শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ০৮:১৪ সকাল
আপডেট : ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ০৮:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাঈদ তারেক: সিন্ডিকেটদের দৌরাত্ম ভাঙার উপায় কী!

সাঈদ তারেক: নানা কারণ এবং উৎপাতে টিভি টকশো এখন প্রায় দেখাই হয় না। এর মধ্যে বড় উৎপাতটা হচ্ছে ভার্চুয়াল এটেনডেন্স। করোনার অজুহাতে এখন টকাররা নাকি স্টুডিওতে যেতে চান না। বাসায় বসে যার যার মোবাইল ট্যাব ল্যাপটপ থেকে জুম বা কোন প্রযুক্তিতে সংযুক্ত হন। কানের সাথে তার ঝুলিয়ে যেন অন্তরীক্ষের উদ্দেশ্যে কথা বলেন। কখনো ছবি ঝাপসা বা ঝিরঝির। এই পরিষ্কার তো এই ফেটে গেলো। অডিও অস্পষ্ট। কখনো আইরনি বা মেটালিক। ইকো। একটা অতিশয় বিরক্তিকর ব্যাপার। সময় নষ্ট করে এই উপদ্রব সহ্য করার কোনো অর্থ হয় না। তার ওপর ইদানীং যেসব টকারকে আনা হচ্ছে এবং তারা যে মহা মহা মূল্যবান জ্ঞান বিতরণ করছেন ওসব শোনার চেয়ে ফেসবুকে ঢুকলে এদিকওদিক কিছু খবরাখবর পাওয়া যায়। যাদের কথা শোনা যেতো বা যুক্তিসঙ্গত মনে হতো এদের অনেককেই ইদানীং দেখা যায় না। হয় এদের কেউ কেউ নিজে থেকেই আসেন না অথবা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন। তারপরও হঠাৎ হঠাৎ দুই একজনের চেহারা দেখলে কিছুক্ষণ থামি।

তবে একটি পুরনো চ্যানেলে প্রতিদিন মধ্যরাতে বিভিন্ন সংবাদপত্রের শিরোনাম নিয়ে প্রচারিত একটি লাইভ অনুষ্ঠান নিয়মিত দেখার চেষ্টা করি। এখানে পরের দিনের আট দশটা দৈনিকের প্রধান প্রধান শিরোনামগুলো পড়ে শোনানো হয়, মোটামুটি প্রিন্ট মিডিয়ার চিত্রটা পেয়ে যাই। আগে আমার এক বন্ধু এটি উপস্থাপনা করতেন। বেশ কিছুদিন আর একজনকে দেখি, হয়তো উনি চ্যানেলেরই স্টাফ। অনেক কষ্ট করে ভুল বা অশুদ্ধ উচ্চারণ, মাঝেমাঝে ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে পড়া- এসব যাও সহ্য করি কিন্তু ইংরেজি শিরোনাম পড়ার সময় কানে আঙুল দিতে হয়। খুবই নিরেট একজন ভদ্রলোক। কিন্তু আমি নিশ্চিত স্কুলে ওনাকে দ্রুতপঠন বা শুদ্ধ উচ্চারণের পাঠ দেওয়া হয়নি! তবে অনএয়ারের আগে একটু রিয়ার্সাল করে নিলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

যাই হোক, ১৫/২০ মিনিটের এই অনুষ্ঠানে মতামত দেয়ার জন্য একজন করে ‘বিশেষজ্ঞ’ আনা হয়। প্রধানত হাতেগোনা কয়েকজন লোককেই ঘুরেফিরে দেখা যায়, যাদের অধিকাংশই চামচা, চাটুকার অন্ধ দলদাস। সবচেয়ে ফানি ব্যাপার হচ্ছে, এমনও দেখা গেছে যাকে আনা হয়েছে ভদ্রলোক হয়তো পেশায় ডাক্তার, তার কাছে বিশে^র তাবৎ সাবজেক্ট- রাজনীতি, অর্থনীতি, আমেরিকার নির্বাচন, তালেবান, খেলাধুলা, নারী নির্যাতন, রোহিঙ্গা সমস্যা, সিরিয়া সংকট বিষয়ে ‘বিশেষজ্ঞ মতামত’ জানতে চাওয়া হচ্ছে। যেন ওই হটসিটে বসামাত্র ভদ্রলোক সর্ববিষয়ে দিগ্গজ পন্ডিত হয়ে গেছেন! এই হাস্যকর অংশটুকু আর দেখা হয় না। তবে সেদিন অফট্র্যাকের একজন অতিথিকে দেখে রিমোটটা নামিয়ে রাখি। কারণ পেটেন্ট কয়েকজনের বাইরে এই লোককে সেদিন নতুন মনে হলো। ভদ্রলোক একজন পরিচিত ব্যবসায়ী নেতা। কথা বলতে শুরু করলে কিছুটা ভিন্নতার গন্ধ পাওয়া যায়। লাল্লুপাঞ্জু বা অন্ধ দলদাস টাইপের না। পুরোটা শুনি। তার দুটি পয়েন্ট আমার পছন্দ হয়।

