লীনা পারভিন: ‘নারীবাদী’ একটা দামি ট্যাগ হিসেবে বাজারে উঠছিলো। পরিষ্কার একটা সিন্ডিকেটের খপ্পড়ে পড়ে আজ ‘নারীবাদ’ করোনার মতো ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচির মতো রাস্তা খুঁজতেছে। সেই সিন্ডিকেট নির্ধারণ করতো কে সহি আর কে অসহি নারীবাদী। সেই তালিকায় ভেজালতো ঢুকবেই। কারণ কেউই নারীবাদ বুঝে নারীবাদী হয়নি। হইছে সার্টিফিকেট দখল করে। ব্যস। একবার সার্টিফিকেট আদায় করতে পারলেই কেল্লাফতে। পার্টি সার্টি আর জমজমাট সামাজিক অবস্থান। ফেসবুকে এর তার গোষ্ঠী উদ্ধার। সিন্ডিকেটের কথা যেদিন থেকে বলা শুরু করলাম সেদিন থেকে আমি হয়ে গেলাম গণশত্রু যদিও আমি নিজেকে কোনোদিন নারীবাদী মনে করিনি বা করবো না। কারণ আমার লড়াই একান্তই আমার। তাছাড়া আমি সেইসব সিন্ডিকেটধারীদের আইডেন্টিফাই করতে পারছিলাম সঠিক উপায়ে সঠিক সময়ে এবং আমি নিজের স্বতন্ত্র অবস্থানকে ধরে রাখায় বিশ্বাসী মানুষ। এতো বছরের নারীমুক্তি আন্দোলনের ফসল ভোগ করে কিছু ফ্যাশনী মানুষ বিরাট বিরাট ঝান্ডাধারী হয়ে সবাইকে ছবক দেওয়া শুরু করলো আর তাদেরকে প্যাট্রোনাইজ করলো কিছু প্রতিষ্ঠিত আশাবাদী মানুষ। সাবাশী দিতে দিতে তাদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গেলো যে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করলো।
বিষয়টা দাঁড়ালো তারা যাদের সমর্থন করবে তারাই সঠিক আর যারা তাদের লাইনে পা না দেবে তারা সব পুরুষতন্ত্রের বাহক বা প্রতিনিধি। এই যে ট্যাগের রাজনীতি এর ক্ষতিকর প্রভাব আসতোই এবং সেটি আসাও শুরু করেছে নিরবে না সরবেই। দুদিন পরপর নিজেদের মধ্যে ক্যাচাল, ঝগড়া, ব্যক্তি আক্রমন। ফলাফল ভাগাভাগি। একসময় কাউকে ‘পীর’ বানিয়ে তোয়াজ আবার সেই পীরের সাথে কিছু না মিলায় তেড়ে গিয়ে গালিগালাজ। আখেড়ে ক্ষতিটা হচ্ছে সবার। সমাজের। গোটা নারীসমাজের জন্য এ ক্ষতি অপূরণীয়। একজন নারী যিনি বাস করেন কুড়িগ্রামে কিন্তু লড়াই করে যাচ্ছিলো নিজের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার তিনি কিন্তু করছিলেন নিজের মতো করেই। আপনাদের শহুরে এইসব কর্মকাণ্ডের কারণে সেসব সহজ সরল লড়াকু নারীদের এগিয়ে যাওয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিচ্ছে। নানারকম বাধাবিপত্তির চক্রে পড়ে থেমে যাচ্ছে তাদের এগিয়ে যাবার চাকাগুলো। নারীমুক্তির আন্দোলন এতো সহজ নয়। দুই-চার লাইন ফেসবুকে লিখেই যদি কেউ ‘নারীবাদী’ হয়ে যেতো তাহলে এতোদিনে সমাজে মৌলবাদের আস্ফালন কমে যেতো অনেক। আফসোস সেটি কমার বদলে বেড়েই যাচ্ছে। জয় হোক সকল নারীর। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :