মারুফ কামাল খান: বরিস জনসন আসছে বসন্তেই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিতে পারেন বলে খবর বেরিয়েছে। সে দেশের হালকা চটুল ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘মিরর’ এ খবর দিয়েছে। মিরর তিলকে তাল করে। মানে ফেনায়িত করে রসালো সংবাদ পরিবেশন করায় পারদর্শী। তাই এ পত্রিকার ক্রেডিবিলিটি কম। সংবাদটির আরেকটি দুর্বল দিক হলো এর সোর্স। বরিসের টোরি পার্টির ক’জন এমপির বরাতে সংবাদটি পরিবেশিত হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কোনো মন্তব্য সংবাদে নেই। অর্থাৎ এটি ঠিকমতো যাচাই বা ক্রসচেক করা হয়নি। তাই খবরটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন। তবুও সংবাদটি নিয়ে সারা বিশে^ই তোলপাড় আলোচনা চলছে। কারণ একটি প্রভাবশালী দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদের সঙ্গে খবরটি জড়িত। দ্বিতীয়ত খবরটি বেশি আলোচিত হবার আরেকটি কারণ হচ্ছে, এই সম্ভাব্য পদত্যাগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মাইনের স্বল্পতার কথা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বছরে মাত্র দেড় লাখ পাউন্ড মাইনে পান। এই টাকার ওপর আবার ট্যাক্সও শোধ করতে হয় তাকে। এতো অল্প টাকায় তার সংসার চালানো দায়। খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হবার আগে তার আয়-রোজগার আরও অনেক বেশি ছিলো। বরিস জনসন অল্প বেতনের কারণে পদত্যাগ করুন আর নাই করুন, তার পদত্যাগের এ খবর সত্য কিংবা অতিরঞ্জিত যাই হোক না কেন, আলোচ্য সংবাদটিতে সঠিক কিছু তথ্যও কিন্তু দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই সব দেশে প্রধানমন্ত্রী পদে যারা আসীন হন তাদের অর্থনৈতিক সততা, ব্যক্তিগত সাধুতা, নৈতিক মানের দিকেও সবার নজর পড়েছে এই সংবাদ পড়ে।
দুনিয়ার অনেক দেশে প্রধানমন্ত্রীর বেতন-ভাতা ও বৈধ সুযোগ-সুবিধা কোনো ব্যাপারই নয়। এই ক্ষমতায় যাওয়া মানেই আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে যাওয়া। সেই চেরাগ ঘষলেই দানব এসে হাজির হয়ে যায়, কী চাই তা চোখের পলকে এনে দিতে। বড়ই দুঃখের কথা হচ্ছে, বরিসের হাতে সে সুযোগটা হয়তো নেই। কিংবা থাকলেও তা কাজে লাগাবার মানসিকতা নেই। আমাদের দেশে অনেক ছোট পদ-পদবি ও ক্ষমতা হাতে পেয়ে যারা হাজার হাজার কোটি টাকার স্তুপ দেশে কিংবা বিদেশে জমিয়েছেন, তারা এ খবর পড়ে বিস্মিত হবেন নিশ্চয়ই। প্রকাশিত সংবাদ থেকে বুঝা যাচ্ছে, ব্রিটেনের তুলনায় আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতন-ভাতা ও প্রাপ্ত অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পরিমাণ অনেক বেশি। আমার জানা মতে, এখন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী মাসে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা বেতন পান। রোজ ৩ হাজার টাকা করে ভাতা পান। বাড়ি-ভাড়া হিসেবে তার নামে মাসে বরাদ্দ থাকে লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী বিপুল অংকের ভ্রমণ ও পরিবহণ ভাতা পান এবং প্রতি মাসে পান দেড় কোটি টাকার স্বেচ্ছাধীন তহবিল। এর বাইরেও আছে বৈধ অনেক রকম পারিতোষিক এবং পোষ্যদের জন্য হরেক রকম সুবিধা। আর কেউ প্রধামন্ত্রীর ক্ষমতা-প্রভাবের অপব্যবহার করে কিছু করতে চাইলে তার পরিমাণের কোনো সীমা-পরিসীমাই থাকে না।
বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার মাত্রা ও পরিমাণ আরও অনেক কম ছিলো। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া বেতনের টাকাটা তিনি নিজের সংসারে ব্যয় না করে দুস্থ-এতিমদের জন্য খরচ করতেন। এখনকার ব্যাপারে আমার খুব একটা ভালো জানা নেই। মিররের সংবাদ থেকে আরও জানা গেলো যে, প্রধানমন্ত্রী হবার আগে পত্রিকায় কলাম লিখে অর্থাৎ সাংবাদিকতা করে তিনি মাসে রোজগার করতেন ২৩ হাজার পাউন্ড। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, বিলেতের সিনিয়র সাংবাদিকদের মাসিক আয় সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বেতনের চাইতে বেশি। এছাড়া ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাসভবনে ঢুকবার আগে মাসে দু’টো ভাষণ থেকে বরিস রোজগার করেছেন এক লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড। বক্তৃতা দিয়ে আয় করার ব্যাপার অবশ্য আমাদের দেশে কল্পনারও বাইরে। ৬ বাচ্চার বাবা বরিসের সন্তানদের পেছনে খরচ অনেক। ৬ মাস বয়সী একটা বাচ্চার ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যয় নির্বাহের জন্যও তাকে কিছু টাকা একটা একাউন্টে দিতে হয়। এছাড়া তার তালাকপ্রাপ্ত সাবেক স্ত্রীকে সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী বেশ মোটা অংকের টাকা নিয়মিত শোধ করতে হচ্ছে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :