আল-আমিন: হাসি আমাদের দেহ সুস্থ রাখার মহা ঔষধ। এর অর্থ সুস্থ থাকতে হলে আমাদের বেশি করে হাসতে হবে। বিজ্ঞানের ভাষায় হাসি আমাদের দেহকে সর্বক্ষণ সুস্থ রাখতে সহায়তা করে থাকে। তাই যদি আপনি সর্বদা সুস্থ থাকতে চান তাহলে বেশি করে হাসুন। চলুন তাহলে আজ জেনে নেই দেহের সুস্থতায় হাসির ৯ টি অসাধারণ কারণ।
হাসির উপকারিতা ১ : বেশি হাসি আপনার হার্টের জন্য খুব ভালো গবেষণায় পাওয়া যায় যে সকল মানুষেরা বেশি হাসে তাদের হার্টের সমস্যা তুলনামূলক ভাবে খুব কম এবং যারা কম হাসেন তাদের হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে। তাছাড়া যে সকল মানুষের বেশি হাসতে পারেন না তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনেও নানা রকমের সমস্যায় থাকেন। তাই সুস্থ হার্টের জন্য মন-প্রাণ খুলে হাসুন।
হাসির উপকারিতা ২ : হাসি আপানর দেহকে ক্যান্সার রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে। আমেরিকার ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট সেন্টারে ক্যান্সার রোগীদের হাসানোর জন্য বিশেষ থেরাপি দেয়া হয়ে থাকে। যা একজন ক্যানসার রোগীর দেহের ব্যথা দূর করে ও মন ভালো রাখে।
হাসির উপকারিতা ৩ : হাসি সম্পর্কের ত্রুটি দূর করে। হাসি মানুষকে একে অপরকে কাছাকাছি রাখতে সাহায্য করে থাকে। যে কোন ধরণের রাগ দূর করতে সুন্দর একটি হাসির উপকারিতা অনেক বেশি। হাসি আপনার মনের সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর করবে ও আপনাদের সম্পর্ক ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
হাসির উপকারিতা ৪ : আপনার কাজ যেমনই হয়ে থাকুক না কেন সেই কাজটিকে আনন্দের সাথে করার চেষ্টা করুন। কর্মক্ষেত্রে দুর্দান্ত উপায়ে, দলবদ্ধ ভাবে ও মানসিক ভাবে শক্তি নিয়ে কাজ করতে হাসি খুশি থাকা খুবই জরুরী।
হাসির উপকারিতা ৫ : হাসি আপনার মানসিক চাপ দূর করে থাকে। কিন্তু এই বিষয়টি হয়তো আমরা বুঝিনা কারণ যখন একটি মানুষ মানসিক ভাবে চাপের উপর থাকে স্বভাবগত ভাবেই তার মন খারাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া দৈনন্দিন যুগে মানসিক চাপ একটি রোগে পরিনত হয়েছে। তাই যখনই যেমন অবস্থায় থাকুন না কেন মন ভালো রাখতে ও মানসিক চাপ দূরে রাখতে হাসুন।
হা
সির উপকারিতা ৬ : অট্ট হাসি আপানর দেহের যেকোন ব্যথা নিমিষেই দূর করতে সাহায্য করবে। অট্ট হাসি আমাদের মস্তিষ্কের এনডোরফিন (হরমোন) নামের একটি কেমিক্যাল নিঃসরণ করে থাকে যা আমাদের দেহের ব্যথা দূর করে থাকে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি জরিপে দেখা গিয়েছে যে মানুষ যত বেশি হাসবে তার দেহের ব্যথা তত বেশি কমে যাবে।
হাসির উপকারিতা ৭ : অনেক কারণেই আমরা বিষন্নতায় ভুগে থাকি। তাই হাসি আপনাকে সবসময় প্রফুল্ল রাখবে ও আপনার মনের গভীর থেকে বিষন্নতা দূর করবে। গবেষণায় দেখা যায় যারা বেশি হাসতে থাকেন তাদের ভেতর অনেক কম দুশ্চিন্তা ভর করে এবং বিষন্নতার প্রভাব থাকে না।
হাসির উপকারিতা ৮ : হাসি আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আপনি যখন হাসেন তখন আপনার দেহের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় এবং অক্সিজেন গ্রহণের মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
হাসির উপকারিতা ৯ : হাসি আপনাকে ভালো করে ঘুমাতে সাহায্য করে থাকে। জাপানে একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে সন্ধ্যায় আপনি যত বেশি হাসবেন রাতে আপনার ঘুম তত বেশি ভালো হবে। তাই ভালো ঘুমের জন্য রাতে
ঘুমানোর আগে কোন মজার গল্পের বই পড়ুন কিংবা কোন মজার সিনেমা দেখুন যা আপনাকে অনেক বেশি হাসতে সাহয়তা করবে।
যে কারণে হাসি গুরুত্বপূর্ণ!
আপনি সুন্দর; আপনার মিষ্টি হাসিতে। হাসি হল মানুষের জীবনে একটি টনিকের মতো। হাসি জীবনকে সহজ করে। জীবনটা উপভোগ করতে হয় প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি ছোট্ট ছোট্ট স্মৃতিতে। যত বেশি হাসবেন তত বেশি আপনার জীবনটা ভরে যাবে আনন্দ ও পরিতৃপ্তিতে।
একটি নির্মল হাসি আপনার জন্য একটি মহৌষধ। হাসির মাধ্যমে আপনি নিজের অজান্তেই সারিয়ে ফেলতে পারেন দেহে বাসা বাধা অনেক জটিল রোগ। দেখে নিন হাসির নানান ধরনের উপকারিতা।
(১) আপনার হার্টের ভালোর জন্য হাসিটা খুব জরুরি। গবেষণায় দেখা যায় যে সকল মানুষ বেশি হাসে তাদের হার্টের সমস্যা তুলনামূলকভাবে খুব কম থাকে। তাই সুস্থ হার্টের জন্য মন খুলে হাসুন।
(২) হাসি সম্পর্কের মালা গাঁথা। একে অপরের দূরত্ব ঘোচাতে একটি সুন্দর হাসিই যথেষ্ট। হাসি অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করে। কঠিন পরিস্থিতে রাগ কমায়।
(৩) কর্মক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজ করতে চাই প্রফুল্ল মন। দলবদ্ধভাবে বা একা যেভাবেই কাজ করুন না কেন কাজের উৎসাহ ধরে রাখতে ও মানসিক দৃঢ়তা আনতে হাসি খুশি থাকাটা অত্যন্ত জরুরী কিন্তু !
(৪) মেন্টাল প্রেশারে কে নেই বলুন তো? এটাতো নিত্যদিনের সঙ্গি-তে পরিণত হয়েছে। এই মেন্টাল প্রেশার বা মানসিক চাপ বেসিক্যালি হাজার ধরনের রোগের স্রষ্টা। মানসিকভাবে চাপের উপর থাকলে যে কারো জীবনই গতি হারিয়ে ফেলে। বেঁচে থাকার কোন অর্থই সে খুঁজে পায় না। এমন মৃত জীবন থেকে বাঁচতে তাই হাসুন প্রতিদিন।
(৫) অট্ট হাসিতেই ব্যথা দূর হতে পারে। দেহের যেকোন ব্যথা সারাতে হাসুন। কারণ, হাসলে আমাদের মস্তিষ্কে এনডোরফিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে যা দেহের ব্যথা দূর করে।
(৬) হাসি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হাসির সময় দেহের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। যার ফলে অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যায়। রক্তে এড্রেনালিনের পরিমাণ কমে যায় যার ফলে সর্দি, কাশি, জ্বর এবং অন্যান্য ছোট ছোট রোগ আক্রান্ত করতে পারে না।
(৭) হাই প্রেশারে হাসি ওষুধের মতো কাজ করে। প্রেসারকে স্টেবলড কন্ডিশনে রাখে।এবং সুস্থতা নিশ্চিত করে।
(৮) শরীর সুস্থ থাকতে চাই ভালো ঘুম। হাসি ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। জাপানে একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে সন্ধ্যায় যত বেশি হাসবেন, রাতে তত ভালো ঘুম হবে! খুব ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার। এই জন্য ঘুমাবার আগে ভালো বই পড়া বা মজার সিনেমা দেখা ভালো অভ্যাস ধরা হয়।
(৯) দুশ্চিন্তায় আছেন কি ? আরে চিন্তা ছেড়ে হাসুন তো ! কারণ হাসিতেই যে এর প্রতিকার ! যুক্তরাজ্যের ফেস ইয়োগা এক্সপার্ট ডেনিয়েল কলিন্স বলেন যে হাসলে মুখের মাড়ির ২৬ টি পেশিরই ভালো ব্যায়াম হয়।
(১০) হাসলে ফুসফুসের আকৃতি বৃদ্ধি পায়। এতে ফুসফুস অনেক অক্সিজেন ধারণ করতে পারে। একবার হাসলেও শরীরের ছোটখাটো একটা ব্যায়াম হয়ে যায়। গবেষকদের মতে একবার হাসলে শরীরের ০.০০৩ শতাংশ ক্যালরি খরচ হয়। ফলে হাসিতে কমে ওজন!
আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা আছে, থাকবে। তাই বলে হাসতে ভুলে যাবেন না। হাসি ছাড়া একটি দিন হল একদিনের অপচয়। হাসতে থাকুন কারণ জীবনটা যেমনই হোক, একটাই তো!