স্বপন দেব: [২] করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখার পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। দীর্ঘ প্রায় আট মাস ধরে প্রকৃতি প্রেমিদের আনাগোনা নেই এ জেলার পর্যটন এলাকাগুলোতে। ফলে এ ব্যবসার সাথে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে চরম দূর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
[৩] রিসোর্ট ও কটেজ মালিকসহ পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনে দেওলিয়া হয়ে পড়েছেন।
[৪] করোনা মহামারীর সময়ে চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও বড়লেখার পর্যটন সংশ্লিষ্ট হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ থাকায় এথেকে আয়ের বদলে উল্টো দেখভালে খরচ হচ্ছে বিশাল অঙ্কের টাকা। যেসব রিসোর্ট মালিকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হোটেল-রিসোর্ট বানিয়েছেন তারা এখন ব্যাংক কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে আবার বেতন দিতে না পেরে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ছাঁটাই করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় হোটেল-রিসোর্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়ার দাবি করছেন।
[৫] প্রাণঘাতি করোনার সংক্রমণ রোধের জন্য চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে সরকারের নির্দেশে জেলা প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য জেলার সব হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ করার নির্দেশনা দেন। পরে সেপ্টেম্বর মাসের শেষে দিকে স্থানীয় প্রশাসনের দিক নির্দেশনা মেনে হোটেল-রিসোর্টগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে কক্ষ ভাড়া দেয়া শুরু হয়। কিন্তু এ সময় পর্যটক কম আসায় হোটেল-রিসোর্ট ভাড়া দিতে পারছেন না মালিক পক্ষ।
[৬] হোটেল-রিসোটের্র মালিকরা জানান, ‘ করোনার কারণে সরকারের নির্দেশে দীর্ঘ পাঁচ মাস রিসোর্ট বন্ধ রেখেছি। সেই সময় থেকে আমাদের কোনো আয় হয়নি। অথচ রিসোর্ট পরিচালনার খরচ বন্ধ ছিলনা। কিন্তু ব্যাংকের সুদ, কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল আমাদের দিতে হয়েছে। অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।’
[৭] জেলার পর্যটনসেবা সংস্থার সদস্য ও শ্রীমঙ্গলের গ্রীণ লিফ হোটেল অ্যান্ড ইকো ট্যুরিজমের মালিক এস কে দাশ বলেন, ‘আমাদের মতো অনেক মালিক কষ্ট করে হোটেল-রিসোর্ট বানিয়েছেন। তাদের ব্যাংক ঋণ রয়েছে। কিন্তু ব্যবসা বন্ধ থাকলেও ব্যাংকের সুদ গুণতে হচ্ছে, রয়েছে অন্যান্য খরচ। আমরা পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। বর্তমান দূর্যোগে সরকার থেকে আমরা কোন সহায়তা পাইনি।’
[৮] সংস্থার আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক মুসা বলেন, ‘করোনার আগে শুধুমাত্র শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টের ভাড়া থেকে আয় হতো দৈনিক প্রায় কোটি টাকা। কিন্তু গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সব হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন এসব হোটেল মালিকদের অনেক টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। সরকারি সহায়তা না পেলে এই পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। অনেকে দেওলিয়া হয়ে যাবেন, আবার কাউকে পেশা বদল করে বেঁচে থাকার পথ খোঁজতে হবে। অন্যান্য খাতের মতো সরকার যদি পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় তবে দ্রুত এ শিল্পের জন্য প্রণোদনা দিয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে।’ সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :