শিরোনাম
◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২৯ দুপুর
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মারুফ রসূল: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের লেখায় ইতিহাসের বিকৃতি নৈতিক স্খলনেরই শামিল

মারুফ রসূল : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আমার বিশ^াস, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ যারা করছেন, তারা অবশ্যই ২০১৮ সালে স্বাধীনতা দিবসে যুদ্ধাপরাধীদের গণমাধ্যম নয়াদিগন্তে ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে মোর্শেদ হাসান খানের লেখাটি পড়েছেন। যদি পড়ে থাকেন, তবে এটা বোঝা কি খুব কষ্টকর যে, ‘মতপ্রকাশ’ আর ‘ভুল-বিকৃত তথ্য’ প্রকাশÑ দুটো আলাদা বিষয়। মতপ্রকাশের নামে যদি কেউ তার লেখায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা জাতিগত বিদ্বেষ তৈরি করে, তখনো কি আপনারা বলবেন- ‘তিনি মতপ্রকাশ করিয়াছেন মাত্র!’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। প্রশাসনের গৃহীত ব্যবস্থার প্রতিবাদে অনেকেই দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এর প্রসঙ্গ এনে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে ৫৬(২) ও ৫৬(৩) ধারা দুটোর উল্লেখ করে তারা দাবি করছেন, প্রশাসন অধ্যাদেশ বহির্ভূত কাজ করেছে। আলোচনার সুবিধার্থে আমি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩- এর ৫৬(২) ধারাটি নিচে তুলে দিচ্ছি।

The service conditions shall be determined without any prejudice to the freedom of the teacher or officer to hold any political views and to keep association with any lawful organization outside the University and shall be clearly stated in the contract.Õ [m~Î: University of Dhaka The Calendar Part I, President's Order No. 11 of 1973, THE DHAKA UNIVERSITY ORDER, 1973 With subsequent amendments, Published by The University of Dhaka, April, 2004, p. 38]

প্রশ্ন হলো- মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কি তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে? উত্তর হলোÑ না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা আছেন এবং তারা একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। তাদের সবাইকে তো চাকরিচ্যুত করা হয়নি। মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তার লেখায় স্বাধীনতা-সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃতি ও ভুল-মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের কারণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার লেখায় রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে বিকৃত-মিথ্যা-ভুল তথ্য উপস্থাপন করতে পারেন না। যদি করে, তবে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই করেছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের লেখায় স্বাধীনতা-সংগ্রাম সংক্রান্ত ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো কিনৈতিক স্খলনেরই শামিল নয়?
প্রসঙ্গত অধ্যাদেশের ৫৬(৩) ধারাটি একবার পড়ে দেখা যেতে পারে-

A teacher or officer of the University may be dismissed only on grounds of moral turpitude or inefficiency, but no such teacher or officer shall be dismissed unless an enquiry into the charges of moral turpitude or inefficiency is held by an Enquiry Committee on which the teacher or the officer may be represented by a person nominated by him [Ibid].

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের সাদা দলের পাঠানো প্রেস রিলিজে উল্লিখিত অধ্যাদেশের প্রথম স্ট্যাটিউটের ৪৫(৩) ধারার বক্তব্যও অনেকটা এরকম। আগ্রহীরা চাইলে পূর্বোক্ত সূত্রের ১০৬ নম্বর পৃষ্ঠা দেখতে পারেন। ফলে যে কথাটি আগে বলেছিলাম, জ্ঞাতসারে স্বাধীনতা-সংগ্রামের ইতিহাসে বিকৃতি ঘটানো নৈতিক স্খলনের শামিল। এমন তো নয় যে মোর্শেদ হাসান যা লিখেছেন, না জেনে লিখেছে। কেননা, ঘটনার পরদিনই (২৭ মার্চ ২০১৮) প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিবাদলিপির সংবাদ-ভাষ্যে দেখলাম, এটি উল্লেখ করেই তারা মোর্শেদ হাসান খানের চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, যেহেতু সে ক্ষমা চেয়েছে, সুতরাং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হোক। মোর্শেদ হাসান তার প্রেস বিজ্ঞপ্তির কোথাও কি লিখেছিলেন তিনি ভুল করেছেন? তিনি বলেছিলেন, ‘জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায়’ সে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। যে নিজেই ভুল স্বীকার করেননি, ছাত্র ইউনিয়ন তার পক্ষে হঠাৎ সাফাই গাইতে গেলো কেন- সেটা বুঝলাম না।
মোর্শেদ হাসানের লেখার এক জায়গায় আছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সময় ‘তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের লেশমাত্র পাওয়া যায়নি’। এখন ছাত্র ইউনিয়নের তো উচিত পার্টির সিনিয়র নেতাদের জিজ্ঞেস করা, ‘তৎকালীন নেতারা’ কেন কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুললেন না। কারণ তাদের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। ভুল ও মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে রাজনৈতিক অপ-উদ্দেশ্য প্রচার আর স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ এক জিনিস নয়। প্রথমটা অপরাধ আর অপরাধের বিচারের জন্য আইন আছে- বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই আইনের দ্বারস্থ হয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিহাস বিকৃতিকে মত প্রকাশের পপুলিস্ট অ্যাক্টিভিজম মনে করলে বলতে হয়- আপনি অ্যাক্টিভিজমও বোঝেন না, ফ্রিডম অব স্পিচও বোঝেন না। আপনার জন্য তখন সমবেদনার ভাষাও থাকে না। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়