তিনি প্রশ্ন রাখলেন চালসহ বিভিন্ন পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া নিয়ে আমরা যে এতো কথা বলি, কিন্তু এসব পণ্যের নির্ধারিত মূল্য কোনটা? বলা হয় চালের মূল্য বেড়েছে বা কমেছে, কোন মূল্য থেকে বাড়লো বা কমলো! চালের কোন মূল্য কি বেঁধে দেয়া আছে? যে দামে বিক্রি হয় তা নির্ধারণ করে কে বা কারা! বেশ যুৎসই লাগলো অবজার্ভেশনটি। আমাদের দেশে আবহমান কাল ধরে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে আসছে ব্যবসায়ী বা তাদের সিন্ডিকেটগুলো। সাধারণ নিয়মে যেটা হওয়া উচিত, শিল্প বা আমদানীকৃত পণ্যের উৎপাদন, ট্যাক্স ভ্যাট পরিবহন, ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছুতে মাঝখানের ফড়িয়া বা দালালদের কমিশন বা লাভ এবং মালিকের মুনাফার একটা হিসাব বের করে পণ্যের বিক্রয়মূল্য ঠিক করা। কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা। প্রান্তিক পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয়, পরিবহন, স্টোরেজ, কৃষকের মুনাফা, ট্যাক্স ভ্যাট এবং পাইকার ফড়িয়া বিভিন্ন পর্যায়ের বিক্রেতাদের লাভ ইত্যাদি যোগ করে ভোক্তা পর্যন্ত- যাকে বলা হয় খুচরা মূল্য, সেটা নির্ধারণ করা। এই কাজটা করার দায়িত্ব সরকারের। অথচ এটা করে থাকে ব্যবসায়ীরা। তারা ইচ্ছামতো লাভের অংক কষে। যদি সিন্ডিকেট না থাকতো বাজারে ‘বেশি বিক্রি কম লাভের’ একটা প্রতিযোগিতা থাকতো। তাতে ভোক্তা পর্যায়ে জিনিষের দাম কম হতো। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অতি চালাক। তারা জানে সিন্ডিকেট না থাকলে পাবলিকের ঘাড় মটাকানো যায় না। এ কারণে মূল্য কখনো কমে না। বরং নানা মওকায় বাড়িয়ে দেয়। একবার বেড়ে যে পর্যন্ত ওঠে সিন্ডিকেট চেষ্টা করে ওটাই স্থায়ী করে রাখতে। আর এভাবেই বাজারে প্রতিটা জিনিষের দাম সব সময়ই বাড়তির দিকে।

আমাদের দেশে বাজার ব্যবস্থাপনা বা পণ্যমূল্য নির্ধারণে সরকারের কোনো ভূমিকা বরাবরই অনুপস্থিত। অথচ টিসিবির প্রতিটা পণ্যের মূল্য যেভাবে বেঁধে দেয়া এবং সেই মূল্যে বিক্রয় নিশ্চিত করা হয় বাজারের সকল ভোগ্যপণ্যের দামও সরকারই নির্ধারণ করে দিতে পারে। তা না থাকায় হঠাৎ হঠাৎ আলু পেঁয়াজের মতো কোনো জিনিষের দাম বেড়ে গেলে সিপাই সান্ত্রী নিয়ে বাজারে বাজারে যে মোবাইল কোর্টগুলো পরিচালনা করা হয় জরিমানা করা হয় তার আইনগত ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। বলা হয় বেশি মূল্যে বিক্রি, তো সঠিক মূল্যটা কোনটা! চালের কথা ধরি। একমাত্র ওএমএসের চাল ছাড়া বাজারে প্রাপ্ত কাটারি পাইজাম ইরি নাজিরশাইল মিনিকাট ইত্যাদি নামে নানা জাতের যে চাল আছে কোনটার খুচরা মূল্য কি সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়া! সরকার যদি মূল্যই বেঁধে না দিয়ে থাকে তাহলে কিসের ভিত্তিতে বলা যাবে বেড়েছে বা কমেছে। একটা সূচক তো থাকতে হবে। যে সূচকটা আছে তা ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেওয়া। কাজেই হিসাবে বলে এটা বাড়বে কী কমবে, এটাও তাদের ব্যাপার। এখানে সরকার বাগড়া দেবে কোন যুক্তিতে!

হ্যাঁ, বলতে পারতো ধরতে পারতো মারতে পারতো যদি প্রতিটা জিনিষের দাম সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়া থাকতো। একটা জনকল্যাণধর্মী সরকারের এটাই কাজ। জনসাধারণ যাতে স্বল্প এবং নির্ধারিত মূল্যে জিনিষপত্র কিনতে পারে তা নিশ্চিত করা। টিসিবি একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। মূলত সিন্ডিকেটগুলোর দৌড়াত্মের রাশ টেনে ধরতে এই সংস্থাটি বেশিমূল্যে পণ্য কিনে কম মূল্যে বিক্রি করে। এতে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা গচ্চা। এর দরকার পড়ে না। যেহেতু এটিও একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার ভারও ব্যবসা বোঝে বা কোন ব্যবসা এক্সপার্টের হাতে থাকা উচিত। আমলা দিয়ে প্রশাসন চলে ব্যবসা চালানো যায় না। আমি ব্যবসায়ী নেতার এই অভিমতের সাথে একমত। টিসিবিকেই শক্তিশালী করে যদি তাদের ওপর পণ্যমূল্য নির্ধারণ এবং তা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া যায় তাতেও সিন্ডিকেটগুলোর রাম রাজত্ব কিছুটা ভাঙবে। মানুষ বাজারে গিয়ে কিছুটা স্বস্তি পাবে। জনগণের সরকার শুধু মুখে বললে হয় না, কিছু কাজের কাজ করে দেখাতে হয়। ফাঁকা আওয়াজ শুনতে শুনতে মানুষ এখন বিরক্ত! ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়