আনিস তপন : [২] বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।
[৩] বজ্রপাত নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর ২০০-২৫০ জন মানুষ এ কারণে মৃত্যু বরণ করে। যার অধিকাংশই হাওর অঞ্চলে। এজন্য বজ্রপাত পূর্বাভাস কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন অবকাঠামোর কাজ চলছে। যন্ত্রপাতি স্থাপনওে পর ৪০ মিনিট আগে সংকেত দেওয়া হবে। সংকেত দেওয়ার পর মানুষরা যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে সেজন্য বজ্রপাত প্রবণ এলাকাগুলোতে একতলা বিশিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও লাইটেনিং অ্যারেস্টার বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
[৪] ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগে উদ্ধারকাজের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্ভাব্য ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূমিকম্প সহনীয় রাষ্ট্র গঠন করতে ইতোমধ্যে কয়েক দফা আলোচনার পর তিন ধাপে জাপানের পরামর্শে ৫০ বছরের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। কারণ জাপান একটি ভূমিকম্প প্রবণ রাষ্ট্র। কিন্তু এখন সেখানে ভূমিকম্পে কোনো ভবন ধসের খবরর পাওয়া যায় না। সেখানে প্রতিটি ভবন ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা হচ্ছে। জাপানে ১০ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পেও ৭০ তলা ভবন টিকে আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে জাপান বাংলাদেশের সব স্থাপনা ভূমিকম্প সহনীয় করতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে।
[৫] ডা. এনামুর রহমান বলেন, প্রথম ধাপে পুরান ঢাকার মতো দেশের যেসব জায়গায় অবকাঠামো আছে, সেগুলোকে ডিমোলিশ করা হবে এবং সেখানে নতুন ডিজাইন করে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করে উপকারভোগীদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে হাইরাইজ ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেসব ভূমিকম্প সহনীয় না হলে রেট্রোফিটিংয়ের মাধ্যমে এগুলো শক্তিশালী করা হবে। তৃতীয় ধাপে জাপান বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ার এবং আর্কিটেকদের প্রশিক্ষণ দেবেন, যাতে ১০ রিখটার স্কেলকে ল্যান্ডমার্ক ধরে নতুন যে ভবন হবে সেগুলো যাতে ডিজাইন করা হবে। এজন্য সমীক্ষা শেষে জাপানের সঙ্গে আর্থিক ও কারিগরি বিষয়ে চুক্তি করে কাজ শুরু হবে।
[৬] তাছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে একটি কাঠামোর মধ্যে আসতে স্থায়ী কার্যাদেশ সংশোধন করছে মন্ত্রণালয়। এটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে কোথাও কোনো দুর্যোগ এলে কোথায় কখন প্রথম সাড়া দেবে তা উল্লেখ আছে। ফলে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছাড়াই উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয়ভাবে দুর্যোগ মনিটরিং করার জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সেন্টার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য তেজগাঁওয়ে তিন একর জায়গায় চীনের সহায়তায় ভবন তৈরি করা হচ্ছে।
[৭] ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও বন্যার সময় আশ্রয় দেয়ার জন্য ৪২৩টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ প্রায় শেষ হয়েছে। পাশাপাশি ৫৫০টি মুজিব কেল্লা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো প্রতিবন্ধীবান্ধব এবং সোলার সিস্টেমসহ সার্বিক সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও দুর্যোগকালে ঢাকা থেকে ত্রাণসামগ্রী বহন করে নিয়ে যেতে ৬৪ জেলায় ৬৬টি ত্রাণ গুদাম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ বছরের শেষে বুঝে পেলে খুব সহজে ত্রাণসামগ্রী উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। নতুন করে ৫০০টি উপজেলায় ত্রাণ গুদাম, এক হাজার বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, এক হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র এবং এক হাজার মুজিব কেল্লার জন্য পিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।
[৮] বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।