শাহীন চৌধুরী: জ্বালানি হিসেবে দিন দিন এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও এ নিয়ে যেমন কোন নীতিমালা তেমনই এর দামের ক্ষেত্রেও নেই কোন বাধাধরা নিয়ম। ফলে বেসরকারি কোম্পানিগুলো ইচ্ছে মত গ্রাহকদের কাছ থেকে এলপি গ্যাসের দাম নিচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘ সময় যাবৎ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। ইতিপূর্বে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসি-কে চিঠি দেয়া। তার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দিতে যাচ্ছে বিইআরসি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্রমতে, কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সরকারের এই উদ্যোগকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকরা এতে বেশ খুশী। বাসাবাবাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ব্যাপক ভাবে বেড়েছে এলপিজি’র চাহিদা। বর্তমানে দেশে এলপিজি’র চাহিদা প্রায় দশ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার কারণে এর দামও নিচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি ইচ্ছে মত। ইতিপূর্বে ২০ কেজির একটি এলপিজি সিলিন্ডার ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অবশ্য করোনার কারনে এখন তা নেমে এসেছে সাড়ে আটশ’ থেকে নয়শ’ টাকায়।
সরকার আগামী ২ বছরের মধ্যে ৭০ শতাংশ বাসাবাড়িকে এলপিজির আওতায় আনতে চাইলেও এর দাম ও নিরাপত্তার মান নিয়ে বিতর্কের কারণেই তা সম্ভবপর হচ্ছে না। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি নীতিমালা তৈরির কথা বলা হলেও তা শুধু প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, নীতিমালা তৈরিতে আরো কিছু সময় লাগবে। আর সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে বর্তমান বাজারমূল্যের তুলনায় এলপিজির দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে এক অনলাইন আলোচনায় এলপিজি দাম নির্ধারণ করতে ফর্মুলা তুলে ধরে বিইআরসি জানিয়েছে, সারা দেশে এলপিজির অভিন্ন একটি মূল্য তালিকা হতে পারে। একইসঙ্গে মাসিক বা প্রতি ৩ মাসে একবার করে এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে চায় তারা। এজন্য ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাম নির্ধারণ করতে চায় রেগুলেটরি কমিশন।
এলপিজির দাম কীভাবে আরও কমিয়ে আনা সম্ভব-এ বিষয়ে বিইআরসির পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণে বড় জাহাজে করে এলপিজি আনতে হবে। এককভাবে না পারলে যৌথভাবেও এলপিজি আনা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বিইআরসির উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, এলপিজির আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের টন প্রতি পরিবহন ব্যয় ভারতের চেয়ে দ্বিগুণ। এই ব্যয় কমানো গেলে দেশে এলপিজির দাম কমানো সম্ভব। বিইআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের হলদিয়া বন্দরে টনপ্রতি এলপিজি আমদানি ব্যয় ৬০ ডলার অন্যদিকে বাংলাদেশে যা সর্বোচ্চ ১৩০ ডলার। বলা হয়, মোংলা বন্দরের হারবারিয়া এলাকায় ৩০ হাজার টন এলপিজির জাহাজ আনা সম্ভব। এটি করা সম্ভব হলেও দেশে এলপিজির পরিবহন ব্যয় টনপ্রতি ৮০ ডলারে নামিয়ে আনা যাবে।
ভারতের কলকাতায় এলপিজির দর কেজি প্রতি ৫০ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশে এই দাম স্থান ভেদে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা। বলা হচ্ছে, ভারতে পরিবহন ব্যয়ের তুলনায় বাংলাদেশে পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ এছাড়া ভারতে এলপিজির বিপণন ব্যয় কেজিতে ১৫ টাকা হলেও বাংলাদেশে তা ৩০ থেকে ৩২ টাকা। এলপিজি পর্যায়ে মূসক আছে পাঁচ ভাগ। এটি সরকার নির্ধারিত সময়ে পরিবর্তন হতে পারে। স্টোরেজ এবং বোতলের দাম বছরে একবার ঠিক করতে চায়।
এলপিজি সংগঠনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, বেসরকারি খাতে যদি কোনও ব্যবসা করতে চায় তাহলে বিপিসির জন্য একটি মার্কেটিং ফি দিতে হয়। পাঁচ লাখ টাকা করে বিপিসিতে বছরে দিতে হয়। আবার এখন বিইআরসি চিঠি দিয়ে বলছে তারা দাম ঠিক করতে চায়। যেহেতু দুই পক্ষই আমাদের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে। তাই আমরা ঠিক জানি না কে রেগুলেটর, বিইআরসি না বিপিসি?।
এ প্রসঙ্গে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, আইন অনুযায়ী লাইসেন্সধারীরা আবেদন না করলে বিইআরসি মূল্য নির্ধারণ করতে পারে না। কিন্তু কেউ আবেদন না করলে বিইআরসি তাহলে কীভাবে দাম নির্ধারণ করছে। এ সময় বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, কেউ না চাইলে আমরা দাম পরিবর্তন করতে পারি না। কিন্তু এখন আমরা দাম নির্ধারণ করছি।
আপনার মতামত লিখুন :