সুজন কৈরী : [২] পুলিশ পরিচালিত জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ বর্তমানে দেশের জনগণের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রæত রোগীকে ফেরি পারাপার, নদী বা সাগরে ডুবে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার, প্রাণনাশের আশঙ্কা, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি-নিপীড়ন, গৃহকর্মী নির্যাতন, কাউকে আটকে রাখা, লিফটে আটকে পড়া, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা, দুর্ঘটনা, অগ্নিকান্ড থেকে শুরু করে পারিবারিক সমস্যা, শব্দ দূষণ, ছিনতাই, টাকা ও নানাবিধ মূল্যবান সামগ্রী হারানোসহ যেকোনো বিপদের সময়েই মানুষ স্মরণাপন্ন হচ্ছেন ‘৯৯৯’ এর। সাধ্যমতো সব পরিস্থিতিতেই তাদের সহযোহিতা করেছে জাতীয় জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ।
[৩] জানা গেছে, নাগরিকের জরুরি যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে ৯৯৯-এ বিনা পয়সায় ফোন করা যায়। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এই সেবা। ৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত কর্মীরা প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবাদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। ৯৯৯ নম্বরে কেউ ফোন করলে সমস্যার ধরন, নাম-পরিচয় ও ঠিকানা জেনে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
[৪] সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিমানবন্দর ক্রসিংয়ে একটি সিএনজি থেকে একজন যাত্রীর হারিয়ে যাওয়া আড়াই লাখ টাকা উদ্ধার করেন ট্রফিক পুলিশ সদস্যরা। এর আগে সাইফুল ইসলাম নামের ওই যাত্রী টাকা ও কাপড়ের ব্যাগ হারিয়ে স্মরণাপন্ন হন ৯৯৯ এর।
[৫] পুলিশ জানায়, যাত্রী সাইফুল ৯৯৯ এ ফোন করে টাকা হারিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে সাহায্য চান। সাইফুল জানান, একটি প্রাইভেট সিএনজিতে ভুলক্রমে একটি ব্যাগ রেখে নেমে গেছেন। যার ভেতরে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও কিছু কাপড় ছিল এবং চালকের গায়ে হলুদ রঙের জামা ছিল। পরে ৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে ব্যাগটি উদ্ধারে এয়ারপোর্ট ক্রসিংয়ে অভিযান চালান ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। একপর্যায়ে বিমানবন্দর ক্রসিংয়ে প্রাইভেট সিএনজি তল্লাসী করে হারিয়ে যাওয়া টাকা ভর্তি ব্যাগ উদ্ধার করেন তারা। পরে টাকার ব্যাগটি প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করেন দুই সার্জেন্ট ইব্রাহিম ও জাকারিয়া। হারিয়ে যাওয়া টাকাসহ ব্যাগ পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন সাইফুল। তিনি ট্রাফিক পুলিশ ও ৯৯৯ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
[৬] এছাড়া বঙ্গোপসাগরে ডুবন্ত জাহাজ থেকে ১১ জন নাবিককে জীবিত উদ্ধার, সুন্দরবনের গহীনে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে ছয় কিশোরকে উদ্ধার এবং মধ্যরাতে ফোন পেয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে প্রসব বেদনায় কাতর নারীকে উদ্ধার, হাওরে হারিয়ে যাওয়া কিশোরদের উদ্ধার, চাকরি হারিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা যুবককে উদ্ধার এবং সরকারি চাল উদ্ধার করার মতো ঘটনাও ঘটেছে ৯৯৯ এ ফোন কলের মাধ্যমে।
[৭] এভাবেই প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য বিপদে পড়া মানুষকে সাহায্য করে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যেকোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিপদগ্রস্ত মানুষ পুলিশ পরিচালিত ৯৯৯ এ ফোন করে যেকোনো ধরনের সহায়তা পেয়ে যাচ্ছেন।
[৮] জাতীয় জরুরি সেবার কার্যক্রম পরিচালিত হয় রাজধানীর আবদুল গণি রোডের পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে। দুটি ফ্লোরে সাড়ে চার শতাধিক কর্মী কাজ করেন। যারা কল রিসিভ করেন, তাদের বলা হয় কলটেকার। তাদের তত্ত¡াবধানের জন্য আছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এখানে চার পালায় কাজ করেন তারা। অ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য রয়েছে আলাদা ডেস্ক।
[৯] জাতীয় জরুরি সেবা কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সেবা পেতে ৯৯৯ নম্বরে মোট কলের সংখ্যা দুই কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ৭টি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭২টি কলের পরিপ্রেক্ষিতে সেবা দেয়া হয়েছে। যা মোট কলের ২২ শতাংশ। এর মধ্যে নারীদের এক লাখ ৬১ হাজার ৭৫৪টি ও শিশু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৪ লাখ ৫ হাজার ৮৩২ জনকে সেবা দেয়া হয়েছে।
[১০] এদিকে কোভিড সংক্রমণ শুরুর পর গত ১৮ মার্চ থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৯৯৯-এ মোট কলের সংখ্যা ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩টি। এর মধ্যে জরুরি সেবা দেয়া হয় ১৮ হাজার ৬৪৯ জনকে। বাকি ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৪টি কল ছিল করোনা সংশ্লিষ্ট। এর বাইরে এই সময়ে দুই লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৪ জন কল করেছেন পুলিশের সহায়তা চেয়ে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার খবর জানাতে ও নিরাপত্তা চেয়ে এবং এই সময়ে ফায়ার সার্ভিস সেবা দেয়া হয়েছে ৪১ হাজার ৭৫১ জনকে, অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়া হয়েছে ৪০ হাজার ১৭২ জনকে।
[১১] ৯৯৯ এর দায়িত্বে থাকা পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, ৯৯৯ এর সবচেয়ে বড় অর্জন হলো মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা। সবাই এখন ৯৯৯ সম্পর্কে অবগত। এখান থেকে কী ধরনের সেবা পাওয়া যায়, তা সবাই জানেন। প্রয়োজনে তারা কল করেন এবং কাক্সিক্ষত সেবা পান। সেবাটিকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে কাজ চলছে। আগে কিছু ফেক কল আসত, তার পরিমাণ কমে এসেছে। এখন মোট কলের সেবা দেয়ার হার বাড়ছে, যদিও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গড় হার ২২ শতাংশ।
আপনার মতামত লিখুন :