শিরোনাম
◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ

প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৮:২৩ সকাল
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৮:২৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১০ বছর দাফনহীন ছিল শেষ সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মাজিদের মরদেহ!

ডেস্ক রিপোর্ট  : সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মাজিদ বসে বসে ফরাসি দার্শনিক মনটেইনের রচনাবলী পড়ছিলেন। তখন রাত। ইস্তাম্বুলের পুলিশপ্রধান আদনান বেগ তার দলবল নিয়ে এক্কেবারে সুলতানের বাসভবনে হানা দেয়।

সুলতান যারপরনাই বিস্মিত হন। সামান্য একজন পুলিশ, সুলতানের বাড়ি ঢুকে যাবে অনুমতি ছাড়া। কিন্তু তার বিস্ময় বাড়িয়ে দিতে আদনান বেগ জানান আজকে পার্লামেন্টে আইন পাশ হয়েছে। সুলতান ফজরের পূর্বেই বাসভবন ছাড়তে হবে। ছাড়তে হবে তুরস্কও!

১৯২৪ সালের ৩ মার্চ আইনটি পাশ হয়। সেক্যুলার পার্লামেন্টের ৪৩১ নং এই আইনে খিলাফাহ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। উসমানি পরিবারের সবার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। আইনে আরও বলা হয় তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে। তারা একদিনের নোটিশে তুরস্ক ছাড়তে হবে। ভবিষ্যতে কখনো তুরস্কে আসতে পারবে না। এমনকি মৃত্যুর পর তাদের লাশও তুরস্কের মাটিতে দাফন করতে দেওয়া হবে না।

ফজরের আগেই ভোর সাড়ে পাঁচটায় সুলতান কপর্দকহীন অবস্থায় পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ বাড়ি ত্যাগ করেন। সাড়ে এগারটায় ইস্তাম্বুলের শাতালজা (উচ্চারণ নিয়ে কনফিউজড, ইংরেজিতে Catalca) রেলস্টেশনে পৌঁছেন। সবাই ছিল ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত।

মাঝরাতে তাদের জন্য বরাদ্দ ট্রেন আসে, সারাদিন তারা এখানে অপেক্ষমান ছিলেন। তাদের জন্য দুটি কামরা বরাদ্দ ছিল। ট্রেনটি তাদেরকে নিয়ে যায় ফ্রান্সের নিস শহরে।

আইনটি পাশ হওয়ার পর আকরাম ইযযাতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উসমানি পরিবারের তালিকা করার জন্য। তারা তালিকাটা এমনভাবে করেছে যেন প্রতিটা পরিবারই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছু সদস্যকে তুরস্কে রেখেছে। বাকিদেরকে বহিষ্কার করেছে।

যেমন সুলতান আবদুল মাজিদের ছেলে উমর ফারুক আফেন্দিকে বহিস্কার করা হয়নি, বরং সে তুর্কি সেনাবাহিনির উচ্চপদে কর্মরত ছিল। আকরাম পাশার প্রস্তাব ছিল শুধু জীবিতদেরকে নয়, বরং মৃত সুলতানদের লাশও কবর থেকে তুলে তুরস্কের বাইরে ফেলে আসা।

১৫৮ জনের তালিকা করা হয়। ৭৯ জন উসমানি পরিবারের, বাকি ১০৬ জন তাদের আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ী। ১৫৮ জনের মাঝে ৯৭ জনই ছিল নারী। শিশুও ছিল বেশ কিছু।
.................

বহিষ্কারের পূর্বে উসমানি পরিবার মিশরের তৎকালীন রাজা ফুয়াদের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেছিল। রাজি হয়নি। নিস শহর থেকে পরিবারের সদস্যরা যার যার সুবিধামত ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশে। এসময় সুলতান ব্রিটিশ এক প্রিন্সের বাড়িতে নামমাত্র মূল্যে ভাড়া থাকতেন।
পেইন্টিং জানতেন। সেগুলো বিক্রি করে খরচ চালাতেন।

উসমানি পরিবার এসময় ভয়াবহ অর্থকষ্টে নিপতিত হয়। অভাবের তাড়না সইতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা করে। কেউ কেউ ফ্রান্সের রাস্তায় মরে পড়ে ছিল। দাফন করার মত টাকাও ছিল না। তাই তৃতীয় শ্রেণীর গোরস্থনে তাদের ঠাই হয়েছে।
সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের কন্যা আয়েশা সুলতানের আত্মজীবনীতে এই দারিদ্রের মর্মস্পর্শী বর্ণনা আছে।

সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মাজিদের কন্যা খাদিজা সুলতান। তিনি দুররে শাহওয়ার নামে পরিচিত ছিলেন। সেসময় তার মত সুন্দরী বিশ্বে দ্বিতীয়টা মেলা ভার ছিল।

বহিষ্কারের সময় তিনি ছিলেন দশ বছরের বাচ্চা। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তার বিয়ে হয় আমাদের হায়দারাবাদের নিজাম হেমায়েত আলি খানের সাথে। তারপর থেকে নিজাম সুলতানকে নিয়মিত অর্থ প্রেরণ করত।
.............

সুলতান ১৯৪৪ সালে প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন। তার অসিয়ত ছিল তার পূর্বপুরুষদের সাথে যেন তাকে দাফন দেওয়া হয়। সেজন্য দুররে শাহওয়ার নিজামের বেগম হিশেবে তুরস্কে যান, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কিছুতেই মৃত সুলতানকে তুরস্কে দাফন করতে দিতে রাজি না।

দশ বছর পর ১৯৫৪ সালে তিনি আবার তুরস্কে যান, তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান আদনান মেন্দেরেসকে রাজি করাতে সক্ষম হন। কিন্তু পার্লামেন্টের কিছু সদস্য এর বিরোধিতা করে, ফলে সেবারও আটকে যায় নিজ ভূমিতে খলিফার দাফন।

এই দশবছর তার মরদেহ ফরাসি সরকারের কোন হিমাগারেও হেফাজত করা হয়নি। বরং প্যারিসের এক মসজিদে শাহযাদি ও স্থানীয় মুসলিমদের খরচে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছিল।

দশবছর পরেও যখন তুর্কি সেক্যুলার সরকার নিজ ভূমিতে খলিফাকে দাফনের অনুমতি দেয়নি, দুররে শাহওয়ার সৌদি বাদশাহ সৌদ বিন আবদুল আযিযের নিকট জান্নাতুল বাকিতে সুলতানকে দাফনের ইচ্ছা পোষণ করে। সৌদ অনুমতি দেয়। সুলতানকে ৩০ শে মার্চ, ১৯৫৪ সালে জান্নাতুল বাকিতে তার মৃত্যুর দশবছর পর দাফন করা হয়।
................

পরবর্তিতে ১৯৪৯ সালের ২৫ শে মার্চ উসমানি পরিবারের বিধবা নারীদেরকে বেশকিছু শর্তসাপেক্ষে তুরস্কে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়।

১৯৭৪ সালে সেই আইন সংশোধন করে পুরুষদেরকেও ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয় তবে এটা নিশ্চিত করা হয় যে ফিরে এলেও তারা কেউ তুরস্কের নাগরিকত্ব পাবে না। দুররে শাহওয়ার কক্ষনোই আর তুরস্কে ফিরে যাননি।

অবশেষে ২০০৪ সালে এরদোয়ান সরকার আইন পাশ করে উসমানি বংশধরদেরকে নাগরিকত্ব প্রদান করে। এবং তাদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়াকে বে-আইনি ঘোষণা করে।

জীবিত সদস্যদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করে। যারা প্রত্যাবর্তন করেছে তাদেরকে যথাযোগ্য পদে নিয়োগ দিয়েছে। এমনকি ১১ জন সদস্য অবৈধভাবে তাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া উত্তরাধিকার সম্পত্তি ফিরে পেতে আদালতে মামলা করেছে।
.............
সূত্র- Rakibul Hasan

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়