কামরুল হাসান মামুন: শুনছি খুব শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। তবে খোলার আগে আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি, আমাদের ছাত্রদের আবাসিক পরিস্থিতি, আমাদের ক্লাস রুমের পরিস্থিতি ইত্যাদি অনেক প্যারামিটার আছে যা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেবল পয়েন্ট স্কোর বা বাহবা কুড়ানোর জন্য যেন না হয়।
সবচেয়ে বড় যেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে সেটি হলো হয়তোবা করোনা পরিস্থিতি কখনোই একবারে চলে যাবে না। অর্থাৎ আমাদেরকে হয়ত করোনাকে নিয়েই জীবন যাপন করতে শিখতে হবে। এর অর্থ হলো আমাদের চিন্তাচেতনা ও কাজকর্মের মাঝে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। আগের মত আর চলা যাবে না। তাছাড়া আমাদের আগের চলাটাও ভালো ছিল না। এইবার এই সুযোগে একটা ভালো পরিবর্তন শুরু করা যেতে পারে।
এই মুহূর্তে আমাদের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার আগে চারজনের রুমে যে ৮-১০ বা গণরুমে যে ৩০-৪০ জন থাকে সেগুলো চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। এটি কেবল তখনই সম্ভব যদি ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবাসিক সুবিধা বাড়াতে পারি। কিভাবে বাড়াতে পারি? আমার কাছে একটি সমাধান আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মূলত ছাত্রছাত্রীদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মূলত ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হলই থাকার কথা। কিন্তু ৩০-৪০ বছর যাবৎ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক সুযোগের দিকে নজর বেশি দিয়েছি যা কখনোই কাম্য ছিল না। ছাত্রদের বস্তিসম আবাসিক ব্যবস্থায় রেখে আমরা শিক্ষকরা কিভাবে শিক্ষকদের জন্য বিশাল বিশাল অট্টালিকা বানাতে শুরু করলাম? আর আমরা কিভাবে আরামে আয়েশে ঘুমাই? শিক্ষকরা চাইলেই অতি সহজে ভাড়া বাসায় থাকতে পারে এবং এই জন্য শিক্ষকরা বাসা ভাড়াও পায়। কিন্তু ছাত্ররা চাইলেই ক্যাম্পাসের বাহিরে সহজে থাকতে পারে না। পৃথিবীর কোথায় ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের জন্য এত আবাসিক ভবন? তাই শিক্ষকদের অনেক আবাসিক ভবন ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছেড়ে দিলে কিছুটা হলেও সমাধান হবে।
তাছাড়া আমাদের ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিবাবকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। সবাইকেই কেন ক্যাম্পাসে থাকতে হবে? যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের উচিত ক্যাম্পাসের বাহিরে কিছু ছাত্র একত্রে কোথাও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারে। এই ব্যাপারে প্রশাসনও সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে প্রথমবর্ষের সকল ছাত্রদের আবাসিক সুবিধা দিন। তারপর দ্বিতীয়।তৃতীয় বর্ষ থেকে অনেকেই ক্যাম্পাসের বাহিরে চলে যাওয়ার একটি নিয়ম তৈরী করতে হবে। বিশ্বের সকল দেশেই তা করা হয়।
তাই কেবল মাত্র আবাসিক শিক্ষক ও প্রভোস্ট ব্যতীত ক্যাম্পাসের বাকি সকল বাসা ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছেড়ে দিলে সমস্যার একটি সমাধানের দিকে যাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক ব্যবস্থার একটি সুষ্ঠূ সমাধান না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সহজে খোলা ঠিক হবে না। মনে রাখতে হবে "extra ordinary situation demands extra ordinary measure too! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :