শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:১৫ দুপুর
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:১৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুনমুন শারমিন শামস: বহু মানুষ আশেপাশে ঘুরছেন যারা নারীবাদের ‘ন’ টাও বিশ্বাস করেন না

মুনমুন শারমিন শামস: বাংলাদেশে নারীবাদ সবসময়ই শত্রুর সাথে পাঞ্জা লড়ে এগোচ্ছে। এদেশে নারীবাদীদের বন্ধু কম, শত্রু বেশি। এমনকি এক নারীবাদী আরেক নারীবাদীর বন্ধু, এটা যতোটা হয়, তার চেয়ে বেশি একজন আরেকজনকে দেখতে পারে না। এমনটাই দেখা যায়। সম্প্রতি মৌলভীবাজারে ধর্ষণের অভিযোগ, তাতে মারজিয়া প্রভা নামের একজন নারীবাদীর সম্পৃক্ততা, বাম রাজনীতি করা তরুণের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ- পুরো নারীবাদ আন্দোলনকে তীব্র সমালোচনার ভেতরে ফেলে দিয়েছে। এর সাথে আবার যুক্ত হয়েছে নাদিয়া ইসলামের ভিক্টিম ব্লেমিং এবং ভিক্টিমের নাম প্রকাশ করে দেবার মতো অপরাধ। নাদিয়াকে অনেকেই এদেশের নারীবাদী আন্দোলনের একজন মনে করতেন। নাদিয়া ব্যক্তিগত জীবনে কী, তা আমার জানা নেই। তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে যথেষ্টরকম জানতে বুঝতে ও চিনতে পেরে তাকে কখনও আমার এদেশের নারীবাদ আন্দোলনে সহযোদ্ধা মনে হয়নি। এবং সেটি অন্য আলাপ। কিন্তু যেহেতু তাকে বহু মানুষ এদেশের নারীবাদী ভেবে অ্যাপ্রেশিয়েট নয়, রীতিমত পূজা অর্চনা করতেন, তাই এই ঘটনায় তার এই নিন্দনীয় ভূমিকা এদেশের নারীবাদকেও এখন প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নারী অধিকার ও নারীবাদ এই দুটো জিনিস আমার কাছে কখনও আলাদা কিছু নয়। দুটো একে অপরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা এবং আমি মনে করি নারী অধিকার কর্মীদের নারীবাদ পাঠ আবশ্যক। তাই একজন নারী অধিকার কর্মী আমার কাছে নারীবাদী। একটি আন্দোলনে অনেকেই সম্পৃক্ত হয়। এদের মধ্যে কেউ থাকেন প্রকৃতকর্মী, ত্যাগী, পরিশ্রমী। আবার কেউ কেউ জুটে যান সুযোগের সন্ধানে, অসৎ উদ্দেশ্যে। নারীবাদী পরিচয় নিয়ে বহু মানুষ আশেপাশে ঘুরছেন, যারা আদৌও নারীবাদের ‘ন’ টাও বিশ্বাস করেন না, জীবনচর্চায় রাখেন না। কিন্তু তারা বড় বড় স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, বই লিখছেন, এনজিও করছেন- আরও বহু কিছু। আরেকটা দল আছে, তারা নারীবাদ সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। সামান্য জানে। সেটা সমস্যা না। কিন্তু তাদের চিন্তাভাবনা একটি জায়গায় থমকে আছে। সেই চিন্তার জট তারা খুলতে রাজি না। অথচ নারীবাদ একটি চলমান মুভমেন্ট যা প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে, নিজেকে বদলাচ্ছে, নুতুন নতুনন ভাবনা যুক্ত হচ্ছে এতে, পুরোনো ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়েও দিচ্ছে। কিন্তু এই দলটি একটি মান্ধাত্ত্বা চিন্তার জায়গায় আটকে আছে, সেসব চিন্তার জট নিয়ে তারা নারীবাদের নামে কিছু ফালতু তত্ত্ব ও ভাবনা প্রসব করে যাচ্ছেন, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং পুরো নারীবাদ আন্দোলনকে হাস্যকর করে তুলছে। আরেকটি দল আছে, যারা নারীবাদকে বোঝেন জানেন, কিন্তু নারীবাদের সুপার আপডেট পশ্চিমা ভার্সনটিকে তারা যতোটা না কাজের প্রয়োজেন, মানুষের প্রয়োজনে কিংবা এদেশের আপামর নারী সমাজের জন্য কাজে লাগাতে চান, তার চেয়ে অনেক বেশি তারা নারীবাদকে ব্যবহার করেন। তারা নিজের ব্যক্তিগত সুখ সুবিধার জন্য এটি গ্রহণ করেন। নারীবাদ অবশ্যই ব্যক্তিগত এবং প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবনাচরণ মিলেই একটি সমষ্ঠিগত নারীবাদী সমাজ গড়ে উঠবে। কিন্তু এখানে কিন্তুটা হলো যখন আপনি নারীবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বা নারীবাদী পরিচয় নিয়ে কাজ করছেন, তখন আপনাকে ব্যক্তিগত নয়, সমষ্ঠিগত স্বার্থের কথাটি আগে ভাবতে হবে। আর এই সমষ্ঠিগত স্বার্থ নিয়ে যখনই আপনি চিন্তা করতে শুরু করবেন, তখন ব্যক্তিগত ত্যাগ, তিতিক্ষা, মনোবল, সংযম, সততা, ধৈর্য, আত্মশুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব ও পড়ালেখা- এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামনে চলে আসবে। আপনাকে এই শব্দগুলোকে ধারণ করতে হবে। ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগ ও চর্চা করতে হবে। তখন আপনি আর একক কোন ব্যক্তি নন। কারণ আপনি সমষ্ঠির ভেতরে ঢুকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আপনার প্রতিটা কাজ, আপনার চিন্তা, দর্শন ও সততা এখানে সাংঘাতিক রকম ম্যাটার করে, যা আপনাকে সিরিয়াসলি নিতে হবে। একটি ব্যক্তিগত জীবনচর্চা সর্বোচ্চ আপডেটেড সর্বশেষ তরঙ্গের নারীবাদকে ধারণ করতে পারে। কিন্তু যদি আপনি বাংলাদেশে নারীবাদকে এগিয়ে নিতে চান, মানে আপনি যখন নেতা বা আপনি যখন গাড়িটি চালাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশের ভাঙা রাস্তা, খানাখন্দের কথা আপনাকে ভাবতে হবে। উষ্ণ আবহাওয়ার কথা মাথায় রাখতে হবে। সব শ্রেণির মানুষের অবস্থা ও পরিস্থিতি জানতে হবে। আপনার নিজের জীবনও যতোটা সম্ভব হয়। সে ভাবে যাপন করতে হবে। কারণ আপনি নেতা, আপনি ড্রাইভার। আপনি সাধারণ নন আর। আপনি পথ দেখাচ্ছেন। আপনি সমষ্ঠির ভেতরে ঢুকে গেছেন। আপনার একান্ত কিছু বিষয় ছাড়া ব্যক্তিগত জীবনাচরণ এখানে খুব কৌশলে, খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে, খুব সততা ও সৌন্দর্য্যের সাথে বেছে নিতে হবে। আপনি এখানে এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে, খুব বেশি এড়িয়ে যেতে পারবেন না। কারণ নারীবাদও জীবন দর্শন। আপনি যখন নেতৃত্বে, তখন আপনি সমাজ বাস্তবতায় ১৮০ ডিগ্রি উল্টো কোনো কাজ করতে পারেন না, যা আপনি পুরো সমাজের সব স্তরের মেয়েকে এই মুহূর্তেই করতে বলতে পারছেন না। আবার আপনি এমন কিছুই করতে পারেন না, যা সব যুগে সব সময়ে সব অবস্থায় সব পরিবেশেই নিন্দিত, অস্বাস্থ্যকর ও গর্হিত। নারীবাদ অস্বাস্থ্যকর জীবনচর্চার কথা বলে না, সমর্থন করে না। বাংলাদেশে নারীবাদ চর্চায় সিরিয়াসনেসের অভাব রয়েছে। একতার অভাব আছে। ভালোবাসার অভাব আছে। নারীবাদীরা একে অপরকে ভালবাসেন না। অথচ ভালবাসার শক্তির চেয়ে বড় শক্তি আর কিছুই হতে পারে না। তাই তারা সহযোদ্ধাও হতে পারেন না। যারা বর্তমানে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার কারণে নারীবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, তাদের বলবো, কাজ হচ্ছে বলেই ঘটন অঘটন সবই ঘটছে। আরও ঘটবে। এভাবে রক্তাত্ত হতে হতেই নারীবাদ একটি পথ পাবে, যে পথ সুন্দরের দিকে যায়। যে পথ মুক্তির দিকে যায়। নারীবাদ কোনোদিন মিথ্যা হবে না। সৎ সুন্দর নারীবাদী কর্মীরাও এগিয়ে যাবেন দৃঢ় পায়ে। একদিন হয়তো সিস্টারহুডও প্রতিষ্ঠা পারে। ব্যক্তিগত রেশারেশি, ঘৃণা ও ভুল বোঝাবুঝিগুলো মুছে যাবে। শক্তি পাবে নারীবাদ। পিতৃতন্ত্রের অবসান হবে। মুক্তি আসবে নারীর, পুরুষের, সব লিঙ্গের। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়