ডেস্ক রিপোর্ট : ব্রাজিলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ট্রায়াল চলাকালীন এক স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যুর খবর সামনে এল। টিকার ডোজের কারণেই মৃত্যু হয়েছে কিনা সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ট্রায়াল পর্ব চলার সময়েই ওই স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু হওয়ায় ফের বড় ধাক্কার মুখোমুখি ব্রিটিশ সুইডিশ ফার্ম। যদিও ব্রাজিলের হেল্থ রেগুলেটরি কমিটি জানিয়েছে, টিকার ট্রায়াল এখনই বন্ধ হবে না। দ্য ওয়াল
সাও পাওলোতে তৃতীয় পর্বের বৃহত্তর ট্রায়াল করছে অ্যাস্ট্রজেনেকা। কয়েক হাজার জনকে টিকার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। দেশের বাইরে ব্রাজিলে গত তিনমাসের বেশি অক্সফোর্ডের টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও স্বেচ্ছাসেবকের অসুস্থ হয়ে পড়া বা জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর সামনে আসেনি। ব্রাজিল সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ব্রাজিলের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার রিও ডি জেনিরোর ফিওক্রুজ ব্রিটেনের ভ্যাকসিন কেনার জন্য প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। সরকারি সহযোগিতায় অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার বিপুল পরিমাণ ডোজ কেনার কথাবার্তা চলছিল। এই ঘটনার পরে সেই চুক্তি এগোবে কিনা সে নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ব্রাজিলে অক্সফোর্ড টিকার সঙ্গে জোরদার প্রতিযোগিতা রয়েছে চিনের সিনোভ্যাকের টিকার। অ্যাস্ট্রজেনেকা এবং সিনোভ্যাক দুই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিই সাও পাওলোতে টিকার চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল করছে। সূত্রের খবর, অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যুর খবর সামনে আসার পরে সংস্থার শেয়ারও পড়ে গেছে অনেকটাই।
গত মাসেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকায় এক স্বেচ্ছাসেবকের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর সামনে আসায় হূলস্থূল শুরু হয়ে গিয়েছিল। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকাতেই এতদিন বেশি ভরসা রেখেছিল বিশ্ববাসী। সেখানে টিকার ডোজের এমন গলদ সামনে আসায় স্বভাবতই চিন্তা বাড়ে। তার উপর জানা যায় টিকার ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরেই এক মহিলা স্বেচ্ছাসেবকের অজানা রোগ দেখা দিয়েছে। উদ্বেগ আরও বাড়ে। সুরক্ষার জন্য টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় অ্যাস্ট্রজেনেকা।
কী ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন মহিলা সেটা প্রথমে জানায়নি ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম। পরে তারা বিবৃতি দিয়ে জানায়, স্নায়ুর রোগ ধরা পড়েছে মহিলার শরীরে। সম্ভবত ট্রান্সভার্স মায়েলিটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। শিরদাঁড়া ও পেশীতে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল মহিলার। তবে অক্সফোর্ডের ভাইরোলজিস্টদের দাবি ছিল, ট্রান্সভার্স মায়েলিটিস রোগে শিরদাঁড়ার দু’পাশে যন্ত্রণা হয় রোগীর। স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ুতে তীব্র প্রদাহ শুরু হয়। অনেক সময় এই রোগে স্নায়ুর আর বার্তা আদানপ্রদান করতে পারে না। মস্তিষ্কে সঙ্কেত পাঠাতেও পারে না। ফলে স্পর্শের অনুভূতি চলে যাওয়া, প্যারালাইসিস, পেশীর ব্যথা, পেশীর খিঁচুনি, ব্লাডার এবং বাওয়েল সিনড্রোমও দেখা দেয় রোগীর। এই ধরনের স্নায়বিক রোগ টিকার ডোজে হওয়া সম্ভব নয়। অক্সফোর্ডের দাবি, সম্ভবত মহিলার শরীরে আগে থেকেই কোনও ক্রনিক রোগ ছিল যার প্রতিক্রিয়ায় এমন হয়েছে অথবা অন্য কারণ রয়েছে যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে টিকার সেফটি ট্রায়ালের ডেটা ভ্যাকসিন রেগুলেটরি কমিটিতে পাশ হয়ে যাওয়ায় ফের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে যায়। ব্রাজিলের ঘটনায় ফের বড় সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে অ্যাস্ট্রজেনেকা, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :