লিহান লিমা: [২] জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকীতে সোমবার ভার্চুয়াল সম্মেলনে এক হয়েছেন বিশ্বনেতারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পর প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি এই মুহুর্তে করোনা ভাইরাস মহামারী ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তার ওপর যোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আস্থাহীনতা ও চীনের জেদী মনোভাব এবং এই দুই দেশের ক্রমবর্ধমান শত্রুতা। আল জাজিরা

[৩] প্রতিষ্ঠাবার্ষিকতে ১৯৩টি দেশের যৌথ সম্মেলনে ইভেন্টে নিজেদের ওয়েবসাইটে জাতিসংঘ লিখেছে, ‘বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে ফেলা নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বজুড়ে ভঙ্গুর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।’

[৪] সোমবার নিজের ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, ‘কোনো দেশেরই বৈশ্বিক বিষয়ে একক কর্তৃত্ব, অন্যের ভাগ্য নির্ধারণ বা সব সুযোগ নিজের সুবিধার্ধে গ্রহণের অধিকার নেই। একতরফা কর্তৃত্বের দিন শেষ হয়েছে।’

[৫] আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জলবায়ু ও ইরান ইস্যুতে নেয়া সিদ্ধান্তে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাকি বিশ্বের দ্বিমতের এই সময়ে নিজকে বহুতত্ত্ববাদী হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছে বেইজিং।

[৬] ভার্চুয়াল সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রথম বক্তা হিসেবে রাখা হলেও তার স্থলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ক্ল্যারিথ নরম্যান কেলেট। আল জাজিরার কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণে জাতিসংঘের গুরুত্ব দেশটির কাছে কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’ মূলত ইরানের ওপর পুনরায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞারোপ না করায় ট্রাম্প জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকিতে প্রথম দিনের ইভেন্টে অংশ নেন নি। যদিও ২০১৮ সালে একক সিদ্ধান্তে ইরাণ পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের হয়ে নিয়েছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোই বলছে, ওয়াশিংটনের এখন এমন দাবি করার কোনো অধিকার নেই।

[৭] অন্য নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মোকাবেলায় দেশগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে খর্ব করা রেষারেষির নিন্দা জানান।

[৮] ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর ছত্রভঙ্গ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলো টুকরো টুকরো হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে দখলদারিত্বের লড়াই, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার, গণহারে গ্রেপ্তারের কারণে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। এবং এটি দায়ীদের শাস্তি দিতে অক্ষম হয়ে পড়ছে।’

[৯] কিছু দেশ নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘের সংস্কার দাবি করে। তারা জানায়, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের একক ভেটো ক্ষমতার বিষয়টি অন্যায্য। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেন, ‘বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের ভাগ্য ৫টি দেশ নির্ধারণ করবে এটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

[১০] জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘মহামারী বিশ্বের ভঙ্গুর ব্যবস্থাপনাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। কেউই বৈশ্বিক সরকার চায় না কিন্তু আমাদের বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা উন্নত করতে কাজ করতে হবে।’