শিমুল মাহমুদ: [২] বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে কুকুরের সঙ্গে মানুষের যে সহাবস্থান নষ্ট হবে তাই কুকুর অপসারণ না করে স্থায়ী বন্ধ্যাত্বকরণ (লাইগেশন) পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সংগঠন অভয়ারণ্যের সঙ্গে কুকুরদের বন্ধ্যাত্বকরণ প্রকল্প চলছে। যদি উত্তর সিটি করপোরেশনে এই প্রকল্প চলতে পারে তাহলে দক্ষিণে কেন এই প্রকল্প চলবে না, এমন দাবি প্রাণীপ্রেমী সংগঠনগুলোর কর্তাব্যক্তিদের।
[৩] কুকুর অপসারণের সিদ্ধান্তের ফলে কুকুরের কামড় বেড়ে যাওয়া ও রেবিস ভাইরাস বৃদ্ধির ঝুঁকি সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ।
[৪] তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত, বিজ্ঞান বিরোধী সিদ্ধান্ত। এমন সিদ্ধান্তের ফলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের ফলে কুকুরের মধ্যে যে হের্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছিল সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। কুকুরগুলো যে এলাকাগুলিতে থাকে সেসব এলাকার মানুষগুলোর সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিরাজ করে। তারা সাধারণত স্থানীয় কাউকে কামড় দেয় না।
[৫] আইইডিসিআরের সাবেক এই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, যখন এই কুকরগুলোকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে তখন তারা সেখানকার কুকুরদের মানবে না এবং স্থানীয়দের মানবে না। ফলে কুকুরে কুকুরে মারামারি হবে এবং কুকুর মানুষদেরও মারতে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রেবিস নির্মূলে সারা দেশ জুড়ে টীকা দিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কুকুরগুলোকেও টিকা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং রেবিস না ছড়াতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে।
[৬] পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ারের (প ফাউন্ডেশন) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্থপতি রাকিবুল হক এমিল বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বন্ধ্যাত্বকরণ প্রকল্প করা উচিত, অপসারণ কোন সমাধান না। শহর থেকে যদি কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তাহলে তো আপনি অপসারণ করতে পারবেন না। এটা সাময়িক একটা প্রক্রিয়া। যুগ যুগ ধরে কুকুর বাংলাদেশে নিধন হয়েছে, পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে কুকুর নিধন হয়েছে। কিন্তু কুকুর বিলুপ্ত হয়নি। এর বড় কারণ হচ্ছে অপসারণের জন্য কুকুরগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু কুকুর পালিয়ে যাবে। ওই কুকুরগুলো যদি পরের মৌসুমে বাচ্চা দিবে তখন শূণ্যস্থান পূরণ হয়ে যাবে।
[৭] এমিল বলেন, বর্তমানে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের একটি জাতীয় কর্মসূচির প্রকল্প চলেছে। জাতীয় নির্মূল কমিটির অধীনে সারাদেশের ৭০ ভাগের ওপরে কুকুরকে এক রাউন্ড জলাতঙ্ক নির্মূল টিকা দেওয়া হয়েছে। এবং সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ২০২২ সালের মধ্যে কুকুরের জলাতঙ্ক নির্মূল করতে হবে। এখন সিটি করপোরেশন যদি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় না করে কুকুরগুলোকে সরিয়ে দেয়, এরপরে যে কুকুরগুলো অবস্থান নেবে সেগুলো টিকা পাবে কি পাবে না, সেটা কিভাবে বুঝবেন। এখানে জনস্বাস্থ্যের একটা হুমকি থেকেই যাচ্ছে। জলাতঙ্ক সেখানে আবির্ভাব হতে পারে। দেখা যাচ্ছে একটি বিভাগ টিকা দিয়ে গেল আর আরেকটি বিভাগ কুকুর ফেলিয়ে দিচ্ছে।
[৮] তিনি বলেন, হাইকোর্টে রিট ছিল রিটের পরে নতুন করে আইন পাশ হয়েছে। সেখানে সাত নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে ‘নিধন বা অপসারণ করা যাবে না।’ মানুষের মানবিকা, নৈতিকতা কেন আইন দিয়ে বুঝতে হবে। আইনে অপসারণ যুক্ত করা হয়েছে, এটা বেআইনি।
আপনার মতামত লিখুন :