাধ বহুগুণ বেশি। কাশ্মির থেকে লিবিয়া পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের যত সংকট আছে তার সব সংকটের সমাধান মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সম্ভব বলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মন্তব্য করেন।

[৮] খামেনেয়ী তার ভাষণে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, মার্কিন গণতন্ত্রকে যারা মডেল হিসেবে তুলে ধরে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন তিনি বলছেন, আমেরিকার ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি কারচুপির ফাঁদ আর কখনো তৈরি করা হয়নি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হবে বলে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন। আর নির্বাচনের অপর প্রার্থী বলছেন, ট্রাম্প বড় ধরনের কারচুপির চেষ্টা করছেন। এই হচ্ছে, মার্কিন গণতন্ত্রের উদাহরণ। খামেনেয়ী বলেন, যে ব্যক্তিই নির্বাচিত হোক না কেন তাতে আমেরিকা পতন ঠেকানো সম্ভব হবে না। আজ না হোক কাল আমেরিকার পতন হবেই। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, তার দেশের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকার শত্রুতা থেমে নেই। আমেরিকার কোনো সরকার আমাদেরকে সহযোগিতা করবে না। আমাদেরকে অভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালী হতে হবে। আমেরিকাকে হতাশ করে দিতে হবে। ইরানের জনগণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে। এজন্য তিনি ইরানি জনগণকে ধন্যবাদ জানান।

[৯] ভাষণের শেষাংশে তিনি নাগরনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যকার চলমান যুদ্ধের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এর অবসান দরকার। আজারবাইজানের যেসব ভূখণ্ড আর্মেনিয়া দখল করে নিয়েছে তা ছেড়ে দিতে হবে। এটি আজারবাইজানের অধিকার। সেইসঙ্গে এই ভূখণ্ডে যেসব আর্মেনীয় জনগোষ্ঠী বসবাস করেন তাদের অধিকারও সমুন্নত রাখতে হবে। এ ছাড়া, এই যুদ্ধের সুযোগে কেউ যদি ইরান সীমান্তে সন্ত্রাসীদের জড়ো করার চেষ্টা করে তাহলে সেসব সন্ত্রাসীকে কঠোর হাতে দমন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়