শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১০ অক্টোবর, ২০২০, ০৯:৫০ সকাল
আপডেট : ১০ অক্টোবর, ২০২০, ০৯:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রভাষ আমিন: আমি চাই সকল ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ন্যায্য বিচার

প্রভাষ আমিন: চুন খেয়ে আমার মুখ পুড়ে আছে, এখন দই দেখলেও ভয় লাগে। বিক্ষুব্ধদের শান্ত করতে আপাতত হয়তো দাবি মেনে নেওয়া হবে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তিও হয়তো মৃত্যুদণ্ড করা হবে, আশ্বাস মিলবে দ্রুত বিচারেরও। কিন্তু আমার শঙ্কা হলো বিচার আদৌ হবে তো? দেশজুড়ে অসাধারণ একটা আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনে কোনো রাজনীতি নেই, কিন্তু ন্যায্য দাবি আছে। আছে নারীদের জন্য একটা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার প্রবল আকাক্সক্ষা। এই আন্দোলনের মূল দাবি, ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির দণ্ড নিশ্চিত এবং তা দ্রুত কার্যকর করা। এখন পর্যন্ত এই দাবির সাথে দ্বিমত করার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে আইনমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী-সবাই এই দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রী ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে দ্রুত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব উঠছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আমারও ধারণা সরকার দ্রুতই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। ইতোমধ্যেই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় আসামিদের প্রায় সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে হিসাবে বলা যায়, আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, আন্দোলনটি শুধু একটি ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার জন্য নয়।

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশকে আরো মানবিক, নারীর জন্য নিরাপদ করাই যেন হয় আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। তবে চুন খেয়ে আমার মুখ পুড়ে আছে, এখন দই দেখলেও ভয় লাগে। বিক্ষুব্ধদের শান্ত করতে আপাতত হয়তো দাবি মেনে নেওয়া হবে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তিও হয়তো মৃত্যুদণ্ড করা হবে, আশ্বাস মিলবে দ্রুত বিচারেরও। কিন্তু আমার শঙ্কা হলো বিচার আদৌ হবে তো? তবে এ শঙ্কা প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলার আগে আমার ছোট্ট একটা কৌতুহল। ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা কী হওয়া উচিত, এটা যদি আমাদের বাচ্চা-বাচ্চা ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারে, আমাদের আইনমন্ত্রী বা নীতিনির্ধারকরা এতদিন বোঝেননি কেন। দাবিটি যদি আপনার কাছে এখন ন্যায্য মনে হয়, তাহলে এতদিন সেটা আইনে অন্তর্ভুক্ত করেননি কেন? ন্যায্য দাবি আদায় করতে রাস্তায় নামতে হবে কেন। আপনারা আমাদের চেয়ে বেশি বোঝেন বলেই তো আপনারা মন্ত্রী, আপনারা দেশ চালাচ্ছেন। এখন যদি প্রমাণ হয়, এই বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা ন্যায্যতাটা আপনাদের চেয়ে ভালো বোঝে, তাহলে আর আপনাদের দরকার কী। ঠিকমতো চাপ দিতে পারলে আপনারা সব দাবিই মেনে নেন। নইলে কি বসে বসে আঙ্গুল চোষেন! এমনও না যে আইনটি অনেক পুরানো। বর্তমানে কার্যকর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি ২০০০ সালের। মাত্র ২০ বছরের পুরানো একটি আইন যদি তরুণদের রাস্তায় আন্দোলন করে বদলাতে হয়, তাহলে আমাদের আইনপ্রণেতাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। তবে আমার কাছে মনে হয়, কঠোর আইনের চেয়ে বিচার নিশ্চিত করাটা অনেক বেশি জরুরি। সাজা ফাঁসি না যাবজ্জীবন-তারচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো অপরাধী ধরা পড়ল তো, তদন্ত ঠিকমত হলো তো, অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হলো তো, রায়টা কার্যকর হলো তো?

এখানে আমার শঙ্কার পাহাড়। আমি চাই সকল ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ন্যায্য বিচার। কিন্তু প্রথম কথা হলো, ধর্ষণের কয়টি ঘটনা থানা-পুলিশ পর্যন্ত যায়। আমার ধারণা বিশ্বের আরো অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অধিকাংশ ঘটনা আলোর মুখ দেখে না। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে হ্যাশট্যাগ মিটু আন্দোলনে ঝলমলে গ্ল্যামার জগতের অনেক পুরানো অন্ধকারে আলো পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন হাজারো, লাখো যৌননির্যাতন বা ধর্ষণের খবর চির অন্ধকারে হারিয়ে যায়। প্রথম কথা হলো কন্যাশিশুরা থাকে সবচেয়ে ঝুঁকিতে। আসলে কাউকেই বিশ্বাস করা উচিত নয়। সবার কাছ থেকেই আপনার কন্যাকে আপনার বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মামা, খালু, ফুপা, কাজিন, দাদা, নানা- কে যে কখন সুযোগ বুঝে নিপীড়ক হয়ে উঠবেন, ধর্ষক হয়ে উঠবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই মেয়েকে সবসময় চোখে চোখে রাখবেন। অথচ বাংলাদেশে হয় উল্টোটা। কোনো কন্যাশিশু বয়স্ক কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে মা-বাবা তাকে অবিশ্বাস করেন, বকা দেন, মারধোর করেন। আর একটু বড় হয়ে ধর্ষণের শিকার হলে নারী প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বাড়ি ফিরে দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করে শরীর থেকে ‘কলঙ্ক’ চিহ্ন মুছে ফেলতে চান, একই সঙ্গে ধুয়ে ফেলেন ধর্ষণের সব প্রমাণও। সন্তানের ধর্ষণের খবর শোনার পর বাবা-মার প্রথম প্রতিক্রিয়া হয়, আর কেউ দেখেনি তো, কেউ জানে না তো, কাউকে বলিস না, চেপে যা। তাদের ভাবনা হলো, জানাজানি হলে মেয়ের বিয়ে হবে না। এই সুযোগটাই নেয় দুর্বৃত্তরা। যদি কোনোভাবে জানাজানি হয়ে যায়, স্থানীয় মাতব্বররা বসে সমঝোতা করে দেন। সবচেয়ে প্রচলিত ‘ন্যায্য বিচার’ হলো ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে। অথবা কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া। আর যদি ধর্ষণের শিকার নারী সাহস করে থানা-পুলিশ পর্যন্ত যান, তাহলে শুরু হয় লাঞ্ছনার দীর্ঘ যন্ত্রণাময় দ্বিতীয় অধ্যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়