রাশিদ রিয়াজ : কোভিড মহামারীর মধ্যেও আসছে নতুন অর্ডার। বাড়ছে উৎপাদন। অতিমহামারী শুরু হওয়ার পর ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর যেমন ধাক্কার মুখে পড়েছিল, ক্রমশ তা কাটিয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার এক বেসরকারি সংস্থার প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা যায়, গত সাড়ে আট বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি সচল হয়ে উঠেছে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর। ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স আই এইচ এস মারকিত অগাস্টে ছিল ৫২-র ঘরে। সেপ্টেম্বরে তা উঠেছে ৫৬.৮ পর্যন্ত। জুনে লকডাউন শিথিল করার জন্যই সূচক হয়েছে উর্ধ্বগামী। এইচ এস মারকিতের অর্থনীতিবিদ পলিয়ানা ডি লিমা বলেছেন, ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর এগোচ্ছে সঠিক পথে। সেপ্টেম্বরের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সে অনেক ইতিবাচক দিক লক্ষ করা গিয়েছে। পরপর দু’মাস ধরে উর্ধ্বগামী হয়েছে সূচক। বাজারে চাহিদা বেড়েছে। সেই সঙ্গে লকডাউন করা হয়েছে শিথিল। তার ফলেই সচল হয়ে উঠেছে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর। টাইমস অব ইন্ডিয়া
ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর ক্রমশ চাঙ্গা হয়ে উঠলেও কর্মসংস্থান সেই হারে বাড়ছে না। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পণ্য উৎপাদনকারীরা স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে ফেলছেন। পরপর ছ’মাস ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে কমেছে কর্মীর সংখ্যা। পলিয়ানা ডি লিমা বলেন, কর্মসংস্থানের নিরিখে পিছিয়েই আছে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর। কয়েকটি সংস্থা জানাচ্ছে, তাদের নতুন নিয়োগ করতে সমস্যা আছে। কোনও কোনও কোম্পানি জানাচ্ছে, সামাজিক দূরত্বের বিধি মানার জন্য তারা কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে রাখতে চায়। সামগ্রিকভাবে ভারতের অর্থনীতি এখনও কোভিডের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। সেপ্টেম্বরের শুরুতে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি কমেছে ২৩.৯ শতাংশ। ফিচ রেটিং জানিয়েছে, ২০২০-২১ সালের আর্থিক বছরে সামগ্রিকভাবে ভারতের অর্থনীতি সংকুচিত হবে ১০.৫ শতাংশ। করোনা অতিমহামারী ঠেকাতে গত মার্চে দেশ জুড়ে লকডাউন করা হয়। তাতেই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি।
ফিচ বলেছে, ২০২০ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে জিডিপি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু অর্থনীতি বিকাশের হার স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে যথেষ্ট। কয়েক বছর আগেও বড় দেশগুলির মধ্যে ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) বাড়ছিল সবচেয়ে দ্রুত হারে। কোভিড মহামারীর জেরে বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। ভারতে যেভাবে কোভিড সংক্রমণের হার বাড়ছে, অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই দেশ বিশ্বে করোনার হটস্পট হয়ে উঠতে পারে। ফলে চলতি আর্থিক বছরে এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভারতের জিডিপিই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি হারে কমতে চলেছে।
ভারতে এখন রোজ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, অতিমহামারীর কবল থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে না এদেশের পক্ষে। তাতে সময় লাগবে অনেক বেশি। সরকার ইতিমধ্যে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি। লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বহু ব্যবসা দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :