এ বি এম কামরুল হাসান: তেইশ বছর আগের কথা। যশোরের একটি সীমান্তবর্তী থানায় আমার কর্মস্থল। এক রোগী আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমার শিক্ষক বাবার পরিচয় দিতেই তিনি বললেন, আপনার বাবা আমার শিক্ষক। আমার কথা বলবেন, তিনি চিনবেন। খুব দৃঢ়তার সাথে বললেন, জানি, স্যারের হাজার হাজার ছাত্র। সবাইকে চেনা সম্ভব না, তবে আমাকে চিনবেন। বিস্মিত হলাম। বাসায় ফিরে বাবাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি মৃদু হেসে বললেন, হাঁ, আমি তাঁকে ভালোভাবেই চিনি।
স্বাধীনতার পরে কোনো একদিন ক্লাসে অপ্রাসঙ্গিকভাবে উঠে দাঁড়িয়ে তিনি (রোগী) বলেছিলেন, স্যার, আমি দারোগা হবো। আমার বাবা তাঁকে তাৎক্ষণিক ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন, অপ্রাসংগিকতার জন্য। তারপর ছাত্রের সাথে শিক্ষকের অনেকদিন দেখা নেই। কয়েক বছর পর ছাত্র মিষ্টি নিয়ে হাজির কলেজে, স্যারদের সালাম করতে। আমার বাবা এখন প্রয়াত। ঘটনা বিষয়ে তাঁর মূল্যায়ন ছিল, ছাত্রের বাড়ি কোনো এক সীমান্তবর্তী থানার পাশেই। ছোট বেলা থেকেই সে বাড়ির পাশের থানার কর্মকর্তাদের আয় বাণিজ্য দেখে দেখে বড় হয়েছে। তাই তার সবর্দাই ধ্যান ছিল দারোগা হবার।
ক্লাসে অবচেতন মনে দাঁড়িয়ে বলেছিলো দারোগা হবার বাসনার কথা। হয়েছিলও তাই। গল্পটার অবতারনা করলাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অষ্টম শ্রেণী পাশ ড্রাইভারের আয় বাণিজ্য দেখে। ঢাকা শহরে ২টা বাড়িতে ২৪ টা ফ্লাট, ১০ কাঠাঁর প্লট, হাতিরপুলে আরেকটি নির্মাণাধীন বাড়ি। শতাধিক কোটি টাকার মালিক। জীবনে আর কি চাই? আট ক্লাস পাস করেই একশো কোটি টাকা, ষোল ক্লাস পাশ করলে কি দুশো কোটি? এখন থেকে প্রাইমারিতে পড়াকালীন অনেকে হয়তো ক্লাসে অপ্রাসংগিক ভাবে বলবে, স্যার আমি ড্রাইভার হবো। আট ক্লাস পাশ করেই জীবনে শতকোটিপতি হবার সহজ সমাধান।
কে ছাড়তে চায় এ সুযোগ! এখন থেকে হয়তো অনেকেই এই অধিদপ্তরের ড্রাইভার হবার স্বপ্ন দেখবে। ইতিমধ্যে অনেকে স্বপ্ন (!) দেখতে শুরু করেছে! এক টিভি রিপোর্টে জনৈক চিকিৎসককে ক্ষোভের সাথে বলতে শুনেছি, ‘আমি ডিজি হতে চাইনা, আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা আমি ডিজির ড্রাইভার হয়ে মারা যেতে চাই’। মনে হচ্ছে, পদটি অনেকের জন্য লোভনীয় হয়ে গেলো। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোই পারে এই লোভকে সমূলে বিনষ্ট করতে। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ব্যক্তিগুলোর যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করুন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার সদিচ্ছার মূল্য দিন। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :