ফজলুল হক: [২] গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মাকে শ^াসরোধে হত্যার ঘটনাটি মোবাইল ফোনে শিশু মেয়েকে জানিয়ে বাবাও ট্রেনলাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। ওই শিশুরটির চোখের পানিই যেন ফুটে উঠেছে তার সারা জীবনের হতাশার চিত্র। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চান্দরা মন্ডলপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সকালে।
[৩] নিহতরা হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার চান্দরা মন্ডলপাড়া এলাকার সুনাম উদ্দিনের ছেলে দুলাল উদ্দিন (৪০) ও দুলালের ২য় স্ত্রী আয়শা বেগম (২৫)।
[৪] এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুলাল উদ্দিন একজন উগ্র-মেজাজের লোক। তিনি তার প্রথম স্ত্রী রেহেনা বেগম ও তাদের দুই সন্তান দুলন আক্তার শিফা ও রায়হান উদ্দিন রেখে দিনাজপুরের মেয়ে আয়শা বেগমকে ২য় বিয়ে করেন। তাদের ২য় ঘরেও দুই মেয়ে রয়েছে। তারা দিনাজপুরে তাদের নানাবাড়ি থাকে। এরপর তিনি আবার ৩য় বিয়েতে আবদ্ধ হন। এদের মধ্যে ৩য় স্ত্রীর নাম জানা যায়নি।
[৫] তিনি স্বামীর সংসার ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। ১ম স্ত্রী রেহেনা বেগমও পারিবারিক কলহের জেরে দুই ছেলে-মেয়ে রেখে বছর সাতেক আগে ফাঁসিতে ঝুলে আত্নহত্যা করেন। এরপর তাদের ছেলে রায়হান ও মেয়ে শিফা দাদীর সঙ্গে উপজেলার চান্দরা মন্ডলপাড়া এলাকায় তাদের বাড়িতে থাকে। দুলাল তার ২য় স্ত্রী আয়শা বেগমের নিয়ে পাশেই তাদের অন্য একটি বাড়িতে থাকেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলেহ চলে আসছিল।
[৬] প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই পারিবারিক কলেহের জেরে বৃহস্পতিবার রাঁতের কোনো এক সময় দুলাল তার ২য় স্ত্রী আয়শাকে শ^াসরোধে হত্যা করে। সকালে তার মেয়ের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় দুলাল। সকাল ৯টার দিকে তিনি তার ১৩ বছরের শিশু মেয়ে শিফাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় তার মাকে হত্যা করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিস মা বলেই অজ্ঞাত একটি ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর তার মেয়ে শিফা একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি আর ফোন ধরেনি।
[৭] কিছুক্ষণ পর অপর এক ব্যক্তি তার মোবাইল থেকে ফোন দিয়ে জানায়, মোবাইলের মালিক ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় লোকজন নিহতের লাশ উদ্ধার করে উপজেলার কালামপুর এলাকায় তার অপর বাড়িতে যায়। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ চান্দরা মন্ডলপাড়া এলাকায় ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত আয়শা বেগমের লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এদিকে উপজেলার কালামপুর খাজারডেক এলাকায় অজ্ঞাত একটি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে দুলাল উদ্দিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে।
[৮] রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নান জানান, খবর পেয়ে নিহতের উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
[৯] কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, দুলাল একটু উগ্র মেজাজের ছিল। তার তিনটি স্ত্রী আছে। রাঁতের কোনো এক সময় তিনি তার ২য় স্ত্রী আয়শাকে হত্যার পর নিজে ট্রেন লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। সম্পাদনা: সাদেক আলী
আপনার মতামত লিখুন :