রোজিনা ইসলাম: বাবা যেদিন ভোরে মারা যান তার আগের রাতের কথা বলছি। ভারতে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সংবাদ সংগ্রহ শেষে ঢাকায় ফিরে সোজা চলে গেলাম বাবার সাথে দেখা করতে। বাসায় ঢুকে দেখলাম বাড়ির সব জানালা-দরজা বন্ধ। ঘর অন্ধকার করে গায়ে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছেন বাবা। মায়ের কাছে জানতে চাইলাম সব বন্ধ করে রেখেছে কেনো, আর এই গরমে কম্বল দিয়ে শুয়ে আছেন কেনো বাবা।
মা বললেন তোর বাবা খুব ভয় পাচ্ছেন। মাকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল,বললো তোর বাবা জানালা খুলতে দিচ্ছেন না, বলছেন সেখানে নাকি তোর দাদি দাড়িয়ে আছেন।সে নাকি তোর বাবাকে বারবার ডাক দিচ্ছে তার সাথে যাওয়ার জন্য।তাকে নিয়েই যাবে বলছে। আমি হেসে বললাম মা কি যে বলোনা এগুলো এখনো কেউ বিশ্বাস করে? খোলো তো সব।
মা বললেন তোর বাবা সারাদিন কিছু খাননি, তুই ছিলি না তাই মন খারাপ ছিলো।আমি বাবাকে ফল কেটে জোর করে মুখে তুলে খাইয়ে দিলাম। হুমকি দিলাম যদি না খায় তাহলে আমি কাল আসবো না। বাবা ভয়ে সব ফল খেয়ে ফেললো। একসাথে সবাই খাওয়া-দাওয়া করে বাবাকে শুইয়ে দিলাম। আমি বাসায় ফেরার সময় আমার হাত ধরে বললেন, 'আমি বোধহয় আর বাচবো না রে,তোর দাদী ডাকছেন'। আমি আবারও হাসলাম। বললাম কী যে বলো? কাল দেখা হবে।
পরদিন ভোরবেলায় বাসাবো থেকে ফোনের পর ফোন। বাবা যে আমাকে বিদায় দিয়ে শুয়েছেন আর উঠছেন না। ঘুমের মধ্যেই চলে গেছেন বাবা।মায়ের হাতটা ধরে ছিলো তখনও।একটা বিষয় তখন মাথায় ঘুরছিলো।আসলে সত্যেই কী বাবা আমাদের দাদিকে দেখেছিলেন? তিনি চলে যাচছেন বুঝতে পেরেছিলেন।না হলে এমন করে বললেল কীভাবে? তার মানে কি মৃত্যুর আগে আসলেই প্রয়াত মা-বাবা-আপন বা পরিচিতজনদের দেখতে পায়। জানিনা, এই প্রথম বিশ্বাস হলো। আশেপাশে অনেক আপন মানুষ,স্বজন, মুরুব্বীরা অসুস্থ হওয়ায় আজ বারবার বাবার কথা মনে পড়ছে।মনে পড়ছে দাদির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকার কথা।
আমার বাবার জন্য সকলে দোয়া করবেন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :