শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:২৩ দুপুর
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:২৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০২৪ সালে উৎপাদন শুরু

শাহীন চৌধুরী: [২] বিদ্যুৎ বিভাগের আরেকটি মেগা প্রকল্প ১ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পুরোদমে কাজ চলছে। করোনার সময়ও এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মতৎপরতা বন্ধ হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৩ ভাগ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু হবে।

[৩] সূত্রমতে, মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ হবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। মাতারবাড়ী ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমির ওপর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণসহায়তা হিসেবে জাপান সরকারের দেয়ার কথা ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। বাকি ৭ হাজার ৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার জোগান দিচ্ছে সরকার।

[৪] সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে বাস্তবায়নাধীন যে ১০টি প্রকল্প রয়েছে, তার মধ্যে ব্যয়ের বিবেচনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরই রয়েছে এই প্রকল্পটি। দরপত্র প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই ২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় জাপানি প্রকৌশলীসহ ১৭ বিদেশী নিহত হওয়ায় সেই দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। পরে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানি কনসোর্টিয়াম সুমিতোমো করপোরেশন, তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)।

[৫] সূত্রমতে, জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রকল্প। বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনায় মাতারবাড়িকে ‘বিদ্যুৎ হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় যে বন্দর নির্মাণ করা হবে, পরে তাকে গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত করা হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সরকার আশা করছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে মাতারবাড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে।

[৬] সিপিজিসিবিএল সূত্র জানায়, প্রকল্পে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন স্থাপন, ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ও পানি শোধন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। কয়লা আমদানির জন্য নদীতে ৭ কিলোমিটার নৌ চ্যানেল করা হচ্ছে। পাশাপাশি কয়লা ওঠানামার জন্য নির্মাণ করা হবে জেটি। কয়লা আমদানির পর তা সংরক্ষণের জন্য বানানো হবে কোল ইয়ার্ড। পাশাপাশি টাউনশিপ নির্মাণ, গ্রাম বিদ্যুতায়ন এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন কাজের আওতায় চকোরিয়া-মাতারবাড়ী ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ ও ১৩২/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে।

[৭] প্রকল্পের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে। এখানে নির্মাণ করা হবে অ্যাশ ডিসপোজাল এরিয়া এবং বাফার জোন। পরিবেশ দূষণ রোধে অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৭০০ কেজি স্ট্যান্ডার্ডে প্রয়োজনীয় পরিমাণ কয়লা আমদানি করা হবে। এতে প্রতি টন কয়লার দাম প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার ২৫৫ টাকা ৫০ পয়সা ধরা হয়েছে।

[৮] আধুনিক প্রযুক্তির এই কেন্দ্রে কম পরিমাণ কয়লার প্রয়োজন হবে এবং কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। ফলে বায়ুদূষণসহ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব একেবারেই কম পড়বে। এছাড়া নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ রোধ করার জন্য লোরেট বার্নার স্থাপন করা হবে। সালফার-ডাই অক্সাইড রোধ করার জন্য সাগরের পানিতে ডি-সালফারাইজেশন মেথড ব্যবহার করা হবে। অ্যাশ রোধ বা কমানোর জন্য ইলেকট্রোস্টেটিক প্রিসিপিটেটর এ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২২ সালের জুনের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ২০২৪ সালের জানুয়ারি নির্ধারিত হয়।
এছাড়া মাতারবাড়িতে আরও তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরইমধ্যে সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। ইতিমধ্যেই এই দুই দেশের সঙ্গেই সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এদিকে এলএনজি আমদানির জন্য এলএনজি টার্মিনাল করারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

[৯] এ প্রসঙ্গে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোতালেব আমাদের অর্থনীতিকে বরেন, করোনার কারণে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে কর্মীদের সার্বক্ষনিক অবস্থানের ব্যবস্থা করেছি। এ কারণেই আমাদের কাজ বন্ধ হয়নি। প্রকল্পে বর্তমানে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করছে যার মধ্যে রয়েছে ৫শ’ বিদেশী শ্রমিক। নির্দিষ্ট সময়েই প্রকল্পটিতে উৎপাদন শুরু হবে বলে তিনি দাবি করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়