সুজন কৈরী : মাদক ব্যবসায়ী নারীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ায় উচিৎ শিক্ষা দিতে গ্রেপ্তার নারী মাদক কারবারির কথিত প্রেমিক ও কাশেম হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন- মাসুদ, রেজাউল ও রুবেল।
বুধবার পটুয়াখালী থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ারসহ হত্যাকারী মাসুদ এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে বাকি তিন জনকে গ্রেপ্তার করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।
গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশন এলাকার ফুটপাতে র্যাবের সোর্স কাশেম ওরফে কাইশ্যাকে (৩৫)। ওই ঘটনায় ৬ সেপ্টেম্বর নিহতের স্ত্রী নাহার বাদি হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
বৃহস্পতিবার ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর প্রায় ১১শ’ গ্রাম গাঁজাসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন একজন নারী মাদক ব্যবসায়ী ও তার ছেলে। এরপর শেরেবাংলা নগর থানায় র্যাব বাদি হয়ে মামলা করে। গ্রেপ্তার নারী মাদক ব্যবসায়ীর নামে আগের তিনটি মাদক মামলা তদন্তাধীন। ছেলেও দুটি মামলার আসামি। চল্লিশোর্ধ্ব ওই নারী মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে অসম ও অসামাজিক সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাতুল।
রাতুলের ধারণা জন্মে, ওই নারী মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়ার পেছনে হাত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স হিসেবে পরিচয় দানকারী কাশেমের। এ ঘটনায় কাশেমকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে হত্যার পরিকল্পনা করে রাতুল। এর জেরেই পরিকল্পিতভাবে গত ৫ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয় কাশেমকে।
ডিসি হারুন বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মামাতো ভাই লেগুনা চালক রেজাউলসহ রাতুল আড্ডা দেন পূর্বপরিচিত রুবেলের দোকানে। আড্ডার মাঝে এসে যোগ দেন রিকশাচালক মাসুদ। কথায় কথায় কাশেমকে শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা গুছিয়ে আনা হয়। রাতুল ও রুবেলের মোটরসাইকেলে চারজন মিলে খুঁজতে থাকে কাশেমকে। না পেয়ে তার স্ত্রী নাহারকে কাশেমের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা এবং স্বামীকে যেন এ বিষয়ে কিছু জানাতে না পারে সে জন্য নাহারের মোবাইল ফোনটিও ভেঙে ফেলা হয়।
একপর্যায়ে উড়োজাহাজ ক্রসিং এলাকায় তারা কাশেমকে পেয়ে ধারালো সুইচ গিয়ার বের করে ধাওয়া করতে থাকে। প্রাণভয়ে দৌড়াতে থাকা কাশেম পরিকল্পনা কমিশনের সামনের ফুটপাতে পড়ে যান। এরপর কাশেমকে ধরে ফেলে তারা। রাতুলের সুইচ গিয়ার দিয়ে মাসুদ উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকে কাশেমকে। এক পর্যায়ে কাশেমের নিথর দেহ ফেলে চলে যায় তারা। পরে পথচারীরা উদ্ধার করে কাশেমকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন নিহতের স্ত্রী নাহার বাদি হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। ঘটনার পরই তদন্ত শুরু করে থানা পুলিশ। তৈরি করা হয় একাধিক টিম। এক পর্যায়ে পটুয়াখালীর দুর্গম চরাঞ্চল থেকে সুইচ গিয়ারসহ আটক করা হয় হত্যাকারী মাসুদকে। আর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মূল পরিকল্পনাকারীসহ বাকি তিন জনকে।
আপনার মতামত লিখুন :