ডেস্ক রিপোর্ট : বাঙালি আর ইলিশ দুই অবিচ্ছেদ্য নাম। আবার স্বাদে গন্ধে সেরা ইলিশ মানেই পদ্মার ইলিশ। এই ইলিশই যায় কলকাতার বাঙালিদের পাতে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রফতানি বন্ধ হওয়ায় তারা কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। এখন পান শুধু সাগরের ইলিশ। তবে বর্তমানে আবহাওয়া বিরূপ থাকায় সাগরে ইলিশ ধরাও প্রায় স্থগিত। ফলে কলকাতার বাজারে আসছে গুজরাটের ইলিশ! তবে স্বাদে গন্ধে পদ্মার ইলিশের ধারেকাছেও নেই গুজরাটের এই ইলিশ। ফলে বারবরই কম দামে বিক্রি হয় এটি।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আমদানি কম হওয়ায় বর্তমানে ইলিশের বেশ দাম। গুজরাটের ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ রুপি কেজি দরে। আবার বাংলাদেশের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ রুপি কেজি দরে।
কলকাতায় ইলিশ যায় মূলত কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ এলাকা থেকে। ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রেও যান ভারতীয় জেলেরা। কখনো কখনো তারা জলসীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশের সীমান্তেও ঢুকে পড়েন। মাঝে মধ্যেই ভারতীয় জেলে এখানে আটক হন।
কলকাতার ভোক্তারা বলছেন, এখন শহরে বিক্রি হওয়া ইলিশ আসলে গুজরাটের। নর্মদা নদীর ওই মাছ আসে এই রাজ্যে। কিন্তু বাংলার ইলিশের স্বাদের সঙ্গে এর তুলনা হয় না। কারণ নর্মদা নদীর পানি লবণাক্ত। তাই মাছের স্বাদ ততো ভালো নয়।
গুজরাটের ইলিশের প্রধান উৎস নর্মদা নদীর অভয়াশ্রয়। এই অভয়াশ্রয়টি ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর আয়তন ৬ হাজার ৩৪৬ বর্গকিলোমিটার। গুজরাটের অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণের ৩০ শতাংশই আসে এই অভয়াশ্রয় থেকে। কিন্তু নানা কারণে এটির বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইলিশসহ সব ধরনের মৎস্য আহরণেই ভাটা পড়েছে।
কলকাতার সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নর্মদা অভয়াশ্রয় থেকে ২০০৬-৭ সালে বার্ষিক মৎস্য আহরণ ছিল ১৫ হাজার ৮৮৯ টন, ২০১৪-১৫ সময়ে তা নেমে এসেছে মাত্র ১ হাজার ৬১৮ টনে। আর একই সময়ে ইলিশ আহরণ ৫ হাজার ১৮০ টন থেকে নেমে এসেছে মাত্র ৪১৯ টনে।
স্থানীয় জেলেরা বলছেন, নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণেই মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি সরকার লবণাক্ততা কমাতে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ৪ হাজার ৩৩৭ কোটি রুপির বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে। নর্মদায় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রবেশে বাধা দিতে ১ দশমিক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণও এ প্রকল্পের আওতাধীন। কিন্তু এতে ইলিশের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র : বণিক বার্তা
আপনার মতামত লিখুন :