ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রামের তরুণী কেয়া (ছদ্মনাম)। বেশ কিছুদিন ধরে খুঁজছিলেন একটি চাকরি। বলে রেখেছিলেন বন্ধু মহলেও। এরই প্রেক্ষিতে পরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যমে পেয়ে যান একটি বায়িং হাউজে চাকরির খোঁজ। দেরি না করেই সেই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন নিজের বায়োডাটা। আর পাঠানোর একঘণ্টার মধ্যেই এলো ডাক! পরবর্তী একঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে ইন্টারভিউ! এ যেন স্বপ্ন পূরণের হাতছানি। এমন কাণ্ডে বিস্মিত মনে সেই প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়ে আরো এক বিস্ময়কর ঘটনার সম্মুখীন হন ওই তরুণী।ঘটনাটি বৃহস্পতিবারের। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘এমটিএস বায়িং হাউজ’। ডেইলি বাংলাদেশ
ঘটনার বিবরণ দিয়ে কেয়া বলেন, সকাল ১০টা নাগাদ কল দিলাম এবং যথারীতি আমাকে সিভি পাঠাতে বললো। সিভি পাঠানোর একঘন্টার মধ্যেই কল দিয়ে বলা হলো- ১২টার মধ্যে দিতে হবে ইন্টারভিউ।
আমি ফ্রি ছিলাম, তাই সময়মতো বেরিয়ে পড়লাম। মুরাদপুর এলাকায় পৌঁছালে সেখানে রাশেদ নামে একজন এসে আমাকে রিসিভ করে নেন। অফিসের দিকে যেতে যেতে ওই ব্যক্তি বলেন, আপনি যদি ভালোভাবে দিতে পারেন, আপনার জব কাল থেকে কনফার্ম। খানিকপর আপনি থেকে তুমিতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, তুমি দুইটা লাইনে কাজ করতে পারবা। কাজের ওপর ডিপেন্ড করবে তোমার উন্নতি।
অফিসে পৌঁছার পর কেয়ার ডাক পড়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুজিবুর রহমানের কক্ষে। মুজিবুর তার পরিচয়, আগে কোথায় চাকরি করেছে ইত্যাদি জানতে চান। এরপর বলেন, আমার এখানে চাকরির অফার দুটি। এক হচ্ছে- মানসম্মান নিয়ে চাকরি করবা, বেতন পাবা পাঁচ হাজার। আর যদি বসকে খুশি রেখে কাজ করতে চাও, তোমার উন্নতি চাও, তাহলে দেয়া হবে ১৫ হাজার।
এদিকে, মুজিবুরের এমন প্রস্তাবে রীতিমতো অবাক হন কেয়া। এসব কথার মানে জানতে চাইলে উত্তরে মুজিবুর বলেন, বসের সঙ্গে বাইরে ভ্রমণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। বিষ পান করতে দিলে বিষ পান করতে হবে। সম্মানের ভয়ে পিছিয়ে পড়লে হবে না।
কেয়া বলেন, এসব কথা শুনে মুহূর্তেই আমার হাত-পা সব ঠান্ডা হয়ে গেল। মনে মনে আল্লাহর নাম জপছিলাম আর সুযোগ খুঁজছিলাম কীভাবে ওখান থেকে বেরিয়ে আসবো। এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে, শুধু চিন্তা হচ্ছিলো পরিবারের কাছে ফিরতে পারবো কিনা। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি আমার বাবা-ভাই কী করেন জানতে চান। উত্তরে আমি তৎক্ষণাৎ বুদ্ধি খাটিয়ে বাবা পুলিশে আছেন বলে জানালে মুহূর্তেই কথা পাল্টিয়ে তিনি বলেন, আচ্ছা তুমি যদি প্রস্তাবে রাজি থাকো, তাহলে কাল থেকে তোমার জয়েনিং।
এরপর কিছু না বলে আমি শুধুমাত্র তার মোবাইল নাম্বার নিয়ে বললাম, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানাবো। আমার এমন কথার উত্তরে তিনি বলেন, পারলে এখনি জানান। আপনি না করলে অনেক মেয়ে অপেক্ষায় আছে। আমাকে বিশ্বাস করাতে কয়েকজন মেয়ের ছবি-বায়োডাটাও বের করে দেখান তিনি। যেখানে আমি একজন পরিচিত আপুর ছবি দেখতে পাই।
কৌশলে এবার অফিস থেকে বেরিয়ে ছবিতে দেখানো পরিচিত মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন কেয়া। এ সময় ওপাশ থেকে মেয়েটি জানান, বুধবার বায়োডাটা দেয়ার পর সন্ধ্যা ৭টায় তাকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়। একইসঙ্গে হট পোশাকে আসতে বলা হয়। তবে আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে যাচাইয়ে তিনিও মুজিবুরের ব্যাপারে নেতিবাচক তথ্য পান বলে জানান।
এদিকে, অভিযোগ পেয়ে মুজিবুরকে থানায় ডেকে নেয় পুলিশ। এ সময় মুজিবুর নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান ভুক্তভোগী তরুণীর কাছে। পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করতে বলা হলেও মামলা করতে রাজি হয়নি তার পরিবার। ফলে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান মুজিবুর।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (উত্তর) আশিকুর রহমান বলেন, মুজিবুরের পরিবারের উপস্থিতিতে তার কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য তাকে সতর্ক করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :