শিরোনাম
◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল

প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১০ দুপুর
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৭ মেগা প্রকল্পে খরচ লাখ কোটি টাকা : গড় অগ্রগতি ৪৪.২৮ ভাগ, এগিয়ে পদ্মা সেতু, পিছিয়ে রেল সংযোগ প্রকল্প

ডেস্ক রিপোর্ট : ডেস্ক রিপোর্ট : এ পর্যন্ত ৭টি মেগা প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭২ কোটি টাকার বেশি, যা মোট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক। কিন্তু বাস্তবে গড় অগ্রগতি মাত্র ৪৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। সবচেয়ে এগিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু-৮১ শতাংশ। সবেচেয়ে কম বাস্তবায়ন হয়েছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের। এটির অগ্রগতি ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যগুলো হচ্ছে: মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প। কোভিড-১৯-এর ধাক্কা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি অধিকাংশ প্রকল্প। লকডাউনের পর গতি বাড়ছে ধীরে। বিদেশিরা পুরোপুরি কাজে যোগদান করেননি এখনও। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থের কোনো সমস্যা নেই।

গত জুলাই পর্যন্ত এই হিসাব দেয়া হয়েছে ফাস্টট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদনে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান রোববার যুগান্তরকে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পগুলোর যে গতি ছিল এখন তা নেই। ধীরে ধীরে কাজের গতি বাড়ছে। করোনার সময়ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। সেখানে ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো ছিল। যখন বিমান চলাচল বন্ধ ছিল তখনও রাশিয়ার কর্মীরা বিমান রিজার্ভ করেই এসেছিলেন। অগ্রগতির দিক থেকে পদ্মা সেতু সবচেয়ে এগিয়ে। রেল ও সড়ক এবং সেতুর প্রকল্পগুলো এগিয়ে চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকার কোনো সমস্যা নেই। চাহিদা অনুযায়ী মেগা প্রকল্পে টাকা দেয়া হচ্ছে। আমরা কাজ বুঝে নেব এবং টাকা দেব।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৭টি মেগা প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৮৭ হাজার ২৯৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে এক লাখ ৮৫ হাজার ১২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে দুই হাজার ১১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা জোগান দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে এক লাখ ৬ হাজার ৫৭২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৭ হাজার ৪৬৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫৯ হাজার ১০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এদিকে প্রকল্পগুলোর পেছনে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে অর্থাৎ শুধু জুলাই মাসে মোট খরচ হয়েছে এক হাজার ৩৩০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এই অর্থবছরে (২০২০-২১) বরাদ্দ রয়েছে ৩৯ হাজার ৫৭৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

ফাস্টট্যাক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হার ৮১ শতাংশ। ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৪২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া নদীশাসন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৪ শতাংশ। তবে প্রকল্পটি নির্দিষ্ট মেয়াদে শেষ হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনায় লকডাউনে কাজ প্রায় স্থবির ছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। তবে পুরোপুরি গতি আসেনি। দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে ৩৫ শতাংশ শ্রমিক এখনও কাজে যোগ দেননি। চীনা শ্রমিকরা বেশিরভাগ এখানেই ছিলেন। অর্থনৈতিক কোনো সমস্যা নেই। মেয়াদ বাড়াতে হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩১ হাজার ৭৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর্থিক ও সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, করোনা শুরুর আগে ৬-১০ হাজার শ্রমিক এ প্রকল্পে কাজ করতেন। কিন্তু এখন প্রতিদিন ১১-১৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার বিদেশি শ্রমিক। চলতি বছরের শেষদিকে আরও দুই হাজার রাশান কর্মী যোগ দেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থের কোনো সংকট নেই।

মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পটি ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটির মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৭ দশমিক ১০ শতাংশে। করোনার কারণে কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকলেও এখন ধীরে ধীরে গতি বাড়ছে। প্রকল্পের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, চীনা কর্মীরা এখানেই ছিলেন। জাপানি কর্মীদের অর্ধেক যোগ দিয়েছেন। থাইল্যান্ডের সব কর্মীই এসেছেন। এখন উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। অন্যান্য কাজও শুরু হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৫৪ দশমিক ৫১ শতাংশ আর ভৌত অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ব্যয় ৪ হাজার ৯৫৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ২৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সার্বিক ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪১ শতাংশ। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, অর্থের কোনো সংকট নেই। ঈদের পর থেকে বিদেশি শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। করোনার আগে ১৭-১৮শ’ শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করতেন। এখন ১৪-১৫শ’ শ্রমিক কাজ করছেন। তবে বৃষ্টির কারণে অনেক স্থানে কাজ করা যাচ্ছে না। এজন্যই শ্রমিক সংখ্যা কম মনে হচ্ছে। প্রকল্পটিতে গতি ফিরছে।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ২১ কোটি টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩৩ দশমিক ১৮ শতাংশ আর সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ ছাড়া সার্বিক অগ্রগতি ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সূত্র- যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়