শাহীন খন্দকার : [২] ঝড়-বৃষ্টি বাদলেও খেটে খাওয়া নারীরা পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে রাজধানীতে। তাদের ঝুঁকি শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি জীবন ধারণের। তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিটাও অন্যদের থেকে বেশি। কারণ তারা একদিকে থাকেন অস্বাস্থ্যকর, ঘিঞ্জি ও নোংরা পরিবেশে।
[৩] সেখানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে না। ছোট্ট একটি কামরায় সন্তান-স্বামী নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে করোনা মহামারীর কারণে নিম্ন আয়ের এ সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, তার থেকে বেশি উৎকণ্ঠিত ক্ষুধা নিবারণের জন্য। তাদের একটাই কথা- কাম না করলে খামু কেমনে? সন্তানরে কী খাওয়ামু?
[৪] কথা হয় শ্যামলী রিংরোডের ড্রেন নির্মাতা শ্রমিক রাহেলা (৫৫) তিনি বলেন, হামাগ পেটতো চালাইতে হইবো। রোজ কাম করি। রোজ কামাই আয়। ওই টাকা দিয়ে সংসার চালাই, পোলাপানরে নিয়া। কাম না করলে টাকা পামু কই। আমাগো খাওয়াইবো ক্যাডা। ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা। এমন আক্ষেপের কথা বললেন রাস্তা ও ড্রেন শ্রমিক নির্মাতা। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় বৃষ্টির মধ্যে কাজ না করলে পামুকৈ ?
[৫] চুনকুটিয়া পূর্ব আমিন পাড়ার তাসলিমা ও আন্না দুই বোন। দুজনেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বৃদ্ধ মায়ের কাছে সন্তান রেখে কাজে আসেন তারা। নাতিদের দেখাশোনা করতেন মা। যে আয় রোজগার হয় তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। এই বৃষ্টিতে ভিজি কাজ না করলে যে না খেয়ে থাকবে বৃদ্ধা মা ও সন্তানেরা।
[৬] তাসলিমা বলেন, এমন একটা অবস্থা আমাদের। সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য আসলেও, তা আমাদের ভাগ্যে জুটবে না। কারণ অনেকেই মনে করেন, যারা গরীব তারা তো ভালো আয় করেন। এক দিকে সরকার দেয় দানবীররা দেয় ,আসলে কি তাই ? উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আমাগোরে গতর যদি খাটাতে পারি পেটে ভাত তা অইলে না !
[৭] আমাগোরে দেহাইয়া অনুদান আহে তা নেতা আর রাজনীতি নেতাতের গাড়ী বাড়ি কেনার জনে ! মোগো লিগা কিছুই দেয় না বইলাতো বৃষ্টিতে ভিজি রোদে পুরি কাজ করলেই ভাত ,না হইলে পেটে হাত। তাসলিমা বলেন, হুনতাছি করোনার ঢেউ আইবো শীতে তখন যদি কাজ না থাকে কি খাইমু? তাই সরকার যদি আমাদের দিকে এখন না তাকায়, তাহলে আমাদেরকে অর্ধাহারে থাকতে হবে। বস্তিতে বস্তিতে নেমে আসবে দারিদ্রের কষাঘাত ।