ডেস্ক রিপোর্ট: দরিদ্র পরিবারে জন্ম নুর নাহারের (১৪)। অভাব-অনটনের কারণে বাবা-মা গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এ জন্য ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা তাকে নানার বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। এ বছর নুর নাহার অষ্টম শ্রেণিতে ছিল। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে স্কুলে সুনামও ছিল। তার চোখে-মুখে কৈশোরের দুরন্তপনা। এখনো বোঝা হয়নি বিয়ে কি। হঠাৎ করেই গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রবাস ফেরত ৩৫ বছর বয়সী রাজিব খানের সঙ্গে অপ্রাপ্ত বয়সে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে প্রবাসী হওয়ায় নুর নাহারের পরিবার লোভ সামলাতে না পেরে তার হাতে তুলে দেয় মেয়েকে।
অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় শারীরিক সম্পর্কের কারণে নুর নাহারের রক্তক্ষরণ হয়। তার পরও থামেনি স্বামী রাজিবের পাষবিকতা। একপর্যায়ে শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে নুর নাহারের। গত ২৪ অক্টোবর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মেধাবী এ কিশোরী।
নির্মম এ ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে প্রবাস ফেরত রাজিব খানের সঙ্গে একই উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের কলিয়া গ্রামের বাসিন্দা লাল খানের নাতনি কলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুর নাহারের বিয়ে হয়।
অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় বিয়ের পর থেকেই তার গোপনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়। একপর্যায়ে নুর নাহারের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করান। রক্তক্ষরণ হলেও তার স্বামীর পাশবিকতা বিন্দুমাত্র কমেনি। গত ২২ অক্টোবর তাকে টাঙ্গাইলের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে তার মৃত্যু হয়। পর দিন রবিবার ময়নাতদন্ত শেষে নানার বাড়ির তাকে দাফন করা হয়।
নুর নাহারের নানা লাল খান বলেন, মেয়েটি বিয়ের রাত থেকেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে জানিয়েছিল। এ জন্য নুর নাহারের শাশুড়ি তাকে কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ খাওয়াচ্ছিল। পরে রক্তক্ষরণ বেশি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার ডাক্তাররা বলেছেন, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেওয়ার কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মূলত স্বামীর কারণেই নুর নাহারের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তার।
বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজুর রহমান বলেন, নারীর প্রথম যৌন মিলনে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করে। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হলে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ জন্য দ্রুত গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল।
টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল মতিন বলেন, পুলিশ অভিযোগটি তদন্ত করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :