শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৫:০০ সকাল
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আরিফ জেবতিক: আমার সিলেটকে এরা অপবিত্র করে ফেলছে, ছাড়া যাবে না

আরিফ জেবতিক: এমসি কলেজে প্রথম গেছি ক্লাস সিক্সে থাকতে, বিজ্ঞান মেলায় স্কুলের দল হয়ে। এমসি কলেজ আসলে কলেজ না, প্রায় ৫শ বিঘার বিশাল আয়তনের ক্যাম্পাস। ভেতরে ছোট টিলা আছে, বড় প্রায় পাহাড় হতে পারত ধরনের টিলায় প্রিন্সিপালের বাংলো আছে, দীঘি আছে- অনেক কিছুই আছে।
ঢাকায় যেরকম মানুষ অবলীলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘিরে আড্ডা মারে, উৎসবে উচ্ছ্বাসে ছুটে যায়-এমসি কলেজও তেমনি। এই কলেজে পড়েছি, ছাত্র রাজনীতির সাথে ঘনিষ্টভাবে মিলেছি। চব্বিশ বছর আগে যে বৈশাখী উৎসব শুরু করে দিয়ে এসেছি, শুনেছি বিরতিহীন ভাবে তা আজো
চলছে, আজো পহেলা বৈশাখে এমসি কলেজ মুখরিত হয় নববর্ষের আবেশে। আশি নব্বই দশকের অস্ত্রবাজি এই কলেজেও ছিল। তখন তো আজকের মতো পুলিশ রেব এর কড়াকড়ি ছিল না, চট করে মোবাইল বের করে কারো ছবি তোলারও সুযোগ ছিল না-তাই প্রতিটি সংগঠনের কাছেই অনেক অনেক অস্ত্র ছিল। প্রতি সংগঠনে ক্যাডার ছিল। মোল্লা ভাইয়ের ক্যান্টিনের ছোট রুমে, ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে যাওয়ার ব্রিজের নিচে, বোটানি ডিপার্টমেন্টের পরিত্যক্ত হর্টি কালচার শেডের ভেতরে গুলি-ককটেল-চাপাতি-রামদা হকিস্টিক এর বড় বড় গুদাম থাকত। কাটা রাইফেল কিংবা সিকান্দার বন্দুক ছিল এভেইলেবল, ছোটদের হাতে এলজি বা নিদেন পক্ষে টুটু পিস্তল।
পাশপাশি দুটো কলেজ। এমসি কলেজ আর সরকারি কলেজ। আমাদের সময় কোনো দেয়াল ছিল না। জাস্ট একটা ছোট নালা লাফ দিয়ে গেলেই এক কলেজ থেকে আরেক কলেজ। দুই কলেজেই সন্ত্রাস ছিল, মারামারি ছিল। কিন্তু কিছু জিনিস কখনোই ঘটে নাই কোনো ক্যাম্পাসে। প্রিন্সিপাল হাসান ওয়াজেদ স্যার তাঁর ধূষর স্যুট আর লাল টাই পরে যখন প্রিন্সিপালের টিলা থেকে নামতেন, তখন অনেক বড় সংঘর্ষও নিমিষে থমকে যেত। একদম গুলাগুলির মাঝখানে দাঁড়িয়ে স্যার রণহুংকার দিতেন। স্যাররা ছিলেন অফ লিমিট। ছাত্রীদেরকে ডিস্টার্ব করা যায়, সেটা জানাই ছিল না সেকালে। নিজের কলেজের ছাত্রী মানেই ক্যাডারদের দায়িত্ববোধের মাঝে পড়ে-এই ছিল অনুভূতি।
প্রবল সংঘর্ষ হওয়ার পরে হয়তো একদল ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছে না, আরেকদল দিনরাত অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে-কিন্তু ছাত্রী নেত্রীদের কোনো অসুবিধা ছিল না। ছাত্রদলের এপোলো আপা নিরাপদে ক্লাস করছেন, ছাত্রলীগ কিংবা শিবির হয়তো ঐ করিডোর দিয়েই জঙ্গী মিছিল নিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের নেত্রী কনা আপাকে হয়তো রিক্সা ডেকে দিচ্ছে ছাত্রদলেরই এক ক্যাডার, যে কলেজ গেটে বন্দুক হাতে পাহারা দিচ্ছে ছাত্রলীগ ঠেকাতেই। কিন্তু নারীদের জন্য নিরাপত্তাবোধের কোনো কমতি নেই।
বিকেলে বা সন্ধ্যায় আশপাশ থেকে অনেকেই নীরব ক্যাম্পাসে হাটতে আসতেন। আধো আলো আধো অন্ধকার, কেউ কখনো ভাবে নি যে ক্যাম্পাসে কারো নিরাপত্তাবোধের অভাব হবে। তাহলে আমরা আছি কী করতে ! তাই এমসি কলেজ আমাদের রক্তে মিশে আছে। এই তো গত কয়দিন আগেই আমাদের বড় ভাইরা একটা প্রজেক্ট করলেন, বালুচর থেকে যে রাস্তাটা ডানে খেলার মাঠ আর বামে হোস্টেলকে চিরে কালো পিচে আকাবাকা চলে গেছে, তার দুপাশে শিমুল-জারুল-কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া লাগানো হবে। সেই গাছ লাগানো হচ্ছে, সেটা পাহারা দেয়ার লোক রাখা হয়েছে। হয়তো বছর দশেক পরে এই দুই কিলোমিটার রাস্তা দেখতেই লোকে ভিড় করবে।
সিলেট একদমই কম যাওয়া হয়, গত ৭ বছরে হয়তো ৩ বার গিয়েছি। তবু এমসি কলেজেও গিয়েছি। উন্নয়নের দেয়াল হয়েছে হোস্টেলে, মাঠে। দুই কলেজের মাঝেও দেয়াল উঠেছে। বিশাল গেট হয়েছে। আমাদের সময় কোনো দেয়ালই ছিল না তেমন। আমরা প্রকৃতির সন্তান, অবারিত কলেজে সবাই ঢুকেছে বেরিয়েছে। আজ দেয়ালও আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। সোয়াশ বছরের পুরোনো ক্যাম্পাসে একজন নারী ধর্ষিত হয়েছেন!
আমার ক্যাম্পাসকে এরা অপবিত্র করে তুলেছে। আমার সিলেটকে এরা অপবিত্র করে ফেলছে। এই শুওরের বাচ্চাদেরকে ছাড়া যাবে না। এদেরকে যারা বানাচ্ছে, যারা পালছে, যারা পুষছে-সব শুওরের বাচ্চাদের চিহ্নিত করতে হবে। এই সবগুলোকে লাথি দিয়ে সুরমা নদীতে ফেলে দিতে হবে।
এই বদমাশের গুষ্টিকে প্রতিরোধে দলমত নির্বিশেষে সকল সিলেটিকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের হাতে আর কোনো অপশন খোলা নেই।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়