শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:০৫ সকাল
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:০৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যক্ষ-হোস্টেল সুপার কি দায় এড়াতে পারেন?

ডেস্ক রিপোর্ট : মার্চ মাস থেকেই বন্ধ সিলেটের এমসির ছাত্রাবাস। করোনার কারণে এখনো বন্ধ সেটি। কিন্তু ক্যাম্পাস নীরব থাকলেও সরব ছিল ছাত্রাবাস। কলেজ অধ্যক্ষ কিংবা হল সুপার কেউই খবর রাখতেন না হোস্টেলের। হোস্টেলে কী হচ্ছে, কারা বসবাস করছে সেদিকে খেয়াল ছিল না কারো। বরং ছাত্রলীগের কর্মীদের উপর ভরসার কারণেই এমসির হোস্টেলের দিকে ফিরে তাকায়নি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে টিলাগড় কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের একটি অংশ সকল ঘটনায় দায় চাপিয়েছে অধ্যক্ষ ও হল সুপারের ওপর। তারা দাবি করেছেন- অধ্যক্ষ ও হল সুপারের মদদের কারণেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর, শাহ রনি সহ অন্যরা।

এ কারনে তারা অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ ও হল সুপার জামাল উদ্দিনের পদত্যাগও দাবি করেছে। এই পদত্যাগের দাবিতে তারা কলেজ ফটকেই সমাবেশ করেছে। ছাত্রাবাসের দায়িত্বরত সুপার হচ্ছেন, কলেজের সহকারী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন।

তিনি জানিয়েছেন- করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি তার বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে রয়েছেন। করোনার কারণে হল বন্ধ। এ কারণে তার কোনো কাজ নেই। তিনি বাড়ি চলে যান। ঘটনার দিনও তিনি নিজ বাড়িতেই ছিলেন। খবর পেয়ে পরদিন শনিবার সকালে ছুটে আসেন এমসি কলেজে। এদিকে- হল সুপার হোস্টেলে দায়িত্বরত না থাকলেও হোস্টেলে ছাত্র ছিলো। কলেজ অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন নিজেও স্বীকার করেছেন- হল বন্ধ করার পর কিছু সংখ্যক ছাত্র তার কাছে এসেছিলো। তারা শহরে টিউশনি করে। এ কারণে তারা থাকতে চেয়েছিলো। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের বসবাস করতে দেয়া হয়েছে। সংখ্যায় ছাত্র হবে ১৫-২০ জন। কিন্তু ঘটনার পর হলে গিয়ে দেখা গেছে ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন হলে বসবাস করছিলো। এতে করে সরব ছিলো হলের সব ক’টি ব্লক। খোলা ছিলো বিভিন্ন কক্ষ। গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনার পর হলে থাকা ছাত্ররা দুপুরের মধ্যেই হল ছাড়ে। এ সময় তাদের বইপত্র নিয়ে বের হতে দেখা যায়।

প্রশ্ন করা হলে তারা জানায়- হলে বই ছিলো নিতে এসেছি। একজন শিক্ষার্থী জানায়- ঘটনাস্থল নতুন হোস্টেলের তিন তলায় কিছু ছাত্র ছিলো। তারা বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হলেই থেকেছিলো। ঘটনার সময় তারা হলেই ছিলো। নিচে নামতে চেয়েছিলো। কিন্তু ছাত্রলীগ কর্মীদের হুমকির কারণে তারা নামতে পারেনি। কলেজ অধ্যক্ষ শুক্রবারের ঘটনায় শনিবার দুপুরের মধ্যে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসকে নতুন করে বন্ধের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। অধ্যক্ষ স্বীকার করেছেন- ‘কিছু ছাত্র ছিলো। তাদের বের করে দেয়া হয়েছে। এখন হলকে সিলগালা করে দেয়া হবে।’ হলের ভেতরেই শিক্ষক বাংলো দখলে ছিলো ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কর নেতা সাইফুরের। শিক্ষক বাংলোতে সে বসবাস করতো। ওই বাংলো থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ওই বাংলোতে সাইফুরের বসবাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না হোস্টেল সুপার। পাল্টা বলেন-‘ ওখানে তো কেউ থাকার কথা না।’

এমসি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন- এমসি কলেজের হোস্টেল পুড়িয়ে দেয়ার পর ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় পুরো ছাত্রাবাস। এরপর থেকে হলের নিয়ন্ত্রক ছিলো সাইফুর ও শাহ রনি। তাদের কাছে অসহায় ছিলেন হোস্টেল সুপার। ছাত্রলীগ যা বলতো হোস্টেল সুপারও তাই করতেন। ফলে কলেজ অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারের পরোক্ষ মদদেই ছাত্রাবাসে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা। শুধু ছাত্রাবাস নয়, ক্যাম্পাসেও ছিলো তাদের আধিপত্য। এমসির ক্যাম্পাস মনোরম পরিবেশের ক্যাম্পাস। বিকেল হলেই অনেকেই বেড়াতে যান এই ক্যাম্পাসে। প্রতি নিয়ত ক্যাম্পাসের নির্জন এলাকায় ছিনতাইয়ে ঘটনা ঘটে। এমনকি মহিলাদের শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা ঘটে। আর এসব ঘটনা ঘটাতো সাইফুর ও শাহ রনির নেতৃত্বে। এসব ঘটনা কলেজ কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও কখনোই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এমসির ক্যাম্পাসে ভয়ঙ্কর ছাত্রলীগ নেতা ছিলো সাইফুর ও শাহ রনি। টিলাগড়ের রনজিত গ্রুপের নেতা হওয়ার কারণে তারা ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতো। ক্যাম্পাসের নানা কাজে তাদের ভাগ ছিলো। সাইফুর ও রনির যন্ত্রনায় অতিষ্ট ছিলো ছাত্রলীগের আজাদ গ্রুপের কর্মীরা। সাইফুর ও রনির অপকর্মের প্রতিবাদ করার কারনে বার বার ক্যাম্পাসে তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা হয়েছে।

হুসেন আহমদ নামের এমসি কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতা জানিয়েছেন- ‘ভাই কী বলবো। এমসি কলেজে ওরাই ছাত্রলীগ। আমরা কিছু না। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের সম্পর্ক রয়েছে।’- এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের হোস্টেল দখল, আধিপত্য বিস্তার কোনো কিছুতেই দায় এড়াতে পারেন না অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপার। তাদের দায়িত্বের গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। তবে- দায়িত্ব না জেনেশুনেই ভুল সেটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

অনেকেই বলছেন- এমসি হোস্টেল পুড়িয়ে দেওয়ার সময়ও এই কলেজের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ। এরপরও তিনি ছাত্রলীগ থেকে কলেজ ও হোস্টেলকে রক্ষা করতে কার্যকর উদ্যোগ নেননি। আর তার দুর্বল প্রশাসনিক নেতৃত্বের কারনে শতবর্ষী এমসি কলেজে এবার কলঙ্কের কালিমা লেপন করা হলো। এদিকে- বিতর্ক দেখা দিয়েছে গণধর্ষণের ঘটনার পর এমসি কলেজের গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়েও। ওই কমিটিতে হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিনসহ আরেক হোস্টেল সুপারকে রাখা হয়েছে। যেখানে হোস্টেল সুপারদের গাফিলতির অভিযোগ সেখানে তাদেরকেই আবার তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে তদন্ত কমিটি নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন সাবেক শিক্ষার্থী সহ সুধীজনেরা।মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়