নজরুল কবীর: একজন আবু ওসমান চৌধুরী চেতনার দীপ্ত মশাল। মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্ট কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরীও চলে গেলেন। শুধু ৭১ নয়, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বাপর ঘটনা প্রবাহ, ৭ নভেম্বর কথিত সিপাহী-জনতার বিপ্লবসহ কতো বিষয়ে তার কাছ থেকে শুনেছি। পেশাগত কারণেই এসব শুনেছি এমনটা নয়। কেন্দ্রীয় খেলাগর আসরের ‘একাত্তরের রণাঙ্গণ : মুক্তিযোদ্ধার মুখে’ ধারাবাহিক সিরিজ বক্তৃতা আয়োজনের একজন সংগঠক হিসেবে তার সঙ্গে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা। যদিও পরিচয় হয়েছিলো শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক-দালার নির্মূল কমিটির আর্দোলনের সময়। ফলে চেতনাগত ঐক্যের সে মেলবন্ধন অটুট ছিলো তার অসুস্থতার আগ পর্যন্ত। তিনি চাঁদপুরের জেলা পরিষদের প্রশাসক নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকদিন টেলিফোনে বলেছিলেন তাজা ইলিশের ভাজা খাওয়াবেন। যাওয়া হয়নি। এ নিয়ে তার আক্ষেপও ছিলো। পেশোগত কারণে অনেক সহায়তা পেয়েছি তার কাছ থেকে। নব্বইয়ের আন্দোলনে শহীদ ডা. মিলন হত্যার তদন্তে সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে একটি কমিটি হয়েছিলো। কমিটির প্রধান ছিলেন জেনারেল আয়েনউদ্দীন। তখন আমি দেশ টিভির বিশেষ প্রতিনিধি। মিলনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধানী একটি রিপোর্ট করি। সে-ই রিপোর্টে প্রথম এবং শেষ বারের মতো জেনারেল আয়েনউদ্দীন বলেছিলেন কীভাবে এরশাদ পত্নী রওশন এরশাদ গুলি সরবরাহ করেছিলো সন্ত্রাসী অভি গ্রুপকে। আর এই জেনারেল আয়েনউদ্দীনকে রাজী করিয়েছিলেন আবু ওসমান চৌধুরী আমাকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য। আবু ওসমান চৌধুরীর মতো মানুষরা যুগে যুগে জন্মান না, শতাব্দীতে জন্মান। স্যালুট আপনাকে। আপনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে থাকবেন চেতনার দীপ্ত মশাল হয়ে। বিদায় হে বীরযোদ্ধো, বিদায়।
আপনার মতামত লিখুন :