শিরোনাম
◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০২:০৮ রাত
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০২:০৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী : ‘বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখেন, কোন জায়গায় ধর্ষণ নেই?’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাগুলো কী মিথ্যা?

দীপক চৌধুরী: সিলেটের এমসি (মুরারি চাঁদ) কলেজে যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে, শুধু আমরা কেন, সারাদেশের মানুষ, এমনকি বিশ্ববাসী যাদের কানে গেছে তারাও এটাকে ঘৃণা করেন। ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা ও আইনের হাতে তুলে দেয়ার সবরকম চেষ্টা পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা করেছে। এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে, যে সাতজনকে ধরা হয়েছে তদন্তের মাধ্যমে তারা দোষী প্রমাণিত হলে- বিচার বিভাগ তাদের অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি দেবে।

সম্প্রতি দেশে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সারা বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখার কথা বলেছেন মন্ত্রী। প্রশ্ন রেখেছেন, কোন জায়গায় ধর্ষণ নেই? এমন কোনো দেশ নেই ধর্ষণ হয় না! মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব প্রশ্ন রাখেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সারা বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখেন? কোন জায়গায় ধর্ষণ নেই? এমন কোনো দেশ নেই ধর্ষণ হয় না! আমাদের দেশে ধর্ষণকারীকে কিন্তু আমরা গ্রেপ্তার করছি একের পর এক। যেই করছে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা তো ফেলে দেবার নয়। তিনি স্পষ্ট কথা বলেছেন। এটি এমন এক অপরাধ যে, আজ বিশ্বে এটা এক ধরনের আতঙ্ক। এটা বৈশ্বিক সমস্যা।অনেক দেশে বহু ধর্ষণের বহু ঘটনা রেকর্ড করা হয় না। পৃথিবীর ক্ষমতাবান ও ধনী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর গড়ে শিশু-নারীসহ ৪ লাখ, ৩৩ হাজার ৬৪৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ব্রাজিলে প্রতিদিন গড়ে ১৯০টি ধর্ষণের ঘটনা, ইউরোপের ধনীদেশ যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর গড়ে ৫৪ হাজার ধর্ষণ (২০১৭/১৮ সালে বছরে), পাকিস্তানের একটি রাজ্য পাঞ্জাব। সেখানে ১০ হাজার শিশু-নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে গত ছয়মাসে। পুরো দেশের ভয়ঙ্কর চিত্রের কথা বললামই না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশু ও নারী ধর্ষণের ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরতে পারবো। যদিও এতে আমাদের তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা ঠিক নয়। কিন্তু বিএনপির উল্লাসের কারণে লিখতে বাধ্য হলাম। আমি মনে করি, আমাদের দেশে নারীর সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার জন্য নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধিতাকারীদের ষড়যন্ত্র কিনা তাও দেখা উচিৎ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নারীর ক্ষমতায়নকে বাস্তবে পরিণত করতে যাচ্ছেন তখনই একের পর এক ষড়যন্ত্র। শুধু রাজনীতিবিদ নন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিচারক সর্বত্র আমরা দেখছি নারীর ক্ষমতায়ন। সেখানে নারীর অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। স্বীকার করতেই হবে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই ধর্ষকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় না এলে এটি কোনোদিনই হতো না। আরেকবার সিলেট-সুনামগঞ্জের পুলিশ, ডিবি, র‌্যাবসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কর্মনিষ্ঠা প্রমাণিত হলো। আমাদের মনে থাকার কথা, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীদের একজনের বাড়ি দিরাইয়ের এই জগদলেই। কী জঘন্য ঘটনা ছিল এটি। মূলত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুনামগঞ্জ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাতেগোনা কতিপয় নেতার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে একটি দুর্বৃত্তশ্রেণি বেড়ে উঠেছে জগদলে। ওরা জঙ্গি, জামায়াত, সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, লুন্ঠনকারী। ওরা কেউ কেউ দিনের বেলা প্রকাশ্যে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায়। কেউ কেউ আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সদস্য হিসেবে পরিচিত। পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, এই বলে কী জগদলে ভালো মানুষের অভাব? জগদলে বহু বিনয়ী, শিক্ষিত, মানবতাবাদী, ধর্মপ্রাণ ভালো মানুষ রয়েছেন। তারা সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে অপরাধীদের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। এরাই দেশকাঁপানো বিভিন্ন অঘটনে জড়িত। সুতরাং এদের চিহ্নিত করতে হবে।

আবার আসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কথায়। তিনি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক। অশুভচক্র বহু চেষ্টা চালিয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে এটা ঠিক। কিন্তু অত্যন্ত স্পষ্টবাদী এ নেতাকে ষড়যন্ত্রকারীরা কোনোভাবেই কোণঠাসা করতে পারেনি। শেখ হাসিনার নের্তৃত্বাধীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশের ওপর বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন কৌশলে ষড়যন্ত্র হয়েছে, ষড়যন্ত্র চলছে। অতীতে কখনো বোমা- গ্রেনেড মেরে, কখনো অতর্কিতে পেট্রোলবোমা ছুড়ে, জঙ্গি আক্রমণ চালিয়ে গণতন্ত্র নস্যাৎ করার অপচেষ্টা হয়েছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা একের পর এক তাণ্ডব চালিয়েছে। অশুভশক্তির দল নিরীহ মানুষকে হত্যার লক্ষ্যে মাথা তুলেছে বিষধর গোখরা সাপের মতো। নির্বাচন আর আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চলেছে সারাদেশে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্কতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে এগিয়ে চলেছেন সম্মুখের লক্ষ্যে। ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে একদফা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে ঘাতক-দুর্বৃত্তরা। আবার গণতন্ত্র হত্যার চক্রান্ত করছে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের ওপর ক্রমাগত আক্রমণের ঘটনা বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে ঘটছে। তবে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী রাখতেই হবে। তাহলে গণতন্ত্র কখনো হারবে না, মাথা উঁচু করে চলতেই থাকবে। এবার অন্য একটি প্রসঙ্গে একটু প্রবেশ করতে চাই। বিভিন্ন কারণে আজ আমার কৌতূহল অন্য জায়গায়।

সিলেটে এমসি ( মুরারি চাঁদ) কলেজে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেককে (মধ্যখানে) মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের প্রত্যন্ত জনপদ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৯- এর একটি দল। তার একটি ছবি এসেছে হাতে। ছবি দেখে অস্ফুটে বলে উঠলাম, এ কী? দাড়ি-চুল কিছু নেই তারেকের? এটা ধর্ষক তারেকের ছবিতো? সহকর্মীদের একজন সঙ্গে সঙ্গে ওর আগের ছবি ও বর্তমান ছবি দেখালেন। মুখভর্তি লম্বা দাড়ি ছিল। ছিল মাথায় চুল। কিন্তু নিজেকে আড়াল করতে চুল-দাড়ি কেটে ফেলে তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক (২৮)। আমি হাসতে থাকি! তবে তার দাড়ি রাখার উদ্দেশ্যটা কী ছিল? সে নাকি আশ্রয় নিয়েছিল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দুর্গম হাওর এলাকার একটি গ্রামে। ওই গ্রামে তার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় আছেন। আসামির তালিকায় তার নাম ২ নম্বরে রয়েছে। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামে। র‌্যাবের সুনামগঞ্জ কোম্পানির (সিপিসি-৩) সদস্যরা মঙ্গলবার দিনভর দিরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবশেষে জগদল ইউনিয়নের বড়মা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন। দিরাইয়ের জগদল ইউনিয়নের আরেক আসামী রবিউলের বাড়িও এখানে। তার বাড়ি নগদীপুর গ্রামে। অবশ্য সেও গ্রেপ্তার।

গত শুক্রবার রাতে কলেজ ছাত্রাবাসে এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় ওই তরুণীর স্বামী ছয়জনের নাম উল্লেখ করে নয়জনের বিরুদ্ধে সিলেট মহানগরের শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে গত রোববার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর একে একে মামলার এজাহারভুক্ত অন্য চার আসামি পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হলো তারেক। এজাহারভুক্ত আসামি ছাড়াও সন্দেহভাজন আরও দুজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে দলীয় অপরাধী, খুনি, ধর্ষকরা নিরাপদ আশ্রয় পেতো তাদের সরকারের। এখন এটা সম্ভব নয়। ক্ষমতায় রয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার। তাঁর নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাঁকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির সকল আশা-ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ’৭৫ পরবর্তী বাঙালি জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন তা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে।নানান ষড়যন্ত্র করা হয়েছে এই জননেত্রীর ওপর। আজ ষড়যন্ত্রকারীরা বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। সুবিশাল অর্জনে সমৃদ্ধ শেখ হাসিনার কর্মময় জীবন। এক কথায় বলতে গেলে তিনি জীবন সংগ্রামী একজন নেতা। বাংলাদেশের মানুষের আশা-অনাকাঙ্ক্ষার জায়গা। এদেশের মানুষের একমাত্র আশা-ভরসার স্থান। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নতুন পর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা আজ প্রমাণিত। সুতরাং চক্রান্তকারীরা কোনোভাবেই তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারবে না।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়