শিরোনাম
◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট

প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর, ২০২০, ০৫:৪২ সকাল
আপডেট : ২০ অক্টোবর, ২০২০, ০৫:৪২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী: মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়

দীপক চৌধুরী: দেশের আনাচে কানাচের তৃণমূল নেতাকর্মীদের তালিকা করে তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া দরকার। এই মর্যাদা বা সম্মান অর্থকড়ি নয়, শুধু ভালোবাসা। তাদের মুখ থেকে সমস্যা আবিষ্কার করা ও প্রয়োজনীয় সমাধান তাদের কাছ থেকে শোনা গেলে তৃণমূল নিয়ে অসন্তোষ অনেক হ্রাস পাবে। তৃণমূলে দলে, অঙ্গসংগঠনে যারা অনুপ্রবেশ করেছে তাদের চিহ্নিত করে এখনই কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কেন, কীভাবে অনুপ্রবেশকারীরা দলে ঢোকার সুযোগ পেল এটা জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের নেতারাই কেবল জানেন। জনবান্ধব সরকারের জানা থাকা দরকার, তৃণমূলে একশ্রেণির নেতা ভয়ঙ্কর নানা অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তারা অর্থ, ক্ষমতা আর শক্তিমত্তা দেখাচ্ছে। এদের সংখ্যা বেশি নয়। সুতরাং এখনই কঠিন ব্যবস্থা জরুরি।

কৃষিবান্ধব সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে পিআইসি নিয়ে করা দুর্নীতিবাজদের কড়া জবাব পেতে হবে। পিআইসির নীতিমালাগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে- এক ছটাক জমিও হাওরে নেই তারা কীভাবে পিআইসি পায় তাতো দেখা ও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সবকিছুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করতে হবে বা দেখতে হবে কেন? কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক একজন গুণী মানুষ। তিনি নিজেও কৃষিবিদ। সুতরাং কৃষকদের এ বিষয়টি সম্পর্কে গুরুত্ব দেওয়ার প্রথম অধিকার তাঁর। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাজ সবচেয়ে বেশি এখন। কয়েকদফা বন্যায় দেশের বারোটা বেজে গেছে। এতোকিছু হওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি খোঁজ রাখছেন কৃষকদের।

এখন আলু নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে চলেছে দেশে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কেজি প্রতি আলু ২৫ টাকায় বিক্রি করবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রোববার কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন, আলুর পাইকারি বিক্রেতা, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় এ তথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কিন্তু মিটিংয়ের রেজাল্ট কী। বাজারের অবস্থাটা কী? বাজারে এর দাম কমছেই না। অথচ আমাদের নাকি গত মৌসুমে এক কোটি ৯ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। আর দেশের বাৎসরিক চাহিদা সাতাত্তর লক্ষ মেট্রিক টনের কিছু বেশি। তাহলে বাকি ৩১ লাখ মেট্রিক টন আলু গেলো কোথায়? তবে কী শেষ পর্যন্ত সর্বনাশা পচা আলু পানিতে ফেলার উপায় হবে। পেঁয়াজ পচিয়ে শেষতক পানিতে ফেলার অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। তবু মানুষকে খেতে দেইনি। আলু নিয়েও এটা নাকি পরিকল্পিত কাজ। কারণ, নতুন আলু বাজারে মিলবে চল্লিশ দিন পর। আসল রহস্য কী তবে সিন্ডিকেট? সরকার বড় না সিন্ডিকেটের ক্ষমতা বেশি-এ প্রশ্ন তুলছেন ক্রেতারা, খুচরা ব্যবসায়ীরা। উত্তর নেই যেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এ মৌসুমে একজন চাষির প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ ধরে এক কেজি আলু হিমাগার পর্যন্ত সংরক্ষণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২১ টাকা। হিসাব মিলে না কেন? আলুর দাম কমে না কেন? খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এটা নিয়ে নাকি সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সরকারি সংস্থাটি চিঠি দিয়েছে গত বুধবার। এতে বলা হয়, দেশে আলুর পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা বিক্রি করতে হবে। পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা আর হিমাগার পর্যায়ে কেজি ২৩ টাকা বিক্রি করতে হবে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে হিমাগার, পাইকারি বিক্রেতা এবং ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতাসহ তিন পক্ষই যাতে সবজিটি বিক্রয় করেন সেজন্য কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে ডিসিদের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে। অথচ কোনো পরিবর্তন নেই। সুতরাং এই দায় সরকার এড়াতে পারে কিনা তা বিবেচনা করা দরকার। সম্প্রতি খুচরা বাজারে কেজি প্রতি আলুর দাম ৫০-৫৫ টাকায় গিয়ে ঠেকে। আকস্মিক এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি বিক্রেতাদের আর পাইকারি বিক্রেতারা হিমাগার মালিকদের দুষছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশকে অস্থিতিশীল করতেই নানারকম অপতৎপরতা বিদ্যমান। কখনো লবনের দাম বাড়িয়ে, পেঁয়াজ-আলু-চাল। গণপিটুনি-রাহাজানি-ধর্ষণ। ‘ছেলেধরা’ গুজবকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছিল মানুষ। এটি রোমহর্ষক অপরাধ ছিল। এর মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় একটি অশুভ মহল। এদের লক্ষ্য অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শেখ হাসিনাকে বেকায়দায় ফেলা। এ কারণেই ‘পদ্মাসেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ বলে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হয়। তার পরই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং নিরীহ মানুষ হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছিল। অতীতে বহুবার এই সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, যারা বেআইনীপথে ক্ষমতার স্বাদ পেতে চায়, জঙ্গি উত্থানে বিশ্বাস করে তারাই গুজব ছড়াচ্ছে। পেঁয়াজ, লবন, চাল নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়েছিল অতীতে। গুজব শেষ নয়, নানারকম মিথ্যা তথ্য ও গুজব সৃষ্টি করতে তারা দাঁড়িয়ে আছে।

তরুণীকে তুলে নিয়ে এমসি ( মুরারিচাঁদ কলেজ) কলেজ ছাত্রাবাসে ‘ছাত্রলীগের কক্ষের’ সামনে গণধর্ষণের ঘটনায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। অবশেষে সকল আসামি গ্রেপ্তারের পর এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। সিলেটে এমসি কলেজে ( মুরারি চাঁদ কলেজ) তরুণি ধর্ষণের ঘটনার চব্বিশ ঘন্টার ভেতর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধর্ষণের অভিযোগ থাকা যুবকদের যে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলো এবং পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে গেলো এ ব্যাপারে একবিন্দু কথাও নেই আমাদের। র‌্যাব-পুলিশের যোগ্যতা, মেধা এবং দক্ষতাও যে আছে এসবের কথা স্বীকার করতেই চাই না যেন আমরা। এত কম সময়ে ধর্ষণকারী গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে এটা বিশ্বাসযোগ্য ছিল কী? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। অবশ্যই স্বীকার করি, নারীধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা রাজনীতির বিষাক্ত ক্ষত। কিন্তু এই ক্ষত সৃষ্টিকারীদের আমরা দায়ী করি না কেন? পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়েই দেখি না সমস্যা কোথায়!

অতীতে বারবার দেখেছি, যে আঙ্গিকে গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, তাতে বোঝা যায় একটি মহলের দুরভিসন্ধি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ৭৫-পরবর্তী সময়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে, গুজব ছড়িয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে-এমন গুজব ছড়িয়েও তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। ওই মহলটি সব দিক দিয়ে পরাজিত হয়ে এখন দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়। এটা প্রমাণিত যে, পরিকল্পিতভাবে দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে গুজব ছড়ানো হয়েছে ও হচ্ছে। দেশের অগ্রগতি রুখতে স্বার্থান্বেষী মহল তৎপরতা চালাচ্ছে। সব আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর এই সহজ পথটি অর্থাৎ ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুজব ছড়ানোর পথ বেছে নিয়েছে।

যারা গুজবের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, ইচ্ছেমতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম হাঁকিয়ে খেলা বসাচ্ছে ওরা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তাদের দলীয়ভাবে প্রতিরোধ করতে দলের নেতাকর্মীদের দরকার। তবে দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী থাকলে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পরিণতি ভয়াবহ করে তুলবে। এজন্যেই আগে প্রয়োজন আগাছা তুলে ফেলা।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়