শিরোনাম
◈ প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা

প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৫৭ দুপুর
আপডেট : ০২ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৫৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তিতাস মাহমুদ: কাকে আমি দোষারোপ করবো জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, নাকি দৃষ্টিভঙ্গি?

তিতাস মাহমুদ: বাংলাদেশ ছেড়ে সর্বপ্রথম আমেরিকায় আমি ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেসোথো, কম্বোডিয়া, পর্তুগাল, ইয়েমেন, সেনেগালসহ পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, ছাত্রছাত্রী পড়তে আসে না। শিকাগো থেকে প্রায় ২৫০ মাইল পশ্চিমে চমৎকার সাজানো গোছানো বিশাল এক ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাসে পা রেখেই বুঝেছিলাম, বাংলাদেশে আমি নিতান্তই কুয়োর ব্যাঙ হয়ে ছিলাম।

বাংলাদেশে আমাদের সময়ে বিদেশি লোকজন খুব কম দেখা যেতো। রাস্তাঘাটে কদাচিৎ কোনো সাদা চামড়ার মানুষ দেখা গেলে, আমার স্পষ্ট মনে আছে, এক দঙ্গল মানুষ অবাক বিস্ময় নিয়ে তার পিছে পিছে হাঁটতো। পৃথিবীতে যে এতো ধরনের সংস্কৃতি, এতো রকমের পোশাক-আশাক, খাবার-দাবার আছে, দেশ ছেড়ে না এলে আমার জানা হতো না কোনোদিনও। আর পৃথিবীতে সর্বমোট কতো যে ভাষা আছে আমি সঠিক জানি না। আমি ভাষা বলতে, ‘বাংলা’কে মা বলে জানি। টুকটাক ইংরেজি পারি, বলিউডের কারণে খানিকটা হিন্দি বুঝি। আরবি ভাষায় কোরআন শরিফ পড়তে পারি, তবে সরাসরি অর্থ করতে পারি না।

কোরআন শরিফ একটি অসম্ভব শ্রদ্ধার গ্রন্থ। কোরআনের যথাযথ সম্মান দিতে গিয়েই বোধকরি তার অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তুর গভীরে আজও ঢোকা হলো না আমার। আরবি হচ্ছে কোরআনের হরফ। কোরআন মানে আরবিতে লিপিবদ্ধ করা মহান সৃষ্টিকর্তার অমূল্য বাণীসকল। আমাদের প্রিয় মহানবীর মাতৃভাষা হচ্ছে আরবি। সেই ছোটকাল থেকে যখন আরবি হরফে লেখা ছোট্ট, ছেঁড়া টুকরো কাগজ পেয়েছি, অসংখ্য চুমু দিয়েছি তাতে। সে কাগজটি আদর করে বুকে ছুঁইয়েছি বারবার। তারপর বুকসেলফে, সবার উপরের তাকে যত্ন করে কাগজটি তুলে রেখেছি।

একদিন ডিপার্টমেন্টের সামনে করিডোরে হাঁটছিলাম। আমার সাথে ছিল জর্ডানের এক বন্ধু। ওর নাম যাঈদ। হঠাৎ দেখি আমাদের পায়ের নিচে কয়েকটি ছেঁড়া বইয়ের পাতা। আরেকটু কাছে এসে মাথা নুইয়ে দেখি, ও মাবুদ রে, কাগজ দুটোতে আরবি হরফে কী যেন লেখা। আমি লাফ দিয়ে পা সরিয়ে দ্রুত কাগজ দুটো তুলে নিলাম। বারবার ফুঁ দিয়ে, ঝেরে মুছে, চুমু খেতে খেতে কাগজ দুটোকে আলতো ভাঁজ করে বুকের বামপকেটে রেখে দিলাম। যাঈদ আমার এসব দেখে একেবারে হতবাক। সে বললো, ‘আরে, আরে এমন করছো কেন? দেখি তো, কাগজগুলো কীসের?’ আমি বললাম, ‘এটা আল্লাহ সুবহানাতায়ালার ভাষা। এই ভাষায় কোরআন নাযিল হয়েছে। আরবি হরফে লেখা কোনো কাগজ পায়ের তলে মাটিতে গড়াগড়ি করলে খুব গুনাহ হয়।’

যাঈদ আরবি ভাষাভাষি ছেলে। সে কাগজগুলোতে চোখ বুলিয়ে বললো, ‘ওয়াসতাগফিরুল্লাহ, এগুলোতে যা লেখা আছে, তা পর্নোগ্রাফির চাইতেও খারাপ এবং নোংরা।’ আমি বললাম, ‘বলো কী?’ সে বললো, ‘আরবি হরফ মানেই কী পবিত্র একটা ব্যাপার? তোমাদের বাংলার মতো আরবি হরফেও মুখরোচক সংবাদ, পত্রপত্রিকা, মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব, ট্যাবলয়েডসহ নানাধরণের চটি বই ছাপানো হয়।’ সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম, আমার দৃষ্টিভঙ্গি, জ্ঞানের পরিধি, ভাবনার পরিসর, আমার চিন্তা চেতনার বিস্তৃতি, সবকিছু সত্যিই খুব সীমাবদ্ধ। আমার নিজেরই যখন এতোটা মূর্খতা, তখন শুধু লালমনিরহাট কেন, বাংলাদেশের কাকে আমি দোষারোপ করবো? ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়