ডেস্ক রিপোর্ট : হালনাগাদ লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে ঢাকার বাড্ডার এসটি পাওয়ার সিএনজি ফিলিং স্টেশন। শুধু তা-ই নয়, ফিলিং স্টেশনটি রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) অনুমোদন ফিও পরিশোধ করেনি। একদিকে এ ফিলিং স্টেশনের কাগজপত্র যেমন ঠিক নেই, তেমনি এর স্টোরেজ সিলিন্ডারটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। পাঁচ বছর পরপর স্টোরেজ সিলিন্ডার পরীক্ষা করার বিধান থাকলেও এসটি পাওয়ার ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ তা না করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বণিক বার্তা
আশুলিয়ার মালিহা সিএনজি ফিলিং স্টেশন স্টোরেজ সিলিন্ডারের ধারেকাছেই যায়নি। কাভার্ড ভ্যানের ভেতরে থরে থরে সাজানো বহনযোগ্য সাধারণ সিলিন্ডার থেকে গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করছে এ ফিলিং স্টেশন। আরপিজিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, মালিহা সিএনজি ফিলিং স্টেশন ‘অননুমোদিত সিলিন্ডার’ দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছ থেকে লাইসেন্স, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র ও আরপিজিসিএলের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পায় সিএনজি ফিলিং স্টেশন। লাইসেন্সের মেয়াদ হয় সর্বনিম্ন এক থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। এরপর তা একই মেয়াদে নবায়ন করতে হয়। এসব আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে চিটাগং সিএনজি সার্ভিস স্টেশন। দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এখনো আরপিজিসিএলের অনুমোদন নেয়নি এ ফিলিং স্টেশন। নেই বিইআরসির হালনাগাদ লাইসেন্স। পাশাপাশি নির্ধারিত মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও রিজার্ভ সিলিন্ডার পরীক্ষা করায়নি চিটাগং সিএনজি সার্ভিস স্টেশন।
অন্যদিকে চট্টগ্রামেরই আরেক ফিলিং স্টেশন ‘জমজম সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন বিইআরসি, আরপিজিসিএল ও বিস্ফোরক পরিদপ্তর—কোনো সংস্থাকেই তোয়াক্কা করছে না। অনুমোদন, অনুমতি, হালনাগাদ লাইসেন্স না থাকলেও কার্যক্রম ঠিকই পরিচালিত হচ্ছে। জমজম ফিলিং স্টেশনের রিজার্ভ সিলিন্ডারও মেয়াদোত্তীর্ণ।
গত মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার ২০টি, চট্টগ্রামের ১১টি ও নারায়ণগঞ্জের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন পরিদর্শন করেছেন আরপিজিসিএলের কর্মকর্তারা। পরিদর্শনে ৩২টি সিএনজি স্টেশনের মধ্যে ছয়টির রিজার্ভ সিলিন্ডার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আরো একটি ফিলিং স্টেশন গ্যাস সরবরাহ করছে বহনযোগ্য সিলিন্ডার দিয়ে।
এ ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (সিএনজি) মহম্মদ আলী বিশ্বাস বণিক বার্তাকে বলেন, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের রিজার্ভ সিলিন্ডারের মেয়াদ সাধারণত ১৫-২০ বছর। এজন্য পাঁচ বছর পরপর সিলিন্ডার পরীক্ষা করে দেখা হয় সেটি ঠিক অবস্থায় আছে কিনা। নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত বেশির ভাগ রিজার্ভ সিলিন্ডার ব্যবহার উপযোগী থাকে। তবে কোথাও কোথাও ত্রুটিও দেখা দেয়। এজন্য পাঁচ বছর পরপর সিলিন্ডার পরীক্ষা করানোর নিয়ম। পরীক্ষায় সিলিন্ডারে ত্রুটি থাকলে সেটি আর মালিকদের ফেরত দেয়া হয় না। ত্রুটি থাকা একটি ফিলিং স্টেশনের রিজার্ভ সিলিন্ডারে দুর্ঘটনা ঘটলেও তা সিএনজির পুরো সিস্টেমটিতে জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
আরপিজিসিএলের হিসাবে সারা দেশে চলমান সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সংখ্যা ৫৩৭। গত চার মাসে ৩২টি স্টেশন পরিদর্শন করে এর বেশির ভাগেরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে অসংগতি পেয়েছে আরপিজিসিএল। হালনাগাদ লাইসেন্স, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনাপত্তি কিংবা আরপিজিসিএলের অনুমোদনবিহীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকার মহাখালীর সুপারপ্লাস সিএনজি ফিলিং স্টেশন, আশুলিয়ার রেনেসা এনজিবি রিফুয়েলিং স্টেশন, নারায়ণগঞ্জের সেবা সিএনজি ফিলিং স্টেশন, হেমায়েতপুরের লালন সিএনজি ফিলিং স্টেশন, মেরুল বাড্ডার জামান সিএনজি ফিলিং স্টেশন, সাভারের নবীনগর সিএনজি ফিলিং স্টেশন, গোপীবাগের এনএস সিএনজি ফিলিং স্টেশন, বাড্ডার এসটি পাওয়ার সিএনজি ফিলিং স্টেশন, খিলগাঁওয়ের সিটি ওভারসিজ ফিলিং স্টেশন, চট্টগ্রামের জালালাবাদ সিএনজি ফিলিং স্টেশন, এস আলম গ্যাস স্টেশন, চিটাগং সিএনজি সার্ভিস স্টেশন, সাউদার্ন সিএনজি লিমিটেড, চিশতিয়া সিএনজি রিফুয়েলিং অ্যান্ড কনভারসন, পতেঙ্গা রিফুয়েলিং স্টেশন, জমজম ফিলিং স্টেশন ও ইন্ট্রাকো সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন।
আরপিজিসিএলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব ফিলিং স্টেশনের বাইরেও দেশের অনেক সিএনজি ফিলিং স্টেশনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক নেই। এসব ফিলিং স্টেশনের অনেকগুলোও ব্যবহার করছে মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা নির্ধারিত সময় পার হলেও পরীক্ষা না করা রিজার্ভ সিলিন্ডার।
দেশের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরপিজিসিএল। প্রয়োজনীয় কাজগপত্র ঠিক না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ রিজার্ভ সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মহম্মদ আলী বিশ্বাস বলেন, আমরা প্রথমে এসব ফিলিং স্টেশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা দিই। এ নির্দেশনা অমান্য করলে আমরা সেই সিএনজি স্টেশনের লাইসেন্স বাতিলের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে অনুরোধ জানাই। ঝুঁকিপূর্ণ সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর বিরুদ্ধে আরপিজিসিএল সব সময় সোচ্চার থেকে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :