শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর, ২০২০, ০২:৪৩ রাত
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০২০, ০২:৪৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী: ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে, শেখ হাসিনা অনেক কিছুই ভেবেছেন, গেছেন গভীরে

দীপক চৌধুরী: ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে সারা দেশে চলতে থাকা বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, ধর্ষণের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। আমরা তৃপ্তি পেয়েছি এই ভেবে যে, এবার একটা কঠিন শাস্তির কারণে ভয়ংকর অপরাধের আগে ধর্ষকেরা চিন্তা করবে। গলায় মৃত্যুদণ্ডের বোঝা নিয়ে এমন অপরাধ দুর্বৃত্তরা করবার সাহস পাবে না। আন্দোলনকারীদের বড় অংশের দাবির মুখে সরকার এখন বলছে, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এটি আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে পরিষ্কার করা হবে। কেবিনেট ডিভিশনের একজন কর্মকর্তা জানালেন, ‘বলা যায় ধর্ষণের শাস্তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে।’

নারীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় সরকার পর্যন্ত বিব্রত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটা নিয়ে নানারকম সভা-সমাবেশ হচ্ছে। নারী নির্যাতন আর ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন, কৌতূহল বেড়েছে মানুষের। হচ্ছেটা কী? শেষ পর্যন্ত কী হচ্ছে। ক্ষোভ-মিছিল, সমাবেশ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি প্রায় হরহামেশার ব্যাপার। ধর্ষণের মৃত্যুদণ্ড শাস্তি চেয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করার বদলে সরকার পতনের ডাক দিচ্ছেন কেউ কেউ। ভাবটা এমন যে, সরকার ধর্ষণ করাচ্ছে! খুবই হাস্যকর। ধর্ষণের কঠিন শাস্তি চাইছে একশ্রেণির মানুষ।

সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জনগণের কাছ থেকেই তো দাবিটা উঠেছে। এখন এটাকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। এই দাবিটা বিবেচনা করব। তার কারণ হচ্ছে, আমরা ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য যা যা করণীয়, সেটা করার চেষ্টা করব।’

তবে এটাও আমরা অনুমান করতে পারি, ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর ওপর পারিবারিক ও সামাজিক চাপ আসবে স্থানীয়ভাবে সমাধানের। নতুন একটা সমস্যা সৃষ্টি হবে সমাজে। কারণ, দড়িতে ফাঁসিতে ঝুলবার মতো বা মাথা ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো বুকের পাটা ধর্ষকদের নেই। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি কয়েকদিন ধরেই চলে আসছে। হঠাৎ করেই এর আবির্ভাব। সিলেটে গৃহবধূকে ধর্ষণ এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একজন নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সম্প্রতি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে।
ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাই সবচেয়ে কঠোর ও বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত দেন। এটা হয়তো এখন অনেকের পছন্দ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো অতীতে কেউ রাজনীতি ও সমাজ-বাস্তবতায় এভাবে এই স্পর্শকাতর বিষয়টির বিচার করেনি, ভাবেওনি। সচিব পদমর্যাদার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বললেন, ‘ভাইরে, ধর্ষক পুরুষকে মৃত্যুদণ্ড দিলেই সমাজ থেকে ধর্ষণ চলে যাবে এমন সহজ সরল সমীকরণ করা ঠিক হবে না। শেখ হাসিনা অনেক কিছুই ভেবেছেন, গেছেন গভীরে। তিনি দার্শনিক। তিনিই যুক্তিসংগত আইন করেছেন। কারণ, তিনি তো বঙ্গবন্ধুকন্যা, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে।’

বাংলাদেশে ধর্ষণের বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০৩ (সংশোধিত) অনুযায়ী। এ আইনে ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। ধর্ষণের কারণে কারও মৃত্যু হলে কিংবা গণধর্ষণে সম্পৃক্ত হলে প্রত্যেকের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রথম আইনটি ছিল, নারী নির্যাতন (নিবর্তক শাস্তি) অধ্যাদেশ, ১৯৮৩। ১৯৯৫ ও ২০০০ সালে নতুন আইন আসে। সবশেষ সংশোধনী আসে ২০০৩ সালে। সব আইনেই ধর্ষণের শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কয়েকদিন ধরে যা দেখছি তা চিন্তার বিষয়। ঘটনার গভীরে যাওয়া দরকার। চলমান আন্দোলনে ছাত্র-শিক্ষক-সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও এর সহযোগী ছাত্রসংগঠনগুলো মনে করছে, বিদ্যমান আইনে কঠোর শাস্তির অভাবে ধর্ষণের বিচার হচ্ছে না। আবার পুলিশের একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা মনে করেন, ‘যদি দু-একবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হবে। আর ধর্ষণে জড়াবে না। বিদ্যমান আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও সাজা হচ্ছে খুবই কমসংখ্যক অপরাধীর। অনেক ক্ষেত্রে অল্প কদিন পরেই আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।’

আমি বলতে চাই, যারা এসব বিষয়ে কর্ম করবেন, আইনকে সহযোগিতা করবেন, তারা শতবাগ শুদ্ধ কিনা কে বলবেন? সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতির সঙ্গে কিছু লোক জড়িয়ে আছে। আগে এখানে শুদ্ধিকরণ দরকার। অনেকে বলছেন, ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড হলে ধর্ষণের পর ভিকটিমকে (ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশু) হত্যার প্রবণতা বাড়বে। বেশির ভাগ সময় ধর্ষণের শিকার এবং ধর্ষক পরস্পরের পরিচিত হয়ে থাকেন, বিশেষ করে শিশুদের বেলায়। এতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। এ সমস্যা নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি করবে। ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট ইতিমধ্যে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। জোট দাবি করছে, সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকেরা যেন সুবিবেচনা প্রয়োগ করতে পারেন, আইনে সেই ব্যবস্থার বিধান রাখতে হবে।

ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটের সদস্যরা হলো আইন ও সালিশ কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), উইক্যান, উইমেন ফর উইমেন, একশনএইড, অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন, ওয়াইডব্লিউসিএ, কেয়ার বাংলাদেশ, জাস্টিস ফর অল নাউ, ডব্লিউডিডিএফ, নারীপক্ষ, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ব্র্যাক, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট (ব্লাস্ট)।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়