রাশিদ রিয়াজ : মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ যখন করোনা ভাইরাসের মহামারির সঙ্গে লড়াই করছেন ঠিক তখনই দেশটিকে ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিয়েছে চীন। এক রিসোর্ট ব্যবসায়ীকে বলা হয়েছে, ঋণের একটি কিস্তি হলেও পরিশোধ করতে হবে ইব্রাহিম সলিহর দেশকে। ওই কিস্তির পরিমাণ ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা প্রায় ১৫৪ মিলিয়ন মালদ্বীপের স্থানীয় মুদ্রা রুফিয়ার সমান। আর মোট ঋণের পরিমাণ ১২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইয়ন
ঋণ নেওয়া মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাংসদ আব্দুল্লা ইয়ামিন ও তার পুত্র আহমেদ সিয়ামকে এ ঋণ পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তারা পরিশোধে ব্যর্থ হলে মালদ্বীপ সরকারকে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এও বলা হয়েছে যদি মালদ্বীপ সরকার এই ঋণ পরিশোধ করতে না চায় তাহলে এটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে। চীনের এই আচরণ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে মালদ্বীপসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
এর আগে চীনের এক্সিম ব্যাংক মালদ্বীপকে ১০ মিলিয়ন ডলার ঋণ ফেরত দিতে বলে। এ ঋণের সভরেইন গ্যারান্টি দিয়েছে মালদ্বীপ সরকার অর্থাৎ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে মালদ্বীপ সরকার তা পরিশোধে বাধ্য থাকবে। তবে কোভিড ভাইরাসের কারণে মালদ্বীপের অর্থনীতির অন্যতম আয়ের উৎস পর্যটন খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধের জন্যে চীনের চাপকে ব্লাকমেইল বলে মনে করছেন অনেকে। ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে চীন এমন চাপ দিচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
ইয়নের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন চীনের পুতুল সরকার হিসেবে দেশ শাসন করতেন। অধিকাংশ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো চীনের অর্থায়নে তিনি বাস্তাবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যা করতে যেয়ে তিনি গণতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে আইনের শাসন বিসর্জন দিয়েছেন। মালদ্বীপে বিমান বন্দর নির্মাণের জন্যে ৮৩০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় চীন। এই বিমান বন্দরের সঙ্গে সংযোগের জন্যে ২ কিলোমিটারের সেতু নির্মাণ করে চীন। ২৫তলা সুউচ্চ এ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ও হাসপাতাল নির্মাণ করে চীন। ২০১৮ সালে বেইজিং থেকে মালদ্বীপে ৩ লাখ ৬ হাজার পর্যটক আসে।
মালদ্বীপকে কৌশলগত গুরুত্ব দিয়েই বেইজিং এধরনের অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ দেয়। মধ্যপ্রাচ্যে চীনের সমুদ্র যাত্রাপথে মালদ্বীপের অবস্থান। ২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট মালদ্বীপ সফরকালে ঘোষণা করেন দেশটি সিল্করুটে জলপথে য্ক্তু হতে পারে। ২০১৮ সালে চীনা নৌবাহিনীর ৩টি জাহাজ মালদ্বীপে নোঙ্গর করে। চীনের কাছে মালদ্বীপের মোট ঋণের পরিমান ১.৩ বিলিয়ন ডলার। যা মালদ্বীপের জিডিপি’র এক চতুর্থাংশ।
অন্যদিকে ভারত মালদ্বীপকে ৫.৬ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে যা অনুদানকৃত প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করা হবে। একই সঙ্গে নগদ অর্থ সহায়তা হিসেবে আরো ১৬.২০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে ভারত।
আপনার মতামত লিখুন :