ডেস্ক রিপোর্ট : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে লাশ চুরি ঠেকাতে কবরের পাশে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন মৃত ব্যক্তির স্বজন ও এলাকাবাসী। পাহারা দেয়ার জন্য মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে তাঁবু টানানো হয়েছে। পাহারা প্রদানকারীদের জন্য বসা ও শোয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে কাঠের তৈরি চৌকি। এই পাহারা তিন মাস পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন মৃত ব্যক্তির স্বজনরা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ফুলবাড়ী উপজেলার ঘোগারকুটি গ্রামে নদী পার হতে গিয়ে বজ্রপাতে কলেজছাত্র আরিফুল ইসলামের মৃত্যু হয়। আরিফুল কুড়িগ্রামের কুমরপুর কদমেরতল গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউপির ঘোগারকুটি গ্রামের নানা আজগার আলীর বাড়িতে থেকে লেখা পড়া করতেন আরিফুল।
ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি’ পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। আরিফুলের মরদেহ উদ্ধার করে তাকে দাফন করা হয় তার নানার বাড়ির সঙ্গে অরিফুলের মায়ের কেনা জমিতে। বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির লাশ কবিরাজী শাস্ত্রে অনেক মূল্যবান। তাই লাশটি চুরি হতে পারে এই আশঙ্কায় অরিফুলের নানা আজগার আলী, মামা হাফিজুর রহমান, আরিফুলের ছোটভাই আশিকুর রহমান ও পরিবারের নারী সদস্যসহ এলাকার হিতাকাঙ্খীরা রাত জেগে কবর পাহারা দিচ্ছেন।
আরিফুলের মামি শহিদা বেগম বলেন, লোক মুখে শুনেছি বজ্রপাতের মারা যাওয়া মানুষের লাশ কবর থেকে চুরি হয়ে যায়। কবরটিকে দাফনের ৩ মাস পর্যন্ত পাহারা দিতে হয়। এ জন্য আমাদের ভাগনে আরিফুলের কবর রাতে পাহারা দিচ্ছি।
আরিফুলের নানা আজগার আলী এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে তিনি খেয়ে না খেয়ে আরিফুলের কবরের পাশে পাহারা চৌকিতে বসে কবরটির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছেন।
আরিফুলের মামা হাফিজুল ইসলাম বলেন, ভাগনে আরিফুল আমাদের অনেক আদরের ছিল। ছোট্র থেকে আরিফুলের মা রাহিলা বেগমসহ তার ৩ ছেলে মেয়েকে বাড়িতে রেখে দেখাশোনা করছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে আরিফুলের মা রাহিলা বেগম জর্ডানে রয়েছেন। আরিফুলের বাবা-মা পাশে না থাকলেও ৩ ভাইবোনকে আমরা দেখাশোনা করতাম। এরমধ্যে আরিফুল হঠাৎ বজ্রপাতে মারা যায়। বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির লাশ কবিরাজী শাস্ত্রে অনেক মূল্য বলে ভাগনের লাশটি চুরির আশঙ্কায় রাতে তার কবর পাহারা দিচ্ছি। সময় বেশি লাগলে আরিফুলের কবরের পাশে বাড়ি নিমার্ণ করবেন। কিন্তু ভাগনের লাশ বা লাশের কঙ্কাল চুরি হতে দেব না।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির কঙ্কালে কোনো মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে না। বজ্রপাতের সঙ্গে মৃত ব্যক্তির কঙ্কালের কোনো সম্পর্ক নেই। বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির কঙ্কালে মুল্যবান কিছু আছে যারা এটি ভাবছেন তারা ভুল করছেন। এটা সম্পূর্ণ একটি কুসংস্কার ছাড়া কিছুই না।
জানা যায়, কুড়িগ্রামের কুমরপুর কদমেরতল গ্রামের শহিদুল ইসলাম মৃত আরিফুল ইসলামের মা রাহিলা বেগমকে ডিভোর্স দেয়। তখন আরিফুল ইসলামসহ তার ৩ ভাই-বোন ছিল শিশু। ৩ শিশুকে নিয়ে রাহিলা বেগম চলে যান তার বাবার বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউপির ঘোগারকুটি গ্রামের নানা আজগার আলীর বাড়িতে। সেখানে রাহিলা বেগম রাজমিস্ত্রির কাজসহ শ্রমের কাজ করে শিশু ৩ সন্তানকে লালন পালন করেন। আরিফুল এসএসসি পাশ করার পর রাহিলা বেগম পাড়ি জমান জর্ডানে। জর্ডান থেকে বড় ছেলে আরিফুল ইসলামকে টাকা পাঠাতেন রাহিলা। সন্তানদের নিয়ে সুখে থাকতে জমি কেনার উদ্যোগ নেন।
ছেলে আরিফুল মামাদের সহযোগিতায় নানার বাড়ির পাশে সাড়ে ১৬ শতক জমি কেনেন। মা রাহিলা দেশে ফিরে এসে ওই জমিতে বাড়ি করবেন। এই অপেক্ষায় কষ্ট জয়ের আনন্দে ছিল আরিফুল। কিন্তু এই স্বপ্নের আনন্দ তার ভাগ্যে বেশিদিন থাকল না। পূরণ হলো না নিজ বাড়িতে থাকার সাধ। মঙ্গলবার বজ্রপাতে আরিফুল মারা যান। তাকে তার মায়ের কেনা জমিতেই দাফন করা হয়।
আরিফুলের মা রাহিলা জর্ডানে অবস্থান করায় আরিফুলের মরদেহ দেখতে পারেননি। আরিফুলের বাকি দুই ভাইবোন তার নানার বাড়িতেই আছেন। সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ
আপনার মতামত লিখুন :