রাশিদ রিয়াজ : কোভিডে লকডাউনের কারণে সুনির্দিষ্ট মেয়াদের ঋণ তথা টার্ম লোনের উপর ৬ মাসের জন্য মোরাটোরিয়াম ঘোষণা করেছিল ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ ওই ৬ মাস গৃহঋণ, শিক্ষা ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য মাসিক সহজ কিস্তির টাকা তথা ইএমআই দেওয়া স্থগিত রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে মোদী সরকার জানিয়ে দিল, ২ কোটি পর্যন্ত ঋণের জন্য মোরাটোরিয়ামের মেয়াদে ইএমআই-এর উপর যে সুদ বকেয়া হয়েছে তা গ্রাহককে দিতে হবে না। ভারত সরকার সেই খরচ বহন করবে। দেশটির সরকারের এই পদক্ষেপে মধ্যবিত্ত শ্রেণি যে ভীষণ ভাবে উপকৃত হবে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কারণ, গৃহঋণ, শিক্ষা ঋণ, গাড়ি কেনার জন্য ঋণ, ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া, ফ্রিজ-টিভির মতো কনজিউমার গুডস কেনার জন্য ইএমআই সব ক্ষেত্রেই এই ছাড় পাওয়া যাবে। তা ছাড়া এতে আর্থিক সুরাহা হবে সেই সব ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থার, যারা ব্যাঙ্ক থেকে ২ কোটি টাকা বা তার কম টাকা ঋণ নিয়েছে।
কোভিড ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ভারতে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ায় নির্দিষ্ট মেয়াদের ঋণের উপর মোরাটোরিয়াম ঘোষণায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া বলেছিল কোনও গ্রাহক চাইলে তিন মাস ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা স্থগিত রাখতে পারেন। পরে মোরাটোরিয়ামের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, কিস্তির টাকা দেওয়া বন্ধ করলে বকেয়া আসল ও সুদ উভয়ের উপরেই ওই মেয়াদের জন্য সুদ দিতে হবে।
ধরা যাক, কারও ইএমআইয়ের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাসে মাসে তাঁকে ১০ হাজার টাকা সহজ কিস্তিতে ফেরত দিতে হয়। ওই সহজ কিস্তির মধ্যে আসলের অংশ হল ৪ হাজার টাকা এবং সুদ হল ৬ হাজার টাকা। ভারতের ব্যাঙ্কগুলো জানিয়েছিল, আসল বাবদ টাকা তো গ্রাহকদের ফেরত দিতেই হবে। সেই সঙ্গে মোরাটোরিয়ামের মেয়াদ তথা ৬ মাসে যে সুদ বকেয়া হয়েছে, তার উপরে ফের সুদ দিতে হবে। মানে সুদ বাবদ এই যে ৩৬ হাজার টাকা বকেয়া হল, তার উপরে ফের সুদ দিতে হবে গ্রাহকদের। ব্যাঙ্কগুলির এই ঘোষণা নিয়েই হই হই পড়ে গিয়েছিল। অনেকের মতে, এতে মধ্যবিত্তের সুরাহার বদলে সংকট তৈরি হল। তার থেকে ভাল ছিল, কষ্টশিষ্ট করে হলেও ইএমআই দিয়ে যাওয়া।
ব্যাঙ্কগুলোর এ অবস্থানের বিরোধিতা করে মামলা দায়ের হয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। এ ব্যাপারে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সরকারের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সে দিন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে এ জন্য আরও সাতদিন সময় দেয়। বিচারপতিরা বলেন, কোভিডের বাজারে গ্রাহক তথা ঋণ গ্রহীতাদের সুরাহা দেওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সাত দিনের মধ্যে পরিকল্পনা পেশ করতে হবে মোদী সরকারকে।
গত শুক্রবার সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়ে দেয় যে বকেয়া সুদের উপর আর সুদ দিতে হবে না। সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামায় বলা হয়েছে, বর্তমান মহামারীর সময়ে এ ব্যাপারে সুরাহার রাস্তা একটাই। তা হল, সরকার যদি সেই খরচ বহন করে তা হলেই একমাত্র সব দিকে বাঁচে। কারণ, সুদের উপর যে সুদ জমা হয়েছে তার সামগ্রিক পরিমাণ হল ৬ লক্ষ কোটি টাকা। ব্যাঙ্কগুলিকে সেই খরচ বহন করতে বললে তাদের নেট ওয়ার্থের একটা বড় অংশ চলে যাবে। অর্থাৎ ব্যাঙ্কগুলি বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাতে আবার ঘুরিয়ে সাধারণ মানুষেরই ক্ষতি। তাই ২ কোটি টাকা পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট মেয়াদের ঋণের বকেয়া সুদের উপর সুদের টাকা সরকারই দেবে।
আপনার মতামত লিখুন :