মোঃতরিকুল ইসলাম তরুন: গরুর ছবি দেখে মনে হলো ১৯৯০ সালের এক পাকা জাতি গরু চোরের চিরকুটের কথা।তখন আমি ক্লাস নবম শ্রেনীতে পড়ি।বাবা তিনটি গরু পালন করতেন দুটি গাভী একটি ষাড়।মাঝে মাঝে একটি গাভী ও একটি ষাড় দিয়ে হাল চাষ করতেন।চাকুরী শেষ করে গ্রামের বাড়িতে এসে দাদার জমিজামা ভাগ করে নিজে যা ভাগে পেয়েছেন তা দেখাশুনার একজন লোক রাখলেন।লোকটি বড্ড চালাক ছিল। প্রায়ই কাজে ফাকি দিত।তখন বাবা নতুবা আমি কাজের লোকের কাজ গুলো করতে হতো।যাক যেই কথা নিয়ে লিখতে শুরু কাবিনে স্বামীর ভাত খাওয়ায় না--- তালা গরু রাখে না চিরকিটের কথা স্বরন হলো।
তখনকার সময় নবীনগরের ভিটি বিশাড়া,দামলা, গোলপুকুরিয়া,বাজে বিশাড়া,ডুবাচাইল,শাহপুর,কাগাতুয়া, পেরাকান্দি,মাঝিয়ারা, বানিয়াচং, দীর্ঘসাইল, শ্রিঘর, শ্যামকগ্রাম, নাছিরাবাদ, বাড্ডা,পাশ্ববর্তি থানা বাঞ্চারামপুরের বিভিন্ন গ্রামে অজস্রগরু পালন করতো।সন্ধ্যা হলেই গরু চোরদের উৎপাত বেড়ে যেত।প্রায় বাড়িতেই গরু চুরি হত।আমাদের পাশের থানা মুরাদ নগর আর ঐ থানায় দুটি গরু বিক্রির দুটি হাট বসতো একটি সপ্তাহে সোমবার কান্দা পিপুরিয়া,অন্যটি সপ্তাহে মঙ্গলবার টনকি গরুর বাজার।যাদের গরু চুরি হত তারা খুব ভোরে গরুর খোজে ঐ হাট গুলোতে আসতো।আবার কখনো গরুচোরের বাড়িতেও আস্তানা থাকতো।গরু সনাক্ত হলে বলতো গরু কিনে আনছি টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নাও।
যাই হোক আমাদের বাড়িতে একদিন বাড়ির উঃপ্রান্তে খেরকুটায় রাতে চোর এসে আগুন ধরিয়ে দেয় তখন মানুষ এখনকার মতো চালাক ছিলনা সবাই আগুনের লেলিহান দেখে যারযার ঘর ফেলে আগুন নেবাতে দৌড়ে আগুনের কাছে ব্যাস্ত। ঠিক ঐমুহুর্তে চোরেরা আমার গো ঘরে ঢুকে দুটি গরু বের করে নিয়ে যায়।হঠাৎ মা বললো আমাদের গরু গুলো দেখে আয়। গো ঘরে গিয়ে দেখি গরু নাই দুটি।সাথেসাথে হইহোল্লা করে পাচ বেটারী টচ লাইট মারতে মারতে এদেক সেদিক দৌড়াতে থাকি। হঠাৎ দেখি একটি গরু দাড়িয়ে আছে।কাছে গিয়ে দেখি গাভীটি আমাদের। ২০০ গজ দঃনে ষাড়টিও আছে চোর পালিয়ে গেছে।তখন শুনতাম চাচারা, জেঠারা বলতো এটা পাশের থানার মোন্না চোরার কাজ।যাক গরু পাইলাম সকালে শুনি গ্রামের বিভিন্নবাড়ি হতে প্রায় ৬ টি গরু চুরি হয়।তখন শুরুহলো সতর্কতা গরুর ঘরে তালা,গোরুর গলায় সিকল বেধে বাশের সাথে তালা,রাতে পাহাড়া দেওয়া।
সপ্তাহ না যেতে পাশের থানা বাঞ্চারামপুরের বাহেরচরের তোতামিয়ার হালের দুটি বলদ চুরি হয়।আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিঃমিঃপশ্চিমউঃরে। গরুগুলো একটি ঘরে তালা বদ্ধ ছিল।চোর তালা কেটে গরু গুলো বের করে একটি চিরকুট দরজায় সিকলের সাথে রেখে আসলো।সেই চিরকুটে লেখাছিল কাবিনে স্বামীর ভাত খাওয়ায় না সিকলে গরু রাখেনা।এই চিঠি ঐ রাতেই তোতা মিয়া পেয়েঘরে গরু না দেখে বিভিন্ন দিকে লোক পাঠায়।
তোতামিয়া আমাদের বাড়ির কাছে যখন আসে তখন রাত শেষ আযানের পূর্ব মুহুর্ত।তখন একলোক হালচাষ করার জন্য জমিতে গরুনিয়া আসে। তোতা মিয়ার সাথেঐলোকের দেখা।তোতামিয়া ঐ রাখলকে বললো ভাই আজ রাতে আমার দুটি গরু চুরি হয়েছে এদিক দিয়ে কোন গরু যেতে দেখেছেন? উত্তরেবললো
১৫/২০ মিঃআগে দেখিছি এদিক দিয়ে কয়েকজন লোক সাথে গরু নিয়া যেতে।
তখন ঐ রাস্তা দিয়া তোতা মিয়া দৌড়াতে থাকে।সকাল হয়ে বেলা ৯ টা গড়াল তোতামিয়া প্রায় ২৫ কিঃমিঃ রাস্তা দৌড়ালো কিন্তু সে ক্লান্ত হয়ে মুরাদনগর উপজেলার তেমুরিয়া প্রাঃস্কুলের পাশে বসে পড়লো।
মিনিট ১০ দশেক পড় আবার উঠল এদেক সেদিক তাকাতেই দেখে একটি বলদ দাড়িয়ে আছে আর একটি ক্লান্ত হয়ে হাটতে নারাজ।তখন তোতামিয়া গরুচোর গরুচোর ধর ধর বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে গরুর নিকট গেলে চোরেরা গরু ফেলে দৌড়াতে লাগলো।তখন তেমুরিয়া গ্রামের হাসেম
সওদাগর সহ অনেকে গরুচোরদের দৌড়ে ধরেফেলে।ঝাড়ুপেটা,লাঠিপেটাকরে জরিমানা করে ছেড়েদেয় হাসেম সওদাগর, গরুচোর চালান দেওয়া বা পুলিশের হাতে দিলে নাকি বেজাল আছে।তখন জানতে পাড়ি। গরুচোরের বাড়ি একজন মুরাদনগরের পেন্নই অন্যজন পাশের গ্রাম বরিচোরা।