ইমরুল শাহেদ : ঢাকার চলচ্চিত্রের আলোচিত ছবিগুলোর একটি হলো আলোর মিছিল। মুক্তিযুদ্ধোত্তর দেশের অস্থির পরিস্থিতি - অনিয়ম, কালোবাজারি, সমাজের একটি শ্রেণীর রাতারাতি ধনী হওয়ার আকাংখা থেকে সৃষ্ট নানা সামাজিক জটিলতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মনে প্রবহমান হতাশাকে পটভূমিকায় রেখে এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে।
কিন্তু কিভাবে নির্মিত হলো এই ছবিটি। নবীন-প্রবীণদের আড্ডায় বসলে সামনে আসে চলচ্চিত্রের সোনালি অতীতের অনেক চমকপ্রদ ঘটনা। আলোর মিছিল ছবিটি নির্মাণের নেপথ্যেও রয়েছে এমনই একটি ঘটনা। ছবিটি লিখেছেন খ্যাতিমান চিত্রনাট্যকার উদয়ন চৌধুরী এবং নির্মাণ করেছেন পরিচালক নারায়ন ঘোষ মিতা। সমকালীন পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখে মর্মাহত হয়ে উদয়ন চৌধুরী ছবিটির চিত্রনাট্য লিখে রেখে দিয়েছিলেন।
এমন একটা সময়ে ঢাকার চলচ্চিত্রের জনক ও পথপ্রদর্শক আবদুল জব্বার খান তার কাছে যান একটি গল্পের জন্য। তিনি নিজের কিছু আইডিয়া শেয়ার করেন উদয়ন চৌধুরীর সঙ্গে। কিন্তু উদয়ন চৌধুরী তাকে প্রস্তুত থাকা চিত্রনাট্যটি নিয়ে ছবি বানানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আবদুল জব্বার খা তার কথা শুনতে নারাজ। শেষ পর্যন্ত আবদুল জব্বার খাকে অনেকটা অপমানিত হয়েই উদয়ন চৌধুরীর বাসা থেকে বিদায় নিতে হয়।
এর ক’দিন পরই একটি লিখিত চিত্রনাট্য সংশোধনীর জন্য তার কাছে নিয়ে আসেন পরিচালক নারায়ন ঘোষ মিতা। একইভাবে উদয়ন চৌধুরী তার কাছে প্রস্তুত চিত্রনাট্যটি নিয়ে ছবি বানাতে বলেন মিতাকে। উদয়ন চৌধুরীর কথায় সম্মতি দিতেই তার সহকারী কাজী কামাল, যিনি পরে পরিচালক হয়েছেন, বইয়ের রেক থেকে চিত্রনাট্যটি নামিয়ে আনেন এবং পড়তে শুরু করেন।
পড়া যখন শেষ হয় তখন কাজী কামাল দেখতে পান উদয়ন চৌধুরী ও মিতা - দুজনেই কাঁদছেন। এই চিত্রনাট্য নিয়েই নির্মিত হলো আলোর মিছিল। ব্যবসা ক্ষেত্রে সেই সময়ে ছবিটি রেকর্ড সৃষ্টি করে। তবে নানা কারণেই ছবিটি এখনও আলোচিত। ববিতা উচ্চারিত সংলাপ - ‘যাসনে ছোট মামা’ এখনো দর্শকের মুখে মুখে ফিরে। এই ছবির ‘এই পৃথিবীর পরে, কত ফুল ফোটে আর ঝরে’ গানটি চিরসবুজ হয়ে থাকবে শ্রোতাদের হৃদয়ে।
আপনার মতামত লিখুন :