শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ মা হিসেবে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়ে দেশের ইতিহাসে নাম লেখালেন অভিনেত্রী বাঁধন ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট, ২০২০, ০৯:৩০ সকাল
আপডেট : ৩১ আগস্ট, ২০২০, ০৯:৩০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আবেদা সুলতানা: ব্যক্তিগত ডায়েরি, প্যান্ডামিককালের নতুন অস্থিরতা

আবেদা সুলতানা: (১) তিনদিন যাবৎ এলোমেলো আছি। যতই বলি করোনা থেকে সাবধান হবো কিন্তু ভয় করবো না। কিন্তু মানসিকভাবে ভীত হয়ে, ভেঙে পড়বো না, তা বোধ হয় আর সম্ভব হচ্ছে না। নিজের কথাই বলে ফেললাম, আমার মতো সাধারণ মানুষের জন্য অসাধারণ এই উপেক্ষার কাজটি কিছুতেই করা সম্ভব নয়।

গত সপ্তাহে একেবারে নিজের মানুষদের পরিবারে কভিড-১৯ পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে। এইসব সনাক্তকৃতদের প্রায় সকলের পরিবারে একজন বাদে সবাই পঞ্চাষোর্ধ। এবং নানারকম নাগরিক রোগে ধরাশায়ী। বলে রাখা ভালো এঁরা কভিড-১৯ এর ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। এরপরও শেষ রক্ষা হলো না।

সান্ত্বনাদাতারা বলবেন কভিড-১৯ এখন অতটা ভয়ংকর নয়, নিয়ম মেনে ঔষধ সেবন করলে করোনা জয় করা যায়। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কমবেশি রোজ পঞ্চাশ জন তো মারাও যাচ্ছে।

সে কথা তো ভুলতে পারছি না।

করোনা গৃহাভ্যন্তরের চিকিৎসা পর্যন্ত থাকলে ঠিক আছে, যদি হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়? সর্বগ্রাসী বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে জান নিয়ে ফিরে আসা যেমন ভাগ্যের ব্যাপার! তেমনি সঞ্চিত অর্থ, সম্পদ রক্ষা করা আরও কঠিন ব্যাপার হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতির শিকার অনেকেই ধার দেনায় জড়িয়ে পড়ছেন, নয় তো সাহায্য সহযোগিতার জন্য হাত বাড়াচ্ছেন।

এই পাঁচ মাস ব্যাপি করোনাকাল যে আরও বিস্তৃত হবে তা বলার জন্য বিশ্বের দিকে দৃষ্টি দিলেই চলে। ইতোমধ্যেই ফ্রান্স, ইতালিতে প্রকোপ বেড়েছে। মৃত্যু সংখ্যা কমলেও আক্রান্তের হার অনেক বেশি। রীতিমতো ভায়াবহ.....

আজ সম্মানিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, আক্রান্তের সংখ্যা ৩০% বেড়েছে।
তাও ভয় পাবো না?

(২)

সরকারি নির্দেশ মতো নিয়মিত কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছি। কলেজের ভিতরে পাঠ দান ছাড়া আর সবকিছুই অল্পবিস্তর চলছে। কলেজ আমার ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে। আমার হার্টের দামামা বাজে। মন নেচে চলে মন ময়ুরী হয়ে।

বিগত কয়দিন ধরে অন্যদের মতো আমি বেশ সাহসী হয়ে উঠেছিলাম! শিমুল (আমার সাহসের কথা শুনে অত্যন্ত কষ্ট পেলো,রাগও হলো ) সাবধান করলো বারবার আর যেন সাহসী না হই ।

কলেজে চা পান করেছি কয় দিন।
দুই দিন ধরে ঘর থেকে চা বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
এ নিয়ে হাসি মজা হতে পারে, কিন্তু বিকল্প তো পাচ্ছি না।

(৩)

আমার প্রিয় পোশাক শাড়ি এ কথা বহুবার বহু জায়গায় নানা প্রসঙ্গে বলেছি। প্যান্ডামিককালে কর্মক্ষেত্রে সালোয়ার কামিজ পরেই যাই। এতে বালাই দূর করতে (ধোয়া-কাঁচা) সহজ হয়! কিন্তু এই পোশাকে চাকরির মেজাজ পাই না। আমি সারা জীবনে দুইবার কলেজে সালোয়ার কামিজ পরেছি। একবার বিভাগের অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ার্ধে (প্রভাষক), আর একবার জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময় রোজার ছুটিতে (ক্যাম্পাস বন্ধ)।

এ ছাড়া রোদ বৃষ্টি ঝড় তান্ডব হরতাল কোন কিছুতেই আমার পোশাক বদল হয়নি। সেই আমি এই অতিমারীতে কি না সালোয়ার কামিজকে ভরসা করেছি। তো স্বাভাবিকভাবেই আলমিরায় অলস পড়ে থাকা শাড়িগুলো আমাকে ভেঙচি কাটছে। কখনও অভিশাপ দিচ্ছে।

এই তাচ্ছিল্য ভাবা যায়!

এমনিতেই সময় কমে আসছে, সামনেই অবসর।
আমার প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে প্রিয় শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত!
এই শূন্যতা নিয়েই কী শেষ হবে কর্মজীবন?
আমি বলতে পারবোনা বর্ণাঢ্য কর্মজীবন পার করলাম!
হয়তো একটা বড় ব্যথা নিয়েই শেষ হবে কর্মজীবন। শেষ ভালো যার সব ভাল তার, কথাটি আমার জন্য কাজে লাগাতে পারলাম না।

আমার চাকরির প্রথম আর শেষ, এই দুটো থেকেই কষ্ট জমা হলো শুধু! বাকি জীবন এই থাকবে সঞ্চিত!

(৪)

হায় রে করোনা কাল!
কত কিছু শিখলাম, কত কিছু শিখালে হে করোনা!
তুমি নাকি নোবেল!
আচ্ছা কাকে বলে নোবেল?

তোমার স্পর্শের সন্দেহে কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন!
নেগেটিভ, পজিটিভ, এন্টিবডি!
শ্বাসকষ্ট, প্রাণায়াম, শারীরিক কষ্ট, মানসিক কষ্ট।
মাস্ক পরা,ঘনঘন হাত ধোয়া!
ভিটামিন-এ, ভিটামিন- ডি, ভিটামিন সি।
গায়ে রোদ লাগানো, এসির বাতাস বন্ধ করা!
ইত্যাদি ইত্যাদি!
সাত সতের!

(৫)

আজ কলেজে গিয়েছিলাম প্রতিদিনের মতই।
শাড়ি পরে ফেললাম সাহস করে!
আরও দশ বছর ধুম সে শাড়ি পরতে পারবো ভেবেছিলাম। এরপর ৭০ থেকে ৮০বৎসর পর্যন্ত টপস ট্রাউজার পরবো ভেবে রেখেছি।
সবার সাথে আমার নিজের আরামের জন্য!
বার হাতের শাড়ি কে জড়িয়ে দিবে?
ইদানিং শাড়ি কম পরা হচ্ছে বলে, শাড়ির ওজন মনে হচ্ছে বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝে অস্থির লাগে শাড়ির ওজন আর নিজের ভার বহনের অক্ষমতায়।

(৬)

শাড়ি, বয়স, পারঙ্গমতা সবটাই পারষ্পরিক অবিচ্ছিন্নতায় মিশে ছিল এতো দিন! সামনের শেষ দিনগুলো (আশি পরবর্তী কালের কথা বলছি যদি ছাড় দেয় করোনা) শাড়ি পরা যাবে না, মানে পরা সম্ভব হবে না সমর্থহীন শরীর আর আসপাশের সদস্যদের এই নিয়ে টানাপোড়েন থাকবে, থাকতেই হবে!
শাড়ি পরা কিন্তু সহজ কিছু নয়!
এতো শিল্পিত ভাবে শাড়ি (বার হাত কাপড় পেঁচানো) পরার বিষয়টি যাঁদের মাথা থেকে এসেছিল তাঁদের জন্য সাধুবাদ!

তবে শাড়ি জিতে যেতো যদি একটি রাজকন্যা থাকতো আমার! ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়