সুজন কৈরী : নরসিংদীর বেলাবোর নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রিনা বেগমের ছেলে সোহরাব ওরফে মুসা হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি কবির মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। হত্যাকাণ্ডের পর গা-ঢাকা দিয়েছিলেন কবির মিয়া। তবে তিন বছর পালিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা বহেরার চালা এলাকা থেকে কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা ও ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
শনিবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটিরর ঢাকা বিভাগ ও ঢাকা মেট্রোর ডিআইজি মো. মাঈনুল হাসান বলেন, কবির নরসিংদীর বেলাবোর খামারেরচর গ্রামের আবদুল হাইয়ের ছেলে। একই উপজেলার নারায়ণপুরের (৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য রিনা বেগমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার পারিবারিক বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে রিনা বেগমের ছেলে ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন কবির। বিষয়টি বুঝতে পেরে রিনা বেগম তার ছেলে ফরিদকে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেন।
মাঈনুল হাসান আরও বলেন, একই এলাকার বাচ্চু মিয়া ও রিনা বেগমের ছেলে সোহরাব ওরফে মূসা একসঙ্গে রিনার বাসায় ঘুমাতেন। কবির ও তার সহযোগী শিপন বাচ্চু মিয়াকে প্রস্তাব দেন ফরিদকে ডেকে এনে তাদের কাছে দিতে। তখন বাচ্চু মিয়া কবিরকে জানান, ফরিদ কক্সবাজারে অবস্থান করছে। তখন কবির ফরিদের যেকোনো ভাইকে ডেকে আনার প্রস্তাব দেন বাচ্চু মিয়াকে। বাচ্চু মিয়া তার এই প্রস্তাব অস্বীকার করলে শিপন ও কবির বাচ্চু মিয়াকে ভয় দেখায় এবং পরে তাকে কিছু টাকা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর রাত ২টার দিকে আসামি কবির ও শিপন রিনা বেগমের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। এরপর বাচ্চু মিয়া রিনার ছেলে সোহরাবকে নিয়ে ঘর থেকে বের হন। এ সময় শিপন ও কবির সোহরাবকে জাপটে ধরে মুখে গামছা বেঁধে পাশের কুকুর মারা স্কুলের পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেন শফিক ও মিলন নামে আরও দুজন। মাঈনুল হাসান বলেন, শফিক ও মিলন সোহরাবের দুই পা ধরে, তুহিন মাথা ধরে, শিপন ডান হাতে ধরে রাখে। প্রথমে শিপন এবং পরে কবির সোহরাবের গলায় ছুরি চালিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহত সোহরাবের মা রিনা বেগম বাদী হয়ে কবিরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে বেলাবো থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ মামলাটির তদন্তের সময়ে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে নরসিংদীর পিবিআই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেয়। পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুবেল শেখ মামলাটির তদন্ত করে মামলার এজাহারনামীয় আসামি কবিরসহ তিনজন এবং এজাহারের বাইরে আরও দুজনসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়। পিবিআইয়ের দেয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে রিনা বেগমের নারাজির প্রেক্ষিতে আদালত চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেয়া হয়। পরে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক নুরুল ইসলাম সিদ্দিক কবিরকে গ্রেপ্তার করেন।
আপনার মতামত লিখুন